
পর্ব ২
মুহাম্মাদ আবদুল মাননান
এ কথা শুনে রাসূল (সা.) এর হাসি-খুশি মুখখানি মলিন হয়ে গলে। তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তির হৃদয়ে মায়া নাই আল্লাহ যেন তাকে দয়া করেন।’ (মুসলিম) রাসূল (সা.) কখনো শিশুদের ওপর রাগ করতেন না । চোখ রাঙাতেন না। কর্কশ ভাষায় তাদের সাথে কথা বলতেন না। তিনি ছোটদের আদর করে কাছে বসাতেন। তাদের সাথে মজার মজার কথা বলতেন। ছোটদেরকে দেখলে আনন্দে নবিজির বুক ভরে যেত। তিনি তাদের বুকে জড়িয়ে ধরতেন। একদিন একটি সুন্দর শিশুকে দেখে তিনি জড়িয়ে ধরলেন। বললেন, ‘এই শিশুরাইতো আল্লাহর বাগানের ফুল।’ তিনি কখনো কোন শিশুকে বিকৃত নামে ডাকতেন না। তিনি তাদের অর্থবোধক নাম রাখতেন এবং মিষ্টি সুরে সুন্দর নাম ধরে ডাকতেন । একবার আবিসিনিয়া থেকে একদল সাহাবা মদিনায় তশরিফ আনলেন। তাদের সাথে পরিবার-পরিজন ও ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরাও ছিলো। মহানবি (সা:) সমাগত ছেলেমেয়েদের সাথে একেবারে মিশে গেলেন। তাদের সাথে খেলাধূলা করলেন, এমনকি তাদের ভাষায় কথা বলারও চেষ্টা করলেন। এভাবে কচিকাঁচা শিশু-কিশোরদের নানা আদর-যত্ন ও মিষ্টি কথার্বাতায় তিনি তাদের মন জয় করতেন। প্রিয়নবি শিশুদের যেমন আদর করতেন, তেমনি আবার তাদের সাথে রসিকতাও করতেন। একবার আনাস (রা:) এর ছোটো এক ভাইয়ের একটি পাখি মারা যায়। এতে তার মন খারাপ হয়। নবিজি তখন তাকে আদর করে কাছে ডেকে নিলেন। বললেন,
‘ইয়া আবা উমায়েরু
মা কা-আলান নুগায়রু ?’
অর্থাৎ হে আবু উমায়রে, তোমার পাখির ছানাটার কি হলো? তখন নবিজির মুখে ছন্দ ও সুর শুনে শিশুটি হেসে ফেললো।(বুখারী ও মুসলিম)।
অপর এক ঘটনা। একদিন এক মহিলা তার ছেলের হাতে কিছু আঙ্গুর ফল দিয়ে বললেন, নবিজিকে দিয়ে আস। ছেলেটি আঙ্গুর ফলগুলো নবিজির কাছে না এনে নিজেই সব খেয়ে ফেললো। নবিজি বিয়য়টা জানতে পারলেন। তিনি শিশুটিকে আদর করে কোলে তুলে নিলেন। তারপর বললেন,
‘কি হে দেখি বলো
মায়ের দেয়া আঙ্গুরগুলো
কোথায় হারিয়ে গেল।’
রাসূল (সা.) শিশুমনের অভিব্যক্তি বুঝতে পারতেন। তাদের চাওয়া-পাওয়া মান অভিমান সবই আপন করে নিতে পারতেন। তাই শিশুরাও একাকার হয়ে যেত নবিজির ভালোবাসায়।
চার পর্বে খতম
লেখক :
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও ব্যাংকার
Muktobuli | মুক্তবুলি Muktobuli is the most popular online blog to publish the rare news.
