শাহীন খান এর গুচ্ছ কবিতা

১. বাবা হারিয়ে গেছে 

প্রিয় বাবা হারিয়ে গেছে দূর অজানার বাঁকে

জানি না সে কেমন আছে,  কোথায় গিয়ে থাকে?

বাবা ছিলো আমার মনের সুখের বাকুমবাকুম

তার বিহনে ঘোর বেদনা কোথায় ধরে রাখুম!

আমার আকাশ জুড়ে ছিলো পূর্ণিমারই চাঁদ

বাবা ছিলো আমার কাছে বিধির আশীর্বাদ।

চলতে গেলে মনে পড়ে তার হারিয়ে যাওয়া

এখন আমার তাকে ছাড়া সুখটা হাওয়া হাওয়া।

বাবা তুমি ফিরে এসো লুকিয়ে থেকো না

তুমি ছাড়া কেমন আছি এসেই  দেখো না।

তোমায় ছাড়া ঘুম আসে না চাঁদ জাগানো রাতে

তোমায় আমি খুঁজে বেড়াই বৃষ্টিস্নাত প্রাতে।

হাত বাড়িয়ে ডাকছি তোমায় অভিমানটা ভুলে

এসো ফিরে এসো আমায় নাও কোলে নাও  তুলে।

 

২ ছেলেবেলা

কোথায় গেলো সুখের সেদিন কোথায় ছেলেবেলা?

ভেবে ভেবে সুখের খালে ভাসাই দুখের ভেলা।

সোহেল আমি দুজন মিলে নানু বাড়ী যেতাম

মধু মাসে আমের বনে আমটি পেড়ে খেতাম।

ঝিঁঝির ডাকে লাগতো দোলা ছোট্র অবুঝ প্রাণে

আমরা দুজন মুগ্ধ হতাম কোকিল পাখির গানে।

থলে নিয়ে হাটে যেতাম শুক্র ও সোম হলে

কথায় কথায় ঝগড়া হতো কানটি দিতাম মলে।

মাছ ধরিতে যেতাম দু’ জন  পুকুর ডোবা বিলে

মান অভিমান বেজায় হতো আবার যেতাম মিলে।

বৃষ্টি হলে ভিজে ভিজে খেলেছি হাডুডু

বারণ করতো  মা যে কতো এবং ঝুমু  বু।

সূর্যমণি মেলা এলে দু’জন মিলে যেতাম

পুতুলবাজী দেখার ফাঁকে বাদাম বাজা খেতাম।

ইশকুলেতে যেতাম চলে ব্যাগটা নিয়ে কাঁধে

সে সব স্মৃতি মনে এলে হৃদয় আমার কাঁদে!

দিন বদলের পালায় পড়ে হারিয়ে গেছে সব

হারিয়ে গেছে জীবন থেকে মিষ্টি কলরব!

 

৩.ঘাম আর ঘামাচি

দাবদাহে মন পোড়ে পোড়ে দেহ চামড়া

ঘাম ঝরে থেকে থেকে কি যে করি আমরা!

শার্ট খুলি দেহ থেকে খুলি আরো গেঞ্জি

ঘামচিটা তাই দেখে দেয় মুখ ভেংচি।

চুলকায় পিঠ পেটে চুলকায় ঠ্যাংটায়

আমারই দশা দেখে কাঁদছে গো ব্যাঙটায়।

উপরেতে পাখা ঘোরে পাখা যেন কাতরায়

তবু পাখা জোরে চলে খুব বেশি মাত্রায়।

দরদর করে ঘাম তবু দেখ ঘামছে

ঘামাচিটা রানে বসে জোরে দেয় খামচে।

ঘাম আর ঘামাচি যেন ওরা দোস্তি

আমার এ দেহ যেন পায় ওরা বস্তি

আর তাই দেহ নিয়ে করে শুধু কুস্তি

এতো দিই পাউডার নাহি পাই স্বুস্তি। ( স্বস্তি)

শেষমেশ মেঘ ডেকে যেই  নামে বৃষ্টি

লেজ তুলে  ভেগে যায়  যতো অনাসৃষ্টি।

 

৪. তুমি তুমি তুমি করে 

তুমি ছিলে হৃদয় জুড়ে স্বপ্নে মাখামাখি

নিত্যদিনই তোমার ছবি যেতাম শুধু আঁকি

এক অনাবিল ভাবনাতে হায় থাকতে তুমি কাছে

ভয়টা আমায় কুঁড়ে খেতো হারাই যদি পাছে।

তুমি ছিলে শান্ত জলে হঠাৎ হাওয়ার ঢেউ

কি যে ভালো লাগতো তোকে জানতো নাতো কেউ

তোকে নিয়ে গল্পগানে  কাটতো আমার বেলা

তুই ছিলিরে আমার কাছে সুখ নামক এক ভেলা।

তুমি ছিলে ফাগুন ফাগুন কোকিল ডাকা লগন

চন্দ্র ছিলি তারাও ছিলি, ছিলি শরৎ গগন

বুকের ভেতর কলজে ছিলি আরো ছিলি শ্বাস

তুমি তুমি তুমি  করে  কাটতো বারোমাস।

তুমি ছিলে পুতুল পুতুল চড়ুইভাতির  সাথী

ছিলে তুমি কিশোর  মনের আলোয় ভরা বাতি

দুরন্ত সেই দিনের কথা কেমনে ভুলি বল?

সে সব স্মৃতি মনে এলে  নামে চোখে জল!

হঠাৎ করে হারিয়ে গেলি দূর অজানার বাঁকে

কতো বছর কেটে গেলো স্মৃতি তবু ডাকে

স্বপ্ন গুলো মিথ্যা হলো কষ্টে আছি আমি

কতো ভালোবাসি আজো জানলে না তা তুমি!

হয়তো কভু আর হবে না তোমার সাথে দেখা

সব নিয়েছি মেনে আমি ভাগ্যে ছিলো লেখা

পরাজিত  সৈন্য আমি স্মৃতিই আমার কাফন

যদি পারিস আয় ছুটে আয়, দেখবি আমার দাফন!

One comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *