মাহমুদ ইউসুফ ।।
স্বপ্নের ঠিকানা বরিশাল। ইতিহাসের নানা ঘটনার ইসাদি বরিশাল। উপমহাদেশের বহু নায়ক-মহানায়কের স্মৃতি-বিজড়িত বরিশাল। বাকেরগঞ্জ, বাকলা, চন্দ্রদ্বীপ- এ কয়েকটি নামের সাথে পরিচয় থাকলেও বেশির ভাগ নামের সাথে আমাদের অনেকেরই পরিচিতি নাই। সে বিষয় নিয়েই এবারকার আয়োজন।
বুজুর্গ উমেদপুর
স্বর্ণযুগের সুশাসক শায়েস্তা খানের পুত্র বুজুর্গ উমেদ খাঁন, যিনি চট্টগ্রামকে রাহুমুক্ত করে ঢাকার অধীন নিয়ে আসেন। অন্যথায় চট্টগ্রাম আজ কোন দেশভুক্ত থাকত সেটা বলা মুশকিল। এই বরেণ্য বীর বাঙালির নামে বরিশাল মুল্লুকে যে পরগনা পয়দা হয় তার নাম বুজর্গ উমেদপুর। বাকেরগঞ্জের নিকটবর্তী গোলাবাড়িতে ছিলো তাঁর কাচারি। এই কাচারি থেকেই তিনি মগ ও জলদস্যুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। বহিরাগত ডাকাত ও দানবদের প্রতিহত, পরাজিত ও বিতাড়িত করে জনগণের জন্যে শান্তি ও নিরাপদ আবাসস্থল গড়েন উমেদ খাঁ। উমেদ খাঁ বরিশালের সোনালি ইতিহাসের মহানায়ক হওয়া সত্ত্বেও জনগণ তাঁকে স্মরণে রাখেনি। তাঁর কৃতিত্বের মূল্যায়ন সময়ের অপরিহার্য দাবি। আগা বাকের ছিলেন এর পরবর্তী মালিক।
গিরদে বন্দর
স্বাধীন সুলতানি আমলে বরিশাল গ্রামেই বরিশাল শহরের উৎপত্তি। বরিশাল গ্রামের অন্য নাম ছিলো গিরদে বন্দর। নবাবি আমলে বরিশাল বন্দরের সমৃদ্ধির সূচনা আরম্ভ হয়। ২৬ ডিসেম্বর ১৭৬২ তারিখে গভর্নর বান্সিটার্টকে লেখা নবাব মির কাসিমের একটি চিঠিতে সর্বপ্রথম বরিশাল নামোল্লেখ পাওয়া যায়। ওই চিঠিতে বরিশালে একটি লবণের প্রধান চৌকি ছিলো বলে উল্লেখ আছে।
ফতিয়াবাদ
স্বাধীনযুগে বাঙলাদেশ জালালাবাদ ও ফতিয়াবাদ নামে দুই ভাগে বিভক্ত হয়। জালালাবাদ হলো সোনারগাঁও মুল্লুক আর ফতিয়াবাদ ছিলো বরিশাল মুল্লুক। ফতিয়াবাদ ৩১টি মহালে বিভক্ত ছিলো। তখন সোনারগাঁও রাজত্ব করতেন নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহ ও তাঁর বংশধররা। কবি বিজয়গুপ্তের কবিতায় উল্লেখ আছে ‘রাজার পালনে প্রজা সুখে ভুজ্ঞেনেত/মুল্লুক ফতিয়াবাদ বাঙ্গরোড়া তকসিম।’ রোহিনী কুমার সেন লিখেছেন, ‘পাঠান রাজত্বকালে বঙ্গদেশীয় সমৃদ্ধিশালী অধিবাসীগণ স্বর্ণপাত্র ব্যবহার করতেন। চোর ভয় এক প্রকার ছিল না।’ অনেক প্রাচীন দলিলে বর্তমান বরিশাল ‘ফতিয়াবাদ’ বলে উল্লিখিত।
ইসমাইলপুর
বাকলার আর একটি নাম ইসমাইলপুর। রোহিনী কুমার সেন বলেন, ‘সম্ভবত বাদশাহি দপ্তরখানার জন্য এ নামে প্রস্তুত হয়েছিল।’ মুলত সে যুগে বাকলা দুই ভাগে বিভক্ত ছিলো, যথা- ফতেয়াবাদ ও ইসমাইলপুর। দুই ভাগের সমীকরণে দেখা যায়, অঞ্চলটি খুবই সমৃদ্ধশালী ছিলো।
চন্দ্রদ্বীপ
অসংখ্য দ্বীপের সমন্বয়ে বরিশাল। ভাটির সময় দ্বীপগুলো দেখতে ক্ষুদ্রাকায় চাঁদের মতো। চাঁদ বা চন্দ্রের মতো দ্বীপ বিধায় এর নাম চন্দ্রদ্বীপ। ভিন্নমতে জানা যায়, চন্দ্র শেখর চক্রবর্তীর নামে অথবা বিক্রমপুর বা মুন্সিগঞ্জ নিবাসী ব্রাহ্মণ চন্দ্রের নামানুসারে চন্দ্রদ্বীপ নামকরণ হতে পারে।
বাকলা
বাকলা আরবি শব্দ। এর অর্থ শষ্য ব্যবসায়ী। ঐতিহাসিক এ. এফ. এম আব্দুল জলিল লিখেছেন, ‘কে বা কারা ঐ নাম দিয়েছিল জানা যায় না। এ সময় বাকেরগঞ্জ অঞ্চলে এখনকার ন্যায় জলোচ্ছ্বাস হতো। সরকার বাকলা অপেক্ষা প্রাচীন বাকলা রাজ্যের আয়তন বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।’ কেউ কেউ মনে করেন বাকলা মেঘনা গর্ভে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাকলার পূর্বে মেঘনা নদী, পশ্চিমে বলেশ্বর নদী, উত্তরে ইদিলপুর, দক্ষিণে সুন্দরবন। বিদেশি পরিব্রাজক র্যাল্ফ ফিচ ১৫৮৬ সালে একে বাকোলা বলে উল্লেখ করেছেন।
সরকার বাকলা
সরকার বাকলা চার মহালে বিভক্ত। ইসমাইলপুর, শ্রীরামপুর, ইদিলপুর, সাহাবাজপুর। আবুল ফজল সরকার বাকলা সম্পর্কে লিখেছেন, ‘সরকার বাকলা সমুদ্রতীরে স্থিত এবং দুর্গটি চতুর্দিক বৃক্ষ দ্বারা বেষ্টিত। প্রতিপদ তিথিতে পানিবৃদ্ধি আরম্ভ হয়ে ১৪ দিন তক বর্ধিত হয়, তৎপর ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে।’ আকবর যুগে নাম ছিলো সরকার বাকলা। এ সময় রাজধানী ছিলো বাউফলের কচুয়া। তবে বাকলা ও সরকার বাকলা একই নামের লিপ্যান্তর। আয়তন কমবেশি মাত্র।
বাঙ্গালা
বরিশালের প্রাচীন নাম বাঙ্গালা। বাঙ্গালা ফারসি শব্দ। সুলতানি আমলে উত্তর, দক্ষিণ, মধ্য, পূর্ব, পশ্চিম বঙ্গ, রাঢ় সবমিলিয়ে বাঙ্গালা নাম হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ১৩৪৬ সালে সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ সোনারগাঁও জয় করে লাখনৌতি, সাতগাঁও ও সোনারগাঁও একত্রিত করে বৃহৎ বঙ্গ গঠন করেন। বাঙলার সমুদয় ভূখ- একীভূত করে তিনি দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ও শাহ-ই-বাঙ্গাল উপাধি গ্রহণ করেন। বাঙ্গালা থেকে পরবর্তীতে বাংলা, বাঙালি, সুবে বাঙলা, বেঙ্গল, বাংলাদেশ নামের উদ্ভব।
বঙ্গাল
বঙ্গাল ফারসি শব্দ। ঐতিহাসিককালে দক্ষিণ অঞ্চল বঙাল বা বাঙ্গাল নামে পরিচিত ছিলো। পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক সমাজ বাঙাল বলে হেয় করত আমাদের। তাদের এ সিলসিলা আজও বর্তমান। শ্রীরমেশচন্দ্র মজুমদার লিখেছেন, ‘বঙ্গাল দেশের নাম হইতেই যে কালক্রমে সমগ্রদেশের বাংলা এই নামকরণ হইয়াছে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। প্রাচীন বঙ্গাল দেশের সীমা নির্দেশ করা কঠিন, তবে এককালে দক্ষিণ ও পূর্ববঙ্গের তটভূমি যে ইহার অন্তর্ভুক্ত ছিল, সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। বর্তমানকালে পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসীগণকে যে বাঙ্গাল নামে অভিহিত করা হয়, তাহা সেই প্রাচীন বঙ্গাল দেশের স্মৃতিই বহন করিয়া আসিতেছে।’
বেঙ্গল
বেঙ্গল, বাঙ্গেলা বা বাঙ্গালা বন্দর প্রাচীন বাংলার সমৃদ্ধশালী শহর। ড. এম এ রহিম মনে করেন, ‘বাঙ্গালা শহর হাতিয়া ও সন্দ্বীপের মাঝামাঝি স্থানে সম্মিলিত নদীগুলোর মোহনায় অবস্থিত ছিল এবং ষোড়শ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে প্রথমদিকে সাগরে বিলুপ্ত হয়ে যায়।’ অন্যমতে, হিজলা বা ভোলার সন্নিহিত অঞ্চলে দ্বীপটির অবস্থান ছিলো। তবে সিরাজ উদদীন আহমেদ লিখেছেন, অধিকাংশ পণ্ডিতের ধারণা বাঙ্গালা শহর ও বাকলা এক। তাঁর মতে, বাঙ্গালা থেকেই বাকলা।’ পর্তুগিজ মুসাফির বারবোসা বেঙ্গলাকে সমুদ্রবন্দর রূপে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘বেঙ্গলা রাজ্যের অভ্যন্তরে ও সাগর উপকূলে উভয় স্থানে বহু শহর বিদ্যমান।’ তিনি আরও জানান, এই সাগর একটি উপসাগর বিশেষ, যা উত্তরদিকে প্রবেশ করেছে এবং এর অভ্যন্তরভাগের শেষ প্রান্তে মুরদের অধ্যুষিত ‘বেঙ্গল’ নামে পরিচিত বড় শহর অবস্থিত এবং একটি খুব ভালো পোতাশ্রয় আছে।’
গঙ্গারিডি
গঙ্গারিডি, গঙ্গারিড়ি, বঙ্গ-দ্রাবিড়ি একই ভূখ-ের ভিন্ন ভিন্ন নাম পরিচয়। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে বর্তমান বরিশাল বিভাগ, খুলনা বিভাগ ও ঢাকা বিভাগে এই সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রটি বিস্তৃত ছিলো। মি. ওয়াটস, ড. ওয়াইজ ও সিরাজ উদ্দীন আহমেদ মনে করেন, কোটালিপাড়া ছিলো গঙ্গারিডির রাজধানী। তখন কোটালিপাড়া বাকলা রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। অন্যমতে, বিক্রমপুরের সোনারঙ গ্রাম বা চন্দ্রকেতুগড় বা সোনারগাঁও বা যশোরের বারোবাজারে গঙ্গারিডি রাজ্যের রাজধানী ছিলো। গঙ্গারিডি রাজ্যের স্র্রষ্টা ছিলেন বঙ-দ্রাবিড়রা। তাঁরা ছিলেন নুহ নবির উত্তরসূরী। তারা আর্যাবর্ত্যরে বাইরে বাঙলা মুল্লুকে স্বাধীন দেশটি প্রতিষ্ঠা করেন। দিগ্বিজয়ী বাদশাহ আলেকজান্ডার গঙ্গারিডির প্রবল প্রতিপত্তির কথা জেনে বাঙলা বিজয়ের দুরাশা ত্যাগ করে স্বদেশে ফিরে যান।
মোদকলিঙ্গ
গঙ্গার মোহনায় মোদকলিঙ্গ নামে একটি দ্বীপ ছিলো। সেখানে মোলঙ্গীদের (লবণের সওদাগর) আবাস ছিলো। গৌরনদী উপজেলার মেদাকুল গ্রাম প্রাচীনকালের মোদকলিঙ্গ এর পরিবর্তিত নাম।
নাব্য
শিলালিপিতে প্রাচীন বাঙলার দুটি ভাগের উল্লেখ পাওয়া যায়। বিক্রমপুর ও নাব্য। বিক্রমপুর স্বমহিমায় ভাস্বর। মুন্সিগঞ্জ জেলাই অতীত বাঙলার রাজধানী বিক্রমপুর। বরিশালে পানিবহুল নিম্নভূমির নাম ছিলো নাব্য। খাল, বিল, পুকুর, জলাশয়, নদ-নদীর পূণ্যভূমি বরিশাল। নৌকা বা কিস্তিই ছিলো বাকলা অঞ্চলে যাতায়াতের প্রধান উপায়। তাই এ মুল্লুকের পরিচিতি নাব্য হিসেবে। উল্লেখ্য ফরিদপুরও ছিলো নাব্যভূক্ত। পাল ও সেন আমলে বরিশাল অঞ্চলের প্রশাসনিক নাম ছিলো নাব্যাঞ্চল বা নাব্যমণ্ডল।
বাগড়ি
দক্ষিণ বাঙলা তথা নাব্যাঞ্চলের আরেক নাম ছিলো বাগদি। পুরাকালে পুরো বরিশাল অঞ্চল ছিলো সুন্দরবনে আবৃত। স্বাপদসঙ্কুল অভয়ারণ্যে বাঘের বাস ছিলো প্রচুর। বর্তমানে রয়েল বেঙ্গল টাইগার নামে যার আন্তর্জাতিক পরিচিতি। বাঘের সংখ্যাধিক্য থাকায় এ অঞ্চলকে বাগড়ি বা বাগদি বলা হতো।
বাঙালাবাদ
গৌরনদী উপজেলার বাঙ্গালা গ্রামটি ও বাঙালাবাদ অভিন্ন বলে কেউ কেউ মত প্রকাশ করেছেন। এ অঞ্চলে বাঙ জাতি বাস করত। তাদের নামানুসারেই বাঙালা বা বাঙালাবাদ নামকরণ। উল্লেখ্য, বাঙ জাতি হলো হযরত নুহ নবির প্রোপৌত্র বঙের সম্প্রদায়। নবি নন্দন বঙ নৌকায় চড়ে এতদাঞ্চলে এসে বসতি গড়েন। নবি ওয়ারিশ বঙ থেকে বঙ্গ, বাংলা, বঙ্গাল, বাঙ্গাল, বাঙালা ও বাংলাদেশ নামকরণ। তাই বাংলাদেশ নামটির সাথে নুহ নবির সংশ্লেষ গভীর। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রতীক নৌকা। নৌবিজ্ঞান বা জাহাজশিল্পের জনক হলেন নুহ নবি। আবার ভূতপূর্বকালে বাংলাদেশে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিলো নৌকা। ত্রিভূজাকার মিলন।
শাহবাজপুর
বাদশাহ আকবরের সেনাপতি শাহবাজ খাঁ বারো ভুঁইয়া নেতা ঈসা খাঁকে পরাভূত করার জন্য ভাটি অঞ্চলে আসেন। তিনি সরকার বাকলার উত্তর অংশ দখল করেন। তাঁর নামে এ অঞ্চলের নামকরণ হয়। শাহবাজপুর তখন দুই অংশে বিভক্ত ছিলো। উত্তর অংশভূক্ত ছিলো হিজলা-মেহিন্দিগঞ্জ আর দক্ষিণ শাহবাজপুর ছিলো বোরহানউদ্দিন, দৌলত খাঁ, তজুমদ্দিন অর্থাৎ ভোলা জেলা। তেঁতুলিয়া ও ইলিশা নদী শাহবাজপুরকে দুই ভাগে বিভক্ত করে। হাতিয়াও তখন দক্ষিণ শাহবাজপুরের অন্তর্ভুক্ত ছিলো।
কচুয়া
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায়। এখানেই প্রাচীন রাজ্যের রাজধানী ছিলো। অনেকের মতে, বাকলা ও কচুয়া নামের লিপ্যান্তর মাত্র। এখানকার পুরাকীর্তি নদী ও সাগরের আগ্রাসনে বিলুপ্ত।
বারৈকরন
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায়। বাকেরগঞ্জ জেলা সদর দফতর প্রথমে বারৈকরনে স্থাপিত হয় ওয়ারেন হেস্টিংসের আমলে। বারৈকরন তখন এতদাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র। বারৈকরন থেকে ১৭৯২ সালে বাকেরগঞ্জে সরকারি অফিসাদি স্থানান্তর করা হয়। তখন স্থানীয় ইংরেজ শাসনকর্তা ছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট মিডলটন।
ভেনিস
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯২২ সালে বরিশাল সফরে আসেন শেরে বাংলার সাথে। বরিশাল ছিলো খালের শহর। এই শহরে প্রবাহিত হতো ৪৬টি খাল। জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো খাল, নালা। শয়ে শয়ে পুকুর পরিবেশিক ঠাণ্ডা বয়ে আনত। অগুনতি খালের সমাবেশ দেখে মহাকবি নজরুল একে আখ্যায়িত করেন প্রাচ্যের ভেনিস। দুনিয়ার সবথেকে সুন্দর শহর ইতালির ভেনিস। বরিশালকে তুলনা করে জাতীয় কবি সঠিক কাজটিই করেছেন।
বাকেরগঞ্জ
বুজুর্গ উমেদপুরের জমিদার আগা বাকের খান ১৭৪১ সালে নিজ নামে নামে গঞ্জ প্রতিষ্ঠা করেন, যার নাম বাকেরগঞ্জ। কোম্পানি আমলে ১৭৯৭ সালে বাকেরগঞ্জ জেলা কায়েম হয়। ১৮০১ সালে জেলা সদর বাকেরগঞ্জ হতে বরিশালে স্থানান্তর হয়। বাকেরগঞ্জ জেলা নামটি ১৭৯৭ থেকে ১৯৯৩ সাল তক ছিলো। ১৯৯৩ সালে বরিশাল বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হলে বাকেরগঞ্জ নামটি বাদ দেওয়া হয়। নামটি কেবল বাকেরগঞ্জ উপজেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। বর্তমান বাকেরগঞ্জ উপজেলা শহরটিই ছিলো আগা বাকেরের প্রশাসনিক রাজধানী।
সরকার বাজুহা
আইন-ই-আকবরি গ্রন্থে দেখতে পাওয়া যায়, এই পরগনা সরকার বাজুহা অর্থাৎ সংরক্ষিত বন ছিলো। তৎকালে অধিকাংশ জায়গা নিবিড় অরণ্যানীতে পূর্ণ ছিলো। ‘ভীষণ স্বাপদকূল ভীমগর্জনে দিগদিগন্ত কম্পিত করে দিবাভাগেই শিকারানুসন্ধানে নির্ভয়ে বিচরণ করত। এই স্থান হতে প্রকা- প্রকা- বৃক্ষাদি ছেদিত হয়ে দিল্লিতে রাজ দরবারে প্রেরিত হতো।’ বুজুর্গ উমেদ খাঁর আমলে জঙ্গলাকীর্ণ জায়গা পরিস্কৃত হয়ে লোকালয়ে পরিণত হয়।
বারকোরা
আদিযুগে বাঙকোরা বা বারকোরা বরিশাল-পটুয়াখালী দ্বীপাঞ্চল নিয়ে গঠিত ছিলো। প্রাচীন মিশরীয় গণিতবিদ, ভূগোলবিদ, জ্যোতির্বিদ ক্লডিয়াস টলেমি ইসায়িপূর্ব দ্বিতীয় অব্দে বাঙালাকে নিজের ভাষায় বারাকোরা উচ্চারণ করেছেন।
তথ্যসূত্র:
১. সিরাজ উদদীন আহমেদ, বরিশাল বিভাগের ইতিহাস, ২. আজিজুল হক বান্না, বরিশালে ইসলাম, ৩. এ. এফ. এম আব্দুল জলীল, সুন্দরবনের ইতিহাস, ৪. আখতার ফারুক, বাংগালীর ইতিকথা, ৫. গোলাম হোসেন সলীম, রিয়াজুস সালাতিন, ৬. রোহণীকুমার সেন, বাকলা, ৭. খোসালচন্দ্র রায়, বাকেরগঞ্জের ইতিহাস, ৮. বৃন্দাবন চন্দ্র পূততূ-, চন্দ্রদ্বীপের ইতিহাস, ৯. ড. মোহাম্মদ হাননান, বাঙালির ইতিহাস, ১০. ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, বরিশালের ইতিহাস, ১১. কাজী নজরুল ইসলাম, মৃতুক্ষুধা, ১২. শ্রী রমেশচন্দ্র মজুমদার, বাংলা দেশের ইতিহাস প্রথম খ-, ১৩. ড. এম এ রহিম, বাংলাদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস, ১৪. মোহাম্মাদ আবদুল মান্নান, মুক্তি সংগ্রামের মূলধারা
ধন্যবাদ
চমৎকার তথ্য