মুক্তবুলি প্রতিবেদক ।।
আহমদ ছফা। একজন প্রতিবাদী লেখক ও সংগঠক। জন্ম ১৯৪৩ সালের ৩০ জুন চট্টগ্রামের চন্দনাইশের গাছবাড়িয়া গ্রামে। চট্টগ্রামে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক লেখাপড়া শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন তিনি। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ায় খুব বেশি মনোযোগী ও সুস্থির না হয়েও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। পিএইচডি পর্যায়ের উচ্চতর গবেষণায় যুক্ত হলেও ডিগ্রি অর্জন সম্ভব হয়নি। অকৃতদার ছফা ছিলেন স্বাধীন সত্তার অধিকারী। ছিলেন তীক্ষ্ণ মেধার অধিকারী একজন সৃষ্টিশীল লেখক। ষাটের দশকে তার সাহিত্য-জীবনের সূচনা। সৃষ্টিধর্মী লেখক হিসেবে গল্প, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ, সমালোচনা, অনুবাদ, শিশুসাহিত্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব দেখান। বিভিন্ন সময়ে সাহিত্য-সাময়িকপত্র সম্পাদনা করেন।
বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে তিনি এক সফল লেখক। জীবনের বহু বিচিত্র অভিজ্ঞতাকে গল্প-উপন্যাস লেখায় কাজে লাগিয়েছেন। তার আখ্যানমূলক রচনায় বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাংখা, বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা, মুক্তি কামনা ও স্বাধীনতা-স্পৃহা এবং সামাজিক অসঙ্গতি ও বৈষম্যের চিত্র রূপায়িত হয়েছে। সূর্য তুমি সাথী, উদ্ধার, একজন আলী কেনানের উত্থান পতন, অলাতচক্র, ওঙ্কার, গাভীবৃত্তান্ত, অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী, পুষ্পবৃক্ষ ও বিহঙ্গপুরাণ ইত্যাদি ছফার উপন্যাস। নিহত নক্ষত্র তার গল্পগ্রন্থ। কবিতায়ও স্বাতন্ত্র্য রয়েছে তার। জল্লাদ সময়, একটি প্রবীণ বটের কাছে প্রার্থনা, লেনিন ঘুমোবে এবার ইত্যাদি একাধিক কাব্যগ্রন্থের প্রণেতা তিনি। অনুভূতির প্রত্যক্ষ প্রকাশ, লোকজ ভাষা, পুঁথিপুরাণের শব্দ ও বাকরীতির প্রকাশ তার কবিতার ধরন হয়ে উঠেছে।
জার্মান কবি গ্যেটের বিখ্যাত কাব্য ফাউস্টের অনুবাদ এবং বার্ট্রান্ড রাসেলের সংশয়ী রচনার বাংলা রূপান্তর ছফাকে অনুবাদক হিসেবেও খ্যাতি এনে দেয়। অবশ্য গবেষক ও প্রাবন্ধিক হিসেবেই তার পরিচিতি সর্বাধিক। গবেষণার বিষয় ছিল বাঙালি মুসলমান সমাজ। এ সমাজের গঠন, বিকাশ, জাগরণ ও প্রতিষ্ঠা এবং বুদ্ধিবৃত্তির পরিচর্যা নিয়ে অন্যান্য চিন্তাবিদের মতো ছফাও গভীরভাবে ভেবেছেন। ছফার চিন্তার প্রতিফলন ঘটেছে দু’টি উল্লেখযোগ্য রচনা বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস ও বাঙালি মুসলমানের মনে। এ দু’টি বিশেষ চিন্তামূলক রচনাসহ দেশ, সমাজ ও রাজনীতিবিষয়ক নিবন্ধাবলি তাকে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী লেখকের মর্যাদাপূর্ণ আসন দিয়েছে।
আহমদ ছফা ছিলেন সুবিধাবাদের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদী কণ্ঠ। সাংগঠনিক ক্ষমতাও ছিল প্রচুর। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে আহমদ শরীফের নেতৃত্বে বাংলাদেশ লেখক শিবির গড়ার মুখ্য ভূমিকাও পালন করেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে মানববাদী সংগঠন গড়ে তোলেন। আহমদ ছফা ২০০১ সালের ২৮ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।