স্ম র ণ: ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব

আযাদ আলাউদ্দীন ।।

১৯৫২ সালের সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক কাজী গোলাম মাহবুব ২০০৬ সালের ১৯ মার্চ ইন্তেকাল করেন। মহান ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে তিনি একজন অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে ১৯৪৮ সালেই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে যোগদান করেছিলেন।

তখন বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে কাজ করতে গিয়ে ঢাকা রেডিও স্টেশনের সামনে লাঞ্ছিত হন। ১১ মার্চ হরতালের সময় সেক্রেটারিয়েটের সম্মুখে পিকেটিং গ্রুপের নেতৃত্ব দেন গোলাম মাহবুব। আইজি জাকির হোসেনের গাড়ির গতিরোধ করার জন্য শুয়ে পড়েন। এমতাবস্থায় আইজি গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে অগ্রসর হন। গোলাম মাহবুবের নেতৃত্বাধীন পিকেটারেরা তাকে বাধা দেন। এ সময় লাঠিধারী পুলিশ আক্রমণ চালায়। পুলিশ কাজী গোলাম মাহবুবকে গ্রেফতার করে। তাকে সেন্ট্রাল জেলে পাঠানো হয়। গোলাম মাহবুব ও শওকত আলীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। রাজবন্দীরা তাদের ছাড়া জেলখানা পরিত্যাগ না করার সিদ্ধান্ত নেন।

১৯৫২ সালের জানুয়ারিতে গোলাম মাহবুব পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন এবং একই সাথে ছিলেন আওয়ামী মুসলিম লীগের সদস্য। প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন জনসভায় উর্দুকে পাকিস্তানের ‘একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’ করার ঘোষণা দেন। এর প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য গোলাম মাহবুব ৩১ জানুয়ারি সর্বদলীয় সভা আহ্বান করেন। সভায় তাকে আহ্বায়ক করে ৪০ সদস্যবিশিষ্ট সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। কলকাতা ইসলামিয়া কলেজের ভিপি হিসেবে তিনি জনপ্রিয় ছাত্রনেতা ছিলেন। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এমন একজন তরুণ, উদ্যমী ও সম্ভাবনাময় নেতাকে সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক নিযুক্ত করাই ছিল স্বাভাবিক।
সর্বদলীয় বৈঠকেই ২১ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী হরতাল পালনের সিদ্ধান্ত হয়। এই কর্মসূচিকে সফল করার জন্য গোলাম মাহবুব নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। প্রথমেই ৪ ফেব্রুয়ারির ধর্মঘটকালে ঢাকায় ছাত্রদের বিশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
২১ ফেব্রুয়ারিতে গুলিবর্ষণের ঘটনার পর পরিস্থিতি সম্পর্কে ২৪ ফেব্রুয়ারি পূর্ব-পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমীনের বেতারভাষণ ছিল অতিরঞ্জিত এবং সত্যের অপলাপ। গোলাম মাহবুব এ বক্তব্য খণ্ডন করে, প্রকৃত বিষয় তুলে ধরে বিবৃতি প্রদান করেন। ২ মার্চ তিনিসহ ৯ জন গুরুত্বপূর্ণ নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে একটি গেজেট প্রকাশিত হয়। একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। একুশের আন্দোলনের সিপাহসালার কাজী গোলাম মাহবুব জাতির গর্বের এক প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব।

One comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *