নিয়ামুর রশিদ শিহাব ।।
‘নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন, নাইরে টেলিগ্রাম বন্ধুর কাছে মনের খবর কেমনে পৌছাইতাম।’ এক সময় প্রায়ই রেডিওতে শোনা এ রকম কালজয়ী গানের সাথে দিন বদলের পালায় কালের বির্বতনে হারিয়ে গেছে ডাকযোগে চিঠি পত্রের ব্যবহার। সেই সাথে কদর কমে গেছে বহুল ব্যবহৃত ডাক বাক্সের। তাই অলস পড়ে থাকা চিঠির বাক্সগুলো মরিচা পড়ে যাচ্ছে।
আধুনিক যুগের মতো মোবাইল ও ইন্টারনেট ছিল না বলে এক সময় মানুষের সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিলো ফ্যাক্স ও ডাক যোগাযোগ মাধ্যম। আজ থেকে মাত্র পনেরো বছর আগেও পাড়া প্রতিবেশী আত্মীয় স্বজন অথবা অতি আপনজন দুরদুরান্ত থেকে ফ্যাক্স কিংবা ডাকযোগে চিঠি পত্রের মাধ্যমে সবার সাথে যোগাযোগ এবং খোঁজ খবর নিতো। আর্থিক লেনদেনও করা হতো ডাকযোগের মাধ্যমে।
বাবা-মা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, পুত্র-কন্যা কিংবা প্রিয় মানুষটির চিঠির অপেক্ষায় থাকতো। প্রহর গুনতো আসবে কখন ডাক-পিয়ন। প্রিয় মানুষটি অথবা অতি আপনজনের সেই চিঠি হাতে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হতো অপেক্ষকৃত ব্যক্তিটি। চিঠি হাতে নিয়ে কতই না স্বপ্নে বিভোর থাকতে প্রেমিক-প্রেমিকা। স্ত্রী তার স্বামীর চিঠি অপেক্ষায় থাকতো, সেইরকম মা থাকতো ছেলের, আর প্রেমিক ও প্রেমিকা থাকতো চিঠি অপেক্ষায়। তখনকার দিনের সেই আনন্দ অনুভূতিই ছিলো অন্যরকম। কিন্তু প্রযুক্তির বির্বতনে এখন আর শহর কিংবা গ্রামগঞ্জে ডাকযোগে চিঠিপত্রের ব্যবহার নেই। তাইতো আনাচে কানাছে ডাক বাক্স গুলো অলস পড়ে আছে। কেউ চিঠি দিচ্ছি না, চিঠি নেয়ার জন্য বাক্স খুলছেও না। তাই অলস পড়ে থাকা চিঠির বাক্সগুলো মরিচা পড়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ এখন প্রযুক্তির দিক থেকে অনেক এগিয়ে। অনেক উন্নত পরিসরে চলছে মানুষের সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। এখন মানুষ ডাকযোগে যোগাযোগের মাধ্যম পরিহার করে মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেসবুকিং, ই-মেইল, কিংবা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনসহ নিত্য প্রয়োজনীয় যোগাযোগ করে থাকেন। আর এসবের ব্যবহারও চলছে জোরালো গতিতে। তাই মানুষজন এখন ভুলে গেছেন সেই পুরনো আমলের ডাকযোগে চিঠি পত্রের কথা। এজন্য এখন গ্রামগঞ্জের অনেক স্থানের ইউনিয়নের বাজারে গেলেই সেখানকার পোস্ট অফিস থাকলেও নেই কোন কার্যক্রম। সেই পোস্টঅফিসে চিঠিপত্র জমা রাখার বক্স থাকলেও বক্সে নেই কোনো চিঠি। এভাবেই প্রযুক্তির বিকাশে ও যোগাযোগ মাধ্যমের উন্নতি সাধনে দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে চিঠি পত্রের ব্যবহার।
বি. দ্র. চিঠি নিয়ে আরো এক্সক্লুসিভ লেখা পড়তে সংগ্রহ করুন মুক্তবুলি ম্যাগাজিন সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০২১ সংখ্যা।
নিয়ামুর রশিদ শিহাব
শিক্ষার্থী, বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
০১৭৬৭০৫৩১০২