মুক্তবুলি প্রতিবেদক ।।
করোনার ধাক্কা সামলানোর পরপরই সাধারণ মানুষ যখন আবার স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চিন্তা করছে তখনই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি পর্যায়ক্রমে মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। এর লাগাম কোনভাবেই একই জায়গায় আঁটকে রাখা যাচ্ছে না। এর প্রভাব পড়ছে ক্ষেতখামার, কলকারখানায় খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণি সহ সকল পেশাজীবি মানুষ পর্যন্ত।
বর্তমানে চিকন-মোটাচাল ভেদে দাম বেড়েছে ৩০-৩৪ শতাংশ, পেঁয়াজের দাম বেড়েছে দেশি আমদানিভেদে ৬৬-৬৭ শতাংশ, সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ৭৬ দশমিক ৮২ শতাংশ, আটার দাম বেড়েছে ৪২ দশমিক ৮৫ শতাংশ, চিনির দাম বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ, ডিমের দাম বেড়েছে ৩৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ, গরুর মাংসের দাম বেড়েছে ১৯ দশমিক ২৩ শতাংশ পর্যন্ত। এসব পণ্য ছাড়াও মাস, মাংস, সবজি, মসলাসহ প্রায় সবরকম নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আগের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু খাদ্য দ্রব্য নয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন জ্বালানি তেল, গ্যাস, পানি সহ বিদ্যুৎ ও পরিবহণ সেবার মূল্যও উর্ধ্বমূখী, এর পাশাপাশি সন্তানদের লেখাপাড়ার খরচ একই সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে আগের তুলনায় দ্বিগুন।
মরার উপর খড়ার ঘাঁ হিসেবে আর বেশি ভোগান্তিতে রয়েছে বরিশাল অঞ্চলের জন জীবন। বরিশাল যেহেতু নদী বেষ্টিত এলাকা এখানে বছরের ৬ মাস চাষাবাদ হয় বাকি ছয় মাস চাষাবাদ হয় না বললেই চলে। তাই এই অঞ্চলের অধিকাংশ সময় নিত্য প্রয়োজনীয় ফসল যেমন: কুমড়া, ফুলকপি, বাধাঁকপি, লাউ, গাজর, শালগম, শিম, টমেটো, পেঁপে, চাল ইত্যাদি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আমাদানী করতে হয়। তাই দ্রব্যমূল্য অন্য জায়গার তুলনায় এই এলাকায় তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। নদী বেষ্টিত এলাকা হওয়ায় এখানে বিভিন্ন জায়গায় ব্রিজের টোল থাকার কারণে যাতায়াত ভাড়াও বেশি, শুধু বাস কিংবা নৌপথ নয় স্থানীয় পর্যায় রিক্সা, সিএনজি সহ অন্যান্য যানবাহনের ভাড়া অন্য জায়গার তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়া যাতায়াতে অনেক সময় ব্যয় করে কাজ সম্পন্ন করতে হয়।
বরিশালে বাড়ি ভাড়াও ঢাকা বাদে অন্যান্য জেলা বা বিভাগের তুলনায় অত্যাধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। বরিশালে বর্তমানে প্রত্যেকটি পন্যের বাজারদর যে অবস্থা তা মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে যা প্রত্যেকটি মানুষের নাভিশ্বাস হয়ে উঠছে।
এছাড়া অন্যান্য বিভাগীয় এলাকায় যেভাবে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রের সুযোগ রয়েছে এ অঞ্চলে তেমন কোন কলকারখানা বা শিল্প নগরী নেই, যদি থাকত তাহলে একই পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা চাকুরির সুযোগ তৈরি করে তাদের চাহিদা পূরণ করতে পারত। যেহেতু এরকম সুযোগ কম তাই সাধারণ মানুষের বিশেষ দাবি- স্থানীয় প্রশাসন বা ভোক্তা অধিকার বাজার নজরদারী করে কিভাবে সকল পণ্য ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ন্ত্রণ রাখা যায় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হোক ।