মোঃ রিসালাত মীরবহর।।
চারদিকে কেবল অশান্তি। মনের কোথাও যেন কোন তৃপ্তি নেই। মনে হয় সুখের পায়রাটা বহু আগেই পালিয়ে গেছে হৃদয় নামক খাঁচা থেকে। ধরণীর বুকে নিরানন্দ এক আত্মা নিয়ে বেঁচে আছি আমরা। এই যখন অবস্থা তখন ধরে নিবেন আপনার মধ্যে আত্মতৃপ্তি বলে কিছু নেই। একটি সবুজ বৃক্ষের বেঁচে থাকার জন্য যেমন আলো, বাতাস আর পানির প্রয়োজন ঠিক তেমনি মানুষের সুখে থাকার জন্য আত্মতৃপ্তিটা খুব বেশি প্রয়োজন।
দেখুন পৃথিবীতে এমন মানুষ খুজে পাওয়া বেশ মুসকিল যে কিনা সুখে থাকতে চায়না। প্রত্যেক মানুষই চায় সুখ নামক অচীন পাখিকে মনের মনিকোঠায় ধরে রাখতে। কিন্তু আশ্চর্য্য হলেও একথা সত্য যে, সুখ আমাদের হৃদয়ে বাসা না বেধে বাসা বাধে কল্পনাতে। যা আমরা উপভোগ করতে পারি না বা ব্যর্থ হই। পৃথিবীটা অনেক সুন্দর বলেই ক্ষণস্থায়ী এ জীবনে সবাই সুখের নাগাল পেতে চায়। কিন্তু বর্তমান জীবন ধারার আমূল পরিবর্তন হওয়ার কারণে এ চিন্তাটা বোধয় নিজের মনের অযাচীত কল্পনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে হয়।
মানুষ বেঁচে থাকার লড়াইয়ে এতোটাই ব্যস্ত যে, সুখে থাকার চিন্তাটা কল্পনাতেই ধরে রাখতে বাধ্য হয়। হয়তো সুখে থাকার বিষয়টিকে আমরা অনেক কঠিন করে চিন্তা করি। ফলে এটা আমাদের ধরা ছোয়ার বাইরে অবস্থান করে। আপনি যদি আপনার মনে সুখটাকে সহজ করে ভাবতে পারেন তবে সেটা উপভোগ করা কঠিন কিছু না। শুধু মনের ভাবনায় আত্মতৃপ্তি উপলব্ধি করতে পারলে সেটা আপনার হৃদয়ে সুখের নাগাল এনে দিতে পারে। মানুষ যখন তার চাহিদা একটির পর একটি পূরণে সমর্থ্য হয় তখন সে নতুন কিছু প্রত্যাশা করে। যা আগের চেয়েও সুন্দর ও ভালো হওয়া চাই। এই চাওয়াটাই স্বাভাবিক, অন্যায় কিছু না। তবে প্রয়োজন যখন সীমা ছাড়িয়ে যায় তখন সেটা আসক্তি হয়ে দাড়ায়। অর্থাৎ আমাদের চাওয়া যদি যথাযথভাবে সন্তুষ্টি অর্জন করতে না পারে তখন আমাদের হৃদয় অশান্ত হয়ে ওঠে। ফলে আমরা আমাদের জীবনে নিরানন্দ হৃদয়ের অস্তিত্ব খুজে পাই। যা আমাদের হতাশাকে বহুগুনে বাড়িয়ে দেয়।
দেখুন আমরা আমাদের জীবীকা নির্বাহের জন্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে কাজের মাধ্যমে খুশি রাখার চেষ্টা করি। কারণ আমরা জানি কর্মকর্তাকে খুশি রাখার এই পদ্ধতির মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে আমাদের বেতন বৃদ্ধি, চাকুরির স্থায়ীত্ব ও প্রমোশন নির্ভর করে অনেক ক্ষেত্রে। যা আমাদের জীবিকা নির্বাহের সাথে সরাসরি জড়িত। কিন্তু দেখুন মহান আল্লাহ আমাদের শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্য। বিনিময়ে তিনি আমাদের দিয়েছেন অসংখ্য নিয়ামত। কিন্তু আমরা কি এটা কখনো করি যে মহান আল্লাহ আমাদের এতো সুন্দর পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, এতো সুন্দর নিয়ামত দান করেছেন তার প্রতি অতি আনন্দের সহিত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি কিবাং শুকরিয়া আদায় করি। হয়তো অনেকেই করি আবার অনেকেই আছি করিনা। সবাই না তবে আমরা অনেকেই আছি যারা সবসময় মুখ ফোসকে বলে ফেলি- এটা পেলাম না, ইস একটুর জন্য হলো না, কিছু কিনে আনলে বলি নাহ্ এটার রং ভালো হয়নি, তো এটা দেখতে ভালো হবে না, কিছু খেতে গেলাম নাহ্ খাবারটা ভালো হয়নি আরেকটু ভালো হতে পারতো। ইস্ আর একটুর জন্য রেজাল্টটা ভালো হলো না, আরেকটু লিখলে হয়তো আরেকটু ভালো করতাম। আহ্ একটুর জন্য প্রমোশনটা পেলাম না, এতো কষ্ট করলাম এতো খুশি করলাম স্যার কে তারপরও হলো না। যদি আর কিছু টাকা হতো তবে আরেকটু বড়সর ফ্লাট কিনতে পারতাম। এই যে পেলাম না, হলো না এটা আমাদের নির্দিষ্ট প্রত্যাশাকে বাধাগ্রস্থ করছে। যা আমাদের মনের সন্তুষ্টিকে কেড়ে নিয়ে নিরানন্দ একটি জীবন উপভোগ করতে বেশ সহায়তা করে।
ফলে আমাদের মধ্যে হতাশা বৃদ্ধি পায়। আর আপনি জেনে অবাক হবেন যে, আজ পর্যন্ত হতাশ হয়ে কেউ সুখী হতে পারেনি। তাহলে আমরা করবো টা কি? মনের শান্তির জন্য কিবাং সুখে থাকার জন্য আমাদের করনীয় কি? কি করলে আমরা আত্মতৃপ্তিতে অতি আনন্দময় জীবন উপভোগ করতে পারবো। সেক্ষেত্রে কিছু বিষয় যদি আমরা বর্জন করে চলতে পারি তবে হয়তো সুখে থাকার জন্য আমাদের আর কল্পনা করতে হবেনা। বরং সেটা বাস্তবেই ধরা দিতে পারে। ফলে আমরা তা সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারবো। যেমন- লোভ, হিংসা, অহংকার, মিথ্যা কথা বলা, অন্যকে অনর্থক কষ্ট দেওয়া, কাউকে ঠকানো, কারও পিছনে অযথা সমালোচনা করা, কাউকে আঘাত করা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকার মধ্যে দিয়ে আমরা আমাদের জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারি।
আত্মতৃপ্তি এমন একটি বিষয় যা আপনার অশান্ত হৃদয়কে শান্ত করার জন্য যথেষ্ট। অর্থাৎ আপনি যা পেলেন সেটা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকুন। একটি বিষয় সবসময় খেয়াল রাখবেন, শুকরিয়া কিংবা সন্তুষ্টি আদায় করা এমন এক নিয়ামত যা আপনার হৃদয়কে প্রশান্তিতে ভরে দিতে পুরোপুরি সক্ষম। এজন্য নিজের মধ্যে আত্মতৃপ্তির সৃষ্টি করতে হবে। আপনি যদি এমন অভ্যাস করেন যাতে আপনি অল্পতেই সন্তুষ্ট কিংবা খুশি, তবে আপনার মন অল্পতেই আনন্দিত হবে। আর তাতে আপনি নিজের হৃদয়ে সুখ অনুভব করতে পারবেন।
আমরা সুখটাকে অনেক দূরের মনে করি। আসলে সুখ খুবই কাছের। কেবলমাত্র সেটা উপভোগ করতে জানতে হয়। কেউ সারাজীবনে অঢেল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েও মনে সুখ অনুভব করতে সক্ষম হয়না। আবার কেউ নদীর ওপর সারাজীবন ভেসে থেকেও আত্মতৃপ্তিতে ভোগে। কারণ তার কাছে গভীর রাতের স্নীগ্ধময় জোৎস্না রাত স্বপ্নের মতো নয় বরং বাস্তবতা। কেননা সে প্রতিদিন ইচ্ছে করলেই চোখের সামনে রাতের খোলা আকাশের মনোমুগ্ধকর চিত্রটা উপভোগ করতে পারে। দেখতে পায় রূপালী আলোয় নদীর ঢেউয়ের অপরূপ সৌন্দর্য্য, শুনতে পায় বাতাসের গুনগুন শব্দ, মাঝির গলায় রাতের সেই ভাটিয়ালি গানের তালে মাছ ধরার অনন্য সুন্দর দৃশ্য। এই আত্মতৃপ্তি যেমন মানুষের মনে প্রশান্তি দেয়, তেমনি প্রকৃতি মানুষকে সুন্দরভাবে বাঁচতে শেখায়।
যে মানুষটি অতৃপ্ততায় ভোগে সে প্রকৃতির মাঝে থেকেও প্রকৃতিকে উপভোগ করতে সক্ষম হয় না। কাজেই আমাদের মধ্যে আত্মতৃপ্তি বা সন্তুষ্টি তৈরি করতে হবে আমাদের সুখে থাকার জন্যই। আমরা যেন সবসময় মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করি। তাহলেই তিনি খুশি হয়ে আমাদের মধ্যে অনুরূপভাবে প্রশান্তি দিবেন। ফলে হতাশা আমাদের মনের মধ্যে কখনো অশান্তির সৃষ্টি করতে পারবে না। আর তাই সুখে থাকা আমাদের জন্য সহজ হয়ে উঠবে।
মোঃ রিসালাত মীরবহর
বরিশাল সদর, বরিশাল।
সুন্দর লেখা