মো. মমিন উদ্দিন রানা ।।
এবারে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসের প্রতিপাদ্য ছিলো- `Hepatitis Can’t Wait! বিশ্বে প্রতি ৩০ সেকেন্ডে একজন হেপাটাইটিস জনিত রোগে মারা যায়। বাংলাদেশে প্রতি ১২ জনে একজন আক্রান্ত। এই রোগ সম্পর্কে সবাইকে জানানো ও সচেতনতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। হেপাটাইটিস আমাদের কাছে জন্ডিস হিসাবেই ব্যাপক পরিচিত। এজন্য জন্ডিসের প্রাথমিক উপসর্গগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। সম্ভব হলে হেপাটাইটিস পরীক্ষা করে নেগেটিভ আসলে টিকা দেয়া শুরু করা যেতে পারে।
আমি ছোট বেলা থেকে বার্ষিক/স্মার্ষিক ‘ঝাড়ফুঁক’ দিয়ে জন্ডিসের চিকিৎসা নিয়েছি। যখন শহরে পড়াশোনা করতাম তখন ছুটিতে বাড়িতে গেলেই মা পাশের গ্রামের বৈদ্য-কবিরাজের কাছে পাঠাতেন। যদিও এসবে আমার কোন বিশ্বাস ছিল না। মঝে মধ্যে আমি যেতে চাইতাম না, মা সিস্টেম করে পাশের বাড়ির এক মহিলাকে নিয়ে আসতেন। তখন পিড়িতে বসে তার কথিত চিকিৎসার শিকার হতাম। চিকিৎসা সারঞ্জমের মধ্যে চুন, এক ধরণের গাছের পাতা (স্থানীয় বাসায়-বয় পাতা) আর বৈদ্য/কবিরাজের স্বপ্নে অথবা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া দোয়া/মন্ত্র দিয়ে কাজ শুরু করেন।
একবার আমার এক মামা বিদেশ যাওয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। আমাদের দেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে কোন শ্রমিক গেলে তাদের মেডিক্যাল রিপোর্ট জমা দিতে হয়। তিনি ঢাকায় যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার নমুনা দিয়ে এসেছেন। কিছুদিন পর উনার রিপোর্টে দেখা গেল ‘হেপাটাইটিস বি’ পজিটিভ। তার তো চিন্তার শেষ নেই! কিভাবে কি করা যায়? এবার চিকিৎসার উপায় খুঁজতে বের হলেন। আমি তাকে নিয়ে একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে গেলাম। ডাক্তার যা বললেন তার মানে হলো- হেপাটাইটিস বি সারানোর সুযোগ নেই। বিশেষ কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। যাদের এই ভাইরাস নাই তারা টিকা দিতে পারেন। ফলে তাদের শরীরে এন্টিবডি তৈরি হয়। কিন্তু অলরেডি যাদের শরীরে এই ভাইরাসটি বাসা বেধেছে তাদের আর টিকা দেয়ার সুযোগ থাকেনা। ডাক্তার যা বুঝালেন তাতে আমরা খুব হতাশ হয়ে বাসায় ফিরেছি।
হঠাৎ মামি একদিন পোস্টারের একটা ছবি নিয়ে হাজির। আগ্রহ নিয়ে পড়ে দেখি কত বড় ভন্ডামি! ‘আপনি কি বিদেশ যেতে পারছেন না? হেপাটাটিস বি পজিটিভ? তাহলে আপনাকেই বলছি। আমরাই প্রথম শতভাগ গ্যরান্টিসহ…।’ আমি যতোই ডাক্তারের কথা স্মরণ করে দিতে চাই, ততই মামা বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হচ্ছে। অবশেষে ৪৮ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে গেলাম সেখানে। কথার পেছে আটকা অতঃপর টাকা জমা দেয়া, কাজের কাজ কিছুই হলোনা।
আমাদের তজুমদ্দিন উপজেলার গোলাম রাকিব রাজিব ভাই রাজধানীর একটি নামকরা বেসরকারি হাসপাতালের এডমিন আফিসার। চিকিৎসা সেবা তার এক ধরণের নেশা। নিজ উপজেলার মানুষের কথা শুনলে আরও বেশি এগিয়ে আসেন। চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে আমি উনার পরামর্শে বেশি ভরসা পাই। একদিন হেপাটাইটিস নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা ফেসবুক পোস্ট দিলেন। ভাইর পরামর্শে আমি ওই দিনই হেপাটাইটিস পরীক্ষা করলে রেজাল্ট নেগেটিভ আসে। পরে ‘হেপা-বি এডাল্ট’ টিকা দিয়েছি। রাকিব ভাই’র সহযোগিতায় নিজ উদ্যোগে পরীক্ষা করে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। যাদের রেজাল্ট নেগেটিভ ছিল তাদের ডাক্তারের পরামর্শে পাঠিয়েছি।
বর্তমান সময়ে আমদের এই রোগ প্রতিরোধে সরকারিভাবে শিশুদের টিকা দেয়া হচ্ছে। যারা টিকা পাইনি বা নেয়ার সুযোগ হয়নি আমাদের এই বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়া দরকার।
মো. মমিন উদ্দিন রানা
শিক্ষার্থী, পরিসংখ্যান বিভাগ, সরকারি বিএম কলেজ, বরিশাল
খুবই গুরুত্বপূর্ণ