জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের ইতিবৃত্ত: পর্ব ২৫

মাহমুদ ইউসুফ

ইসরাইলের ইবলিসি

১৯৯০ সালের ৮ অক্টোবর ইসরাইলি পুলিশ জেরুজালেম শহরে বিক্ষোভ প্রদর্শনরত ফিলিস্তিনিদের উপর হামলা চালিয়ে ১৭ জন মুসলমানকে নিহত ও অপর ১৫০ জনকে মারাত্মকভাবে আহত করে। একই দিনে অপর এক ঘটনায় পূব জেরুজালেমে ৩ জন ফিলিস্তিনি মুসলিম নিহত হয়। এই হত্যাকা-ের প্রতিবাদে ইরাকে ৩দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করে। এর কিছুদিন পর ২রা নভেম্বর ইসরাইলি পুলিশ গুলি করে শতাধিক ফিলিস্তিনি আহত করে এবং সমগ্র এলকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য সন্ধ্যা আইন জারি করে। সমসাময়িককালে ইনতিফাদা আন্দোলন জোরদার হলে ইসরাইল দ্রুততা ও নিষ্ঠুরতার সাথে এই আন্দোলনকে দমন করতে তৎপর হয়ে ওঠে। যার কুরবানি হতে হয় ১১০০ ফিলিস্তিনিকে। রাজতান্ত্রিক ও স্বৈরতান্ত্রিক আরব রাষ্ট্রগুলোগুলোর নিরবতায় আমরা আহত।
[মঈন বিন নাসির, প্যালেষ্টাইন থেকে বসনিয়া, বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি, ঢাকা, অক্টোবর ২০০০, পৃ ১১৪-১১৬]

বসনীয় গণহত্যা
১৯৯২ সালের এপ্রিলে যুগোস্লাভিয়া থেকে নিজেদের স্বাধীন ঘোষণা করে বসনিয়া-হার্জেগোভিনা। এই অপরাধে এই মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায় বসনীয় সার্বরা। ধারণা করা হয়, এই গণহত্যায় কমপক্ষে ১ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
৩ বছর ধরে চলা এই গণহত্যার মধ্যে নৃশংসতায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সেব্রেনিৎসা গণহত্যা। ১৯৯৫ সালের জুলাই মাসে জাতিসংঘ ঘোষিত নিরাপদ এলাকা সেব্রেনিৎসায় নিয়োজিত শান্তিরক্ষী বাহিনীর সামনেই আলাদা করা হয় সেখানে বসবাসরত নারী ও পুরুষদের। এরপর শুরু হয় নৃশংসতার প্রথম পর্ব। মুসলিম নারী ও কিশোরীদের একে একে বাসে তুলে পাঠানো হয় সার্ব-অধ্যুষিত এলাকাগুলোয়, যেযখানে তাদের ওপর চালানো হয় যৌন নিপীড়ন, অপেক্ষাকৃত কম বয়সীরা শিকার হয় ধর্ষণের। অন্যদিকে সেব্রেনিৎসার সাত থেকে আট হাজার কিশোর ও পুরুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় সেখানেই। একই ধরনের নৃশংসতা চালানো হয় সারায়েভো, জেপা, ফোকা, প্রিজেদর ও ভিজগ্রাদে। সার্বীয় সৈন্যদের হাতে হত্যা আর ধর্ষণের শিকার হয় লক্ষাধিক বসনীয় মুসলিম। [দৈনিক প্রথম আলো, কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ২৫ মার্চ ২০১৭]

বসনিয়ায় মুসলিম গণহত্যার ২৫ বছর
যুক্তরাজ্যের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জন মেজরের বয়ানই কায়েম করতে চেয়েছিল সার্বিয়রা। ‘ইউরোপের বুকে কোনো মুসলিম রাষ্ট্র সহ্য করা হবে না’- জন মেজর। জার্মান রাষ্ট্রদূত উইলফ্রেড হফম্যান লিখেছেন, ‘মুছলমানদের বিরুদ্ধে সার্বিয়দের ধ্বংসযজ্ঞ সার্বিয় এবং গ্রিক সংবাদ মাধ্যমে উভয়েই ক্রুসেড আখ্যায়িত করে স্বাগত জানিয়েছে এই বলে যে, এই ধর্মযুদ্ধের মাধ্যমে অতঃপর ইউরোপের মাটি থেকে শেষ মুসলিম উৎখাত করা যাবে।’ [ড. মুহাম্মাদ সিদ্দিক, সংস্কৃতি মিডিয়া ও স্বাধীনতা, ঢাকা পাবলিকেশন্স, প্রথম প্রকাশ ২০১৩, পৃ ৩৬]

অস্ট্রেলিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘন
গত সোয়া দুইশত বছর যাবত অস্ট্রেলিয়ায় আদিবাসীদের উপর নির্মম নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। ১৭৮৮ সালে বৃটিশরা প্রথম অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছানোর সময়ে সেখানে প্রায় ১ মিলিয়ন আদিবাসী ছিলো। বলকে, বিশ শতকে তা কমে ২০ হাজারের নিচে নেমে আসে। বর্তমানে আদিবাসীদের সংখ্যা অস্ট্রেলিয়ার মোট জনসংখ্যার কেবল ৩.৩ শতাংশ। বলকে, অস্ট্রেলিয়ার কারাগারগুলোতে কয়েদিদের মোট ২৮ শতাংশ হচ্ছে অদিবাসী। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন সেদেশের মানবধিকারের এহেন খারাপ দৃষ্টান্তের নিন্দা জানালেও অস্ট্রেলিয়ার সরকার ও তথ্য মাধ্যমের নিরবতায় রহস্যের আঁধার ক্রমঘূর্ণায়মান।
আদিবাসী জনগণের ইতিহাস হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের ইতিহাস। তবে, এখানেই শেষ নয়। এটি তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের খুবই সামন্য অংশমাত্র। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, সেদেশে বর্ণবাদ চরম আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে সহিংস ঘটনা ঘন ঘন ঘটে চলছে। বর্ণবাদ বিরোধী এক অলাভজনক সংস্থার গবেষণায় দেখা যায়, সেদেশের মুসলিম, প্রবাসী চীনা ও অদিবাসীরা সবচেয়ে বেশি বর্ণবাদী আচরণ ও হামলার শিকার। বলকে, দেশটির রাজনীতিবিদরা এসবকে সবসময় অবহেলা করে আসছেন। বাস্তবতা বলছে অস্ট্রেলিয়া মানবাধিকারের রক্ষক নয়, মানবাধিকারের ভক্ষক।
[http://bengali.cri.cn/20210710/af4c906b-b3b6-2ce2-d499-7ce729d2a182.html]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *