বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পেলেন বরিশালের প্রবীণ সাংবাদিক মানবেন্দ্র বটব্যাল

মুক্তবুলি প্রতিবেদক ।।

বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন বরিশালের সিনিয়র সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মানবেন্দ্র বটব্যাল। তৃনমূল সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদান রাখায় তাকে এই অ্যাওয়ার্ড দেয় বসুন্ধরা গ্রুপ।

৩০ মে ২০২২ সন্ধ্যায় ঢাকার বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক সন্মেলন কেন্দ্রে এই অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বসুন্ধরা গ্রুপ। অনুষ্ঠানে দেশের ৬৪ জেলার ৬৪ জন সিনিয়র সাংবাদিক ছাড়াও ১১ জন অনুসন্ধানী সাংবাদিককে বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে বরিশালের সর্বজন শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক সিনিয়র আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী মানবেন্দ্র বটব্যালকে সন্মাননাপত্র, ক্রেস্ট এবং এক লাখ টাকা প্রদান ছাড়াও উত্তরীয় পরিয়ে দেন অতিথিরা।

প্রবীন সাংবাদিক মানবেন্দ্র বটব্যালের জন্ম ১৯৪৫ সালের ১৫ জুন বরিশাল নগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কলেজ রো এলাকায়। তার বাবা প্রয়াত সুধাংশু বিকাশ বটব্যাল ছিলেন স্বাস্থ্য বিভাগের থানা পর্যায়ের কর্মকর্তা। মা প্রয়াত সাধনা বটব্যাল ছিলেন গৃহীনি। বিএ পাশ করার পর এল.এল.বি সম্পন্ন করেন মানবেন্দ্র। ছাত্র জীবনে ষাটের দশকে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী এবং পরে ছাত্র ইউনিয়ন দ্বিধাবিভক্ত হলে বেগম মতিয়া চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ছাত্র ইউনিয়নের বরিশাল জেলা শাখার সম্পাদক ও সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশ নেয়ায় ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কারাবরণ করেন তিনি। ছাত্রজীবন শেষে তিনি অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন এবং জেলা ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সহ-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ওই সময়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। পরে ভারত গিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ নিয়ে গেরিলা ফ্রন্টের সদস্য হিসেবে অবিভক্ত যশোর ও খুুলনা অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধ করেন তিনি। তিনি সরকারি তালিকাভূক্ত একজন মুক্তিযোদ্ধা।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার প্রতিবাদে বরিশালে ন্যাপ-ছাত্র ইউনিয়নের সংগঠক কর্মীদের নিয়ে প্রতিবাদ মিছিলে নেতৃত্ব দেন তিনি। সেই অপরাধে আবার কারাবরণ করতে হয় তাকে। ১৯৬৯ সালে সাপ্তাহিক একতার বরিশাল প্রতিনিধি হিসেবে সংবাদপত্রে হাতেখড়ি মানবেন্দ্র বটব্যালের। ১৯৭০ সালে জাতীয় দৈনিক সংবাদের বরিশাল শহর প্রতিনিধি হন তিনি। এরপর দৈনিক সংবাদের বরিশাল সংবাদদাতা, নিজস্ব সংবাদদাতা, জেলা বার্তা পরিবেশক এবং সব শেষ একই কর্মস্থলে নিজস্ব বার্তা পরিবেশক পদে কর্মরত আছেন তিনি।

এছাড়াও তিনি পাকিস্তান আমলে নিউজ এজেন্সি এনা’র প্রথম বরিশাল প্রতিনিধি, দেশ স্বাধীনতার পর বিপিআই’র প্রতিনিধি, দৈনিক সমাজ এর বরিশাল প্রতিনিধি এবং বরিশাল থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক অধুনালুপ্ত লোকবাণী’র বার্তা সম্পাদক হিসাবে কাজ করেন। তিনি বরিশাল প্রেসক্লাবের দুই বারের সাবেক সম্পাদক এবং দুই বারের সাবেক সভাপতি। মুক্তিযুদ্ধ, সাংবাদিকতা এবং সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান সংবর্ধিত করে মানবেন্দ্র বটব্যালকে।

সাংবাদিকতার পাশাপাশি একজন প্রাজ্ঞ আইনজীবীও তিনি। ১৯৭৪ সাল বরিশাল বারে যোগদান করেন তিনি। দীর্ঘ এই সময়ে বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সম্পাদক এবং সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেন ১০ বছর। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এবং বরিশাল আইন মহাবিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র শিক্ষক। এর পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও পদচারনা রয়েছে তার। তিনি উদীচী বরিশাল এবং বরিশাল নাটক নামে আরেকটি সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বরিশালের ২৭টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের জোট সমন্বয় পরিষদেরও সভাপতি ছিলেন তিনি। এছাড়া বাংলাদেশ নাট্য ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে দুই বার সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ছিলেন। দুর্নীতি বিরোধী প্লাটফর্ম ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালেরও বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি ছিলেন তিনি।

বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড দেয়ায় বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন সিনিয়র সাংবাদিক মানবেন্দ্র বটব্যাল। এই প্রাপ্তি আগামী দিনে আরও কর্মস্পৃহা যোগাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তার প্রত্যাশা সাংবাদিকরা অপসাংবাদিকতাকে ঘৃণা করে দেশের মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখবে। তাহলেই মানুষের ন্যায্য অধিকারকে নিশ্চিত করার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বাস্তবায়ন করা সম্ভব। সাংবাদিকরা সকল প্রকারের লোভ ও সুবিধাবাদকে পরিহার করে ধর্মান্ধতা, জঙ্গীবাদ ও হতাশার বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে যথাযথ ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি আশা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *