তারেক ইয়ামিন কিবরিয়া ।।
প্রকৃত নাম মনির। গ্রামের সবাই তাকে আক্তারের বাপ বলে ডাকে। আর আক্তারের বাপ সকল মানুষকে বন্ধু বলে ডাকে। এ কারণে অনেকের কাছে সে বন্ধু হিসেবে পরিচিত । কখনো সে রাস্তার পাশে , কখনো বাজারের দোকানের সামনে ঘুমিয়ে থাকে। তার পছন্দ হলো নতুন টাকার নোট। সবসময় মানুষদের কাছে নতুন টাকা ভিক্ষা চায়। পুরাতন টাকায় সে কখনো খুশি হয় না। নতুন দুই টাকার নোট হলেও সে খুশি, আর পুরাতন ১০০ টাকার নোট দিলেওসে খুশি হয়না। আর পুরাতন টাকার নোট সে নিতেও চায় না।
তাকে দেখে আরিফের খুব দু:খ হলো। কারণ তার প্রধান খাদ্য হলো কাগজ । সে দোকানের পাশ থেকে কাগজ নিয়ে এগুলো চিবুতে থাকে। কাগজের ভিতর তার প্রিয় হলো ঔষধের খালি প্যাকেট। এই দৃশ্য দেখে আরিফ খুবই ব্যথিত হয়। তারপর আরিফ হোটেলে গিয়ে তার জন্য এক প্লেট ভাত কিনে নিয়ে আসে। আর আক্তারের বাপ এগুলো পেয়ে খুশিতে আটখানা। সে তৃপ্তি সহকারে ভাত খেল।
আক্তারের বাপের জমানো টাকাগুলো দিয়ে বাচ্চাদের খেলনা কিনে সেগুলো নিয়ে একা একা খেলতে থাকে। যদিও সে বাচ্চা নয়। তবুও সে বাচ্চাদের মতো থাকতে পছন্দ করে। আনুমানিক তার বয়স ৩৫ হবে। তার মুখে সবসময় একটা বুলি থাকে, আর সে বুলি হলো “ ও……বন্ধু” সে সব সময় ও বন্ধু বলেই সকলকে ডাকতে থাকে। আর যাই হউক মানুষ কিন্তু তার আচরণে বিরক্ত হয়না। বরং তার সাথে রসিকতা করার চেষ্টা করে।
একদিন ফেসবুক ওপেন করে দেখি আক্তারের বাপ গান গাইছে, আর সে গান রিয়াজ নামে একটা ছেলে ফেসবুক লাইভ দেখাচ্ছে। প্রায় ১০ মিনিট পর্যন্ত তার গানগুলো শুনছিলাম । বেশ ভালোই লাগছিলো। তার কন্ঠটা অনেক সুন্দর। তখন একা একা ভাবছিলাম আজ যদি আক্তারের বাপ প্রতিবন্ধি না হতো তা হলে সে একজন নাম করা গায়ক হতে পারতো! সকলের কাছে সে সম্মানের পাত্র হতো।
কিন্তু আজ সে প্রতিবন্ধি হওয়ার কারণে সকলে তাকে অবহেলা করে! এখানে তার তো কোনো হাত নেই। তাকে আল্লাহ এভাবেই পাঠিয়েছেন মানুষের চিন্তা করার জন্য। এখন আমি মনে মনে ভাবি আল্লাহ তো চাইলে আমাকেও তার মতো করতে পারতেন!