ড. সাইয়েদ মুজতবা আহমাদ খান ।।
বাংলাদেশের অন্যতম পূণ্যভূমি সিলেটের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র ভ্রমণের একটা প্রবল ইচ্ছে আমার অনেক দিনের। সপরিবারে দুই মহান পূণ্যবানের কবর জিয়ারতের তীব্র একটা আকর্ষণও বহুদিনের। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজীবনে একবার গিয়েছিলাম সিলেটে। শুধুমাত্র মহান দুই তাপস সম্রাটের কবর জিয়ারত করবার উদ্দেশ্যে। পরে কর্মময় জীবনে আর যাওয়ার সুযোগ ঘটেনি। শুধু কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করবার নিয়ম ইসলামে না থাকায় কোথাও যাওয়ার চেষ্টা আর করিনি।
চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের ১৬ তারিখ থেকে ১৯ তারিখ পর্যন্ত সিলেটের বিভিন্ন পর্যটন ¯পট পরিদর্শন করলাম এবং মনকাড়া কিছু স্মৃতি আমাদের হৃদয় কন্দরে জমা হয়ে গেলো। মজার মজার সে স্মৃতিগুলো অনেকদিন আমাদের অন্তরগুলোকে আনন্দ রসে আপ্লুত রাখবে- এতে সন্দেহ নেই বিন্দুমাত্র।
কারণ এরপূর্বে আমরা আমাদের বাংলাদেশের মনকাড়া আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রগুলো সবিস্তারে পরিদর্শন করবার তেমন সুযোগ পাইনি- বিশেষ করে সপরিবারে পরিদর্শনের যে আলাদা এতো মজা এবং বিপুল আনন্দ তা পূর্বে পাওয়া যায়নি ।
আমার পরিবারের সকল সদস্য সদস্যা সমেত- লিচি ও সুমনের পরিবার পরিজন নিয়ে পর্যটন পর্যবেক্ষণের এ সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের সমীপে চিরকৃতজ্ঞ রইলাম। বিশেষ করে পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বার কয়েক বলেছেন: ‘তোমরা এ বিশ্ব চরাচর পরিভ্রমণ করো এবং বিশ্বের সত্য প্রত্যাখানকারীদের অথবা অনিষ্ট কারিদের কি পরিণতি হয়েছে – স্বচক্ষে সেসব প্রত্যক্ষ করো।’
আমার বড়ো ছেলে খায়রুল আনামের প্রবল ইচ্ছে এবং উদ্যোগ- আর ছোট ছেলে মেয়ে সাকলাইন এবং সানজিদা শেহরিন নোভা, ইমরাতুল জান্নাত, আম্মা ফারহানা, মা- জননী সাদিয়া আফরিন ডানার সর্বাত্মক সমর্থন ও সহযোগিতার কারণে আমরা পূণ্যভূমি সিলেটে গেলাম। রাজা গৌড় গোবিন্দের গৌরব ও দুর্দন্ড প্রতাপের নিদর্শন সমূহের ছিটেফোটা দেখলাম- যা এখন ইতিহাসের অংশ হয়ে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে । রাজা গৌড় গোবিন্দের এক সময় প্রবল প্রতিপত্তি এবং ক্ষমতার প্রচন্ড দাপট ছিল , ধরা কে তিনি সরাজ্ঞান করে অনেক কুকর্ম করেছিলেন। প্রজা সাধারণের সঙ্গে তার আচরণ ছিল বিতর্কিত ও আপত্তি জনক। তার ক্ষমতার দোর্দন্ড প্রতাপে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে-মানুষের জীবন ও জীবিকা কে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। সেই গৌড় গোবিন্দের গৌরব ও গরিমা কোথায় যে হারিয়ে গেলো- কোনো মানুষের সাধ্য নেই সেসব খুঁজে বের করা। সেই গৌড় গোবিন্দের কোনো উত্তরসূরীর আজ আর খোঁজ পাওয়া ও দুস্কর। কারণ সুদূর ইয়ামান থেকে আগত হযরত শাহাজালাল (র:) ও তাঁর সঙ্গী সাথী-আপন ভাগ্নে, হযরত শাহ পরাণ (র:) সহ প্রায় তিনশ ষাটজন পবিত্র আত্মার অধিকারী, পূণ্যবানঅশ্বারোহী রাজা গৌড় গোবিন্দ কে সম্মুখ সমরে পরাজিত করেন এবং সিলেটকে প্রচন্ড নৈরাজ্যের হাত হতে মুক্ত করতে সক্ষম হন। অমানবিকতা ও অরাজকতার লীলাক্ষেত্রকে পূন্যভূমিতে পরিণত করেন।
আমরা বরিশালের ভোলা হতে লঞ্চযোগে ঢাকার লালকুঠি এবং পরে মুগদায় আমার পুত্রা ফয়েজ মিয়ার বাসবভনে স্বল্পকালীন অবস্থান এবং দুপুরে ভুঁড়িভোজনের পরে রাতের ট্রেনে আরোহনের জন্য কমলাপুর রেল স্টেশনে গমন করি। সরাসরি সিলেটের উদ্দেশ্যে আমরা শিশু কিশোর নাফিসা ফাতিহা, নাশিতা, নওয়াজিস, নওরোজ ও নুজাইরা আরিশা সহ সর্বমোট পনেরো জনের এক কাফেলা সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছে যাই রাত সাড়ে চারটের মধ্যে। সেখান থেকে সিলেটের জেলরোডে অবস্থিত ‘ডালাস’ আবাসিক হোটেলে পৌঁছে যাই। মাত্র দেড়-দুই ঘন্টা বিশ্রামের পর -সিলেট শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ‘মেজবান বাড়ি’ রেস্টুরেন্টে সকালের নাস্তা সেরে ‘সাদা পাথর’ তথা ভোলাগঞ্জের উদ্দেশ্যে যাত্রা করি। প্রায় দেড় ঘন্টা একটানা মাইক্রোবাস চালিয়ে চালক আমাদেরকে ভোলাগঞ্জে পৌঁছে দেন। নির্দিষ্ট কাউন্টারে দাঁড়িয়ে টিকেট সংগ্রহ করে যন্ত্র চালিত ছৈযুক্ত নৌকা যোগে সাদা পাথর এলাকায় উপস্থিত হই । প্রচুর লোক সমাগমের মধ্যে প্রচন্ড রোদ উপেক্ষা করে আমার আপু নাফিসা ফাতিহা ও নওরোজ মিয়া সাদাপাথর এলাকায় ঘোড়ায় চড়ে অনেক্ষণ আনন্দ করেন।
পরে আমরা সবাই পাহাড়ী ঝর্ণার পানির প্রচন্ড স্রোতের মধ্যে নেমে বিপুল অনির্বচনীয় আনন্দে সকলেই পুলোকিত হয়ে উঠি। পাহাড়ী ঝর্ণার একদম স্বচ্ছ স্বল্প পানির স্রোতের ভেতরে পা ভিজিয়ে কেউবা গা ভিজিয়ে যে আনন্দ অনুভব করছিলাম তা ভাষাতীত ও বর্ণনাতীত। সে আনন্দ রসে আপ্লুত হচ্ছিলো দেশের বিভিন্ন জায়গা হতে আগত অনেক আবাল বৃদ্ধ বণিতা। দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। সে আনন্দ উচ্ছ্বাসে ভাগ বসাতে কারোরই যেন অনাগ্রহ ও কার্পণ্যতা নেই আদৌ। কারো মধ্যেই যেন অপারঙ্গময়তার লেশমাত্র চোখে পড়ে না। সবাই সর্বাত্মক সক্রিয়। তবে এরমধ্যে একমাত্র আমার বুবু আরিশা ব্যতিক্রম
একদম নিষ্ক্রিয়। অর্থাৎ গভীর ঘুমে সে আচ্ছন্ন। লোকজন অতি উৎসাহী শিশু কিশোরদের নিয়ে সুন্দর ও সুশৃংখলভাবে পানিতে পা ভেজাচ্ছে । নেচে নেচে আনন্দ উল্লাস প্রকাশ করছে ।
সমুদ্র সৈকতেও মানুষ সামুদ্রিক পানিতে পা-গা সবই ভিজায় কিন্তু ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর এলাকায় অতুলনীয় স্বচ্ছ সুন্দর ফক্ফকা পানির স্রোতের মধ্যে গোসল করা, হাত পা- শরীর ধোয়ার ভেতর যে অনাবিল আনন্দের প্রকাশ লক্ষ্য করলাম- সমুদ্রের লোনা পানির প্রচন্ড টেউয়ের মধ্যে তা হয় বলে মনেই হয়না । আমরা মোটামুটি দীর্ঘসময় ধরে স্বচ্চ ও টলটলে পানির স্রোতের মধ্যে কাটিয়ে ওপরে ওঠে এলাম । পুনরায় যন্ত্রচালিত ছৈযুক্ত নৌকা যোগে ভোলাগঞ্জের মূল স্পটে এসে দুপুরের খাবার গ্রহণ করলাম।
এর পরে গেলাম ‘রাতারগুল’ নামক বনজপর্যটন কেন্দ্রে- তাও আবার যন্ত্রচালিত নয় ছৈহীন ডিঙ্গি নৌকা যোগে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত স্রোতহীন একদম ঘোলাটে পানির হৃদে ঘুরে বিশাল বনজ স্পটে উঠলাম । নানা ধরনের গাছ গাছালীর মধ্যে ঘুরে ফিরে ছবি তুলে আবার সেই ছৈহীন ডিঙ্গি নৌকাযোগে তীরে এসে উঠলাম । এবং সিলেট নগরীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।
পরের দিন হোটেলের নিজস্ব ক্যাফেটেরিয়াতে সকালের নাস্তা সেরে আরেক পর্যটন কেন্দ্র জাফলং এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া গেলো । প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে একটানা মাইক্রো বাস চালিয়ে জাফলংএ যখন পৌঁছলাম। তখন সময় প্রায় বারোটার কাছাকাছি । সূর্য একেবারে মাথার ওপরে তীব্র তাপ ছড়াচ্ছে। পৌঁছাতে অনেকদূর হেটে উঁচু থেকে অনেক নীচে অবস্থিত জাফলং পর্যটন স্পট। পাহাড়ী স্বচ্ছ পানির স্রোতধারার কাছে পৌছঁতে পৌছঁতেই লেগে গেলো অনেক সময়। আঁকা বাঁকা সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে একেবারে পাহাড়ের পাদদেশে প্রবাহিত তীব্র স্রোতবাহী ক্যানেলের পানির স্বচ্ছতা দেখে আমরা বিস্মিত-বিমূঢ় । এমোনতরো স্বচ্চ বেশি পানির স্রোতবাহী ছোট নদী ইতোপূর্বে দেখেছি বলে মনেই হয়না।
রাব্বুল আলামীনের অপূর্ব সৃষ্টির এক শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হচ্ছে পাহাড় থেকে নেমে আসা অপূর্ব স্রোত ধারা- সত্যি এমোন চমৎকার স্বচ্ছ পানির স্রোতধারা মানুষকে তার সৃষ্টিকর্তার কথা স্মরণ করিয়ে দেয় বার বার। বার কয়েক হাত ভিজিয়ে দেখলাম – যেমন পরিস্কার স্বচ্ছ পরিচ্ছন্ন পানি, কাকের চোখের মতো টলটলে জলধারা -মন চায় আজলা ভরে পানি পান করি ।
পরে গেলাম খাসিয়া পল্লী অঞ্চলে চা বাগান ও জমিদার বাড়ি পরিদর্শনে। চা বাগান দেখে তেমন চমৎকৃত হওয়া গেলোনা- কারণ চা গাছে তখনো সবুজ কচি পাতার আগমন ঘটেনি । সবুজ পাতার সমারোহের স্বাক্ষাৎ পেলাম না । গাছগুলোকে কাঁচি দিয়ে ছেঁটে দেয়া হয়েছে মাত্র। কচি কচি তাজা সতেজ পাতার আগমন আরো পরে। চা বাগানের ভেতরে দু চারটা ছবি তুলে ফেরা গেলো । গেলাম ছোট ছোট চা মধুর দোকানে। প্রথমে পাহাড়ী বিশুদ্ধ মধু কেনার চেষ্টা করলাম কিন্তু বাস্তব কারণে কেনা সম্ভব হলোনা । কারণ ভেজালে ভরা মধুর সয়লাব অত্র অঞ্চল জুড়ে । ভেজালমুক্ত বিশুদ্ধ মুধুর সাক্ষাৎ পাওয়া খুবই দুস্কর । বিশুদ্ধ মধুর কচিৎ কদাচিৎ দেখা মেললেও দাম অত্যধিক বেশি এবং দুর্লভও বটে । সুতরাং মধুর আশা ত্যাগ করে চা কেনার চেষ্টা করে সফল হওয়া গেলো।
পরে জ্ঞাত হয়া গেলো যে এ অঞ্চলের খাসিয়া পল্লীর লোকজন অসততায় খুবই পারদর্শি এবং পরিপূর্ণ পরিপক্ক । আমরা যে চা সংগ্রহ করলাম- সে চায়ের বেশির ভাগই নাকী ভেজালে পরিপূর্ণ। নেড়া তো একবারই বেল তলা যায় । আমাদের অবস্থা ও দশা তাই হলো বলে অনুতপ্ত মনে ফিরে এলাম । ক্যানেলের তীরে অবস্থিত ছোট ছোট অস্থায়ী দোকান হতে নানা ধরনের জিনিসপত্র অন্য স্থানের চেয়ে কম দরে কেনা সম্ভব হলো। খুশী মনে আবার যন্ত্রচালিত আমাদের জন্য নির্ধারিত ছৈওয়ালা নৌকায় ওঠে ক্যানেলের তীরে নেমে জাফলং এর পাথরের বিশাল এবড়ো থেবড়ো এবং বন্ধুর সমুদ্র পেরিয়ে অনেক উপরে ওঠতে
ওঠতে প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত ।
অন্যদিকে ক্ষুধার্ত সকলে খাদ্যের জন্য হা পিত্তেস করে এক হোটেলে পৌঁছা গেলো । মোটামুটি পরিতৃপ্তির সাথে আহারকার্য সমাপ্ত করে ফেরার জন্য গাড়িতে ওঠলাম। গাড়ি ধেই ধেই গতিতে অনেকক্ষণ ধরে চলে পৌছলাম ‘লালাখাল’ এলাকায়। আবার সেই যন্ত্রচালিত ছৈযুক্ত নৌকায় করে জলজ ভ্রমণ । চমৎকার রঙ্গিন পানির স্বাক্ষাৎ পেয়ে সকলের প্রাণ প্রায় পুলকিত ও উল্লসিত।
এতো সুন্দর নীল সবুজ রঙিন পানির সমাহার দেখে ক্ষণে ক্ষণে আবার পানির রংয়ের পরিবর্তন দেখে মন যেনো শ্রদ্ধাবনত হচ্ছিলো সেই মহান আল্লাহর সমীপে- যিনি একই জলাধারে হরেক রংয়ের রঙিন পানির সমাহার ঘটিয়ে তাঁর অজস্র কুদরতের চমৎকার নিদর্শন প্রদর্শন করছেন । আমরা প্রাণ ভরে ওসব কুদরতের অপূর্ব নিদর্শন প্রত্যক্ষ করে করে সামনের দিকে এগুচ্ছিলাম । চমৎকৃতও হচ্ছিলাম বিপুলভাবে- কিন্তু সময় স্বল্পতা এবং সময়াভাবে পুরো ‘লালাখাল’ পরিদর্শন করা সম্ভব হলোনা আমাদের।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় এবং ঘন অন্ধকারের কারণে অর্ধেক পথ বাকী রেখেই আমরা ফিরে আসতে বাধ্য হলাম ।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অভূতপূর্ব এক চমৎকার নিদর্শনের পুরোটা প্রত্যক্ষ করবার সুযোগ আর না হওয়ায় ব্যর্থ মনোরথে ওপরে এসে গাড়িতে আসন গ্রহণ করলাম ।
চালক আমাদের নিয়ে ‘সাতরংয়ের’ চায়ের স্টলে এসে গাড়ি থামিয়ে দিলেন। চা পান করে অল্প ক্ষণের মধ্যে আবার রওয়ানা ।
এবার আসা গেলো বাংলাদেশের অন্যতম তাপস কুলমনি হযরত শাহ পরান (র.) এর মাজার প্রাঙ্গণে। আমরা সবাই গাড়ি হতে নেমে পড়লাম । মহিলারা গেলেন মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট ইবাদতের স্থানে। আমরা পুরুষরা গেলাম সমরাসরি মাজার প্রাঙ্গণে । গিয়ে দেখলাম বিশাল একটা জনসমাবেশ । তারা সম্মিলিতভাবে মুনাজাতের মাধ্যমে রাব্বুল আলামীনের কাছে কান্নাকাটি করে মনের আশা আকাঙ্খা প্রকাশ করছেন। আমরাও শামিল হলাম দোআ ও মুনাজাতে আমরাও দোআ-মুনাজাত করে হৃদয় মনের নানা আকুতি প্রকাশ করলাম ।
১৯ তারিখের আমাদের ফেরার টিকেট কেনা হয়। দুপুর দেড়টায় আমাদের বাস হওয়ায় আমরা সকালের নাস্তা করলাম হযরত শাহজালাল (র.) মাজার প্রাঙ্গণের সন্নিকটে এক রেস্টুরেন্টে। এরপরে প্রবেশ করলাম মাজার প্রাঙ্গণে। প্রথমে গেলাম জালালী কবুতরের খাদ্য খাওয়ার দৃশ্য অবলোকনের জন্য। পরে গেলাম পুকুরে অবস্থিত বিশাল বিশাল গজার মাছ দেখতে। সকলেই চমৎকৃত হলাম । শিশু কিশোররাও প্রাণভরে প্রত্যক্ষ করলো গজার মাছের বিপুল বিরল নড়াচড়ার দৃশ্যাবলী ।
পরে অজু করে মাজারের মূল প্রাঙ্গণে ঢুকলাম। দো’আ ও দরুদ পড়ে- মুনাজাত করে ফিরে এসে হযরত শাহজালাল (র.) এর বিশাল মসজিদের ভেতরে গিয়ে দুরাকাত ইশরাক নামায আদায় করলাম আমি সুমন ও খায়রুল । পরে ফিরে এলাম মাজার প্রাঙ্গণ হতে । অন্যদিকে অদূরে অবস্থিত হযরত শাহজালাল (র.) এর ব্যবহৃত কুয়া ও পানি দেখার জন্য গেলাম ।
অত:পর মাজার প্রাঙ্গণের বাইরে এসে বিভিন্ন দোকান হতে মুখরোচক দ্রব্য কেনা হলো, আমিও দু, প্যাকেট চা কিনলাম । পরে হোটেলে এসে হাত মুখ ধূয়ে, অজু করে জোহর নামায পড়ে নিলাম । এরপর হোটেল ত্যাগকরে সবাই পৌঁছে গেলাম বাস স্টেশনে ।
ঠিক দেড়টার পূর্বেই আমাদের জন্যে নির্ধারিত ‘এনা ” বাসে আমরা নিজ নিজ আসন গ্রহণ করলাম। যথাসময়ে বাস যাত্রা শুরু করে দিলো ঢাকার উদ্দ্যেশ্যে। রাত সাড়ে নটার মধ্যেই আমাদের বহনকারী বাস মহাখালী বাস টার্মিনালে পৌঁছলে আমরা কেউ প্রাইভেট কারে কেউবা সিএনজি যোগে দক্ষিণ বনশ্রীতে অবস্থিত আশিক আব্দুল্যার ‘ইউনিটি প্যালেসে’ পৌঁছে গেলাম ।
স্বস্থি ও নির্বিঘ্ন অবস্থায় দীর্ঘযাত্রার পরে সবাই স্বস্তিরনিশ্বাস ত্যাগ করে রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পড়লাম। ক্লান্ত শ্রান্ত শরীর নিমিষেই গভীর ঘুমের অতলে হারিয়ে গেলো এবং মুয়াযযিনের ফজর নামাজের জন্য আযান ধ্বনির সঙ্গে সঙ্গেই উঠে ওয়ার্শরুমে ‘কর্মকান্ড’ সেরে মসজিদের দিকে রওয়ানা দিলাম ।