জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ : পর্ব ৬

 

 

বর্তমান দুনিয়ার একটা প্রধান মুসিবত জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ। মনুষ্যত্ব, মানবতা ও মানবাধিকারের ভিত্তিমূল দুর্বল হয়ে পড়েছে জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের আগ্রাসনে। আতঙ্ক, বিপর্যস্ত শান্তিকামী মানুষেরা। কম্পন সৃষ্টি হয়েছে বিবেকবান নাগরিকদের হৃদয়ে। আর অট্টহাসি হাসছে ইবলিসের প্রেতাত্মা এর ক্রীড়নকরা। কিন্তু কে এর কলকাঠী নাড়ছে? কী এদের পরিচয়? কারা এর পশ্চাতে জড়িত? কারা এখানে বিনিয়োগ করছে? কারা জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে? কাদের আশ্রয়-মদদে এরা ত্রাস করছে? তাদের মুখোশ উন্মোচন করাই এই প্রবন্ধের মূখ্য উদ্দেশ্য। ভারতীয় আর্যহিন্দুদের অতীত ও বর্তমান পর্যালোচনা করলেই বিশ্বজুড়ে সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদের রহস্য বেড়িয়ে আসবে।

ভারতীয় চিন্তাবিদ, গবেষক শেখ নাসীর আহমদ বলেন, ‘আর্যরা এসেছিল এক যাযাবর জাতি হিসেবে। তারা এদেশের অনার্য সভ্যতাকে ধ্বংস করে। তাদের সর্বপ্রকার মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। তাদের মানবেতর দাসের জীবন গ্রহণ করতে বাধ্য করে। দেশিয় জনসাধারণ আত্মোন্নতির সর্বপ্রকার সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। মিঃ শেঠী লিখেছেন, ব্রাহ্মণ্যবাদ উত্তর ভারতের সবকিছুকেই ধ্বংস করেছি।’ আর্যরা অনার্যদের তাদের দেবভাষা সংস্কৃত লিখতে পড়তেও দেয়নি। ‘এভাবেই ব্রাহ্মণ্যবাদ সব সৃজনী প্রতিভাকে ধ্বংস করেছে।’ ১

Related image

রামায়ণে জঙ্গি সন্ত্রাস

রামায়ণ রচনা করেন কবি বাল্মীকি প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে। রাম-রাবনের যুদ্ধ কাহিনী নিয়ে এ গ্রন্থ। আর্য নেতা রামের স্ত্রী সীতাকে রাবন অপহরণ করায় তাকে উদ্ধার করার জন্য সংঘটিত হয় রক্তক্ষয়ী জঙ্গি যুদ্ধ। এই লড়াইয়ে রাম এর হাতে নিহত হয় দ-কবনে খর, দূষণ, ত্রিশিরা এবং ১৪ হাজার রাক্ষস ২। ৬৭ কোটি বানর ব্রাহ্মাস্ত্রের আঘাতে নিহত হয়।৩ রামায়ণে যাদের বানর ও রাক্ষস আখ্যা দেয়া হয়েছে, তারা ভারতের প্রাগার্য জাতিসমূহ ব্যতীত আর কেউই নয়। বালী, সুগ্রীব প্রভৃতিকে বানর বলাও বাল্মীকির কল্পনাপ্রসূত। কেননা তাদের পিতা সুষেণই ছিলো সে যুগের একজন সুদক্ষ শল্য চিকিৎসক।৪ অতএব এ সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে যারা নিহত হয় তারা সবাই ছিলো আমাদের মতই রক্তগোশতের মানুষ।

ব্রাহ্মণ্য প্রতিক্রিয়ায় বৌদ্ধ-বিপ্লব যখন পর্যুদস্ত হয়ে গেল আর তাতেই হলো ভারতের সমাজে বিশৃঙ্খলার উৎপত্তি।৫ শ্রী ভারতীয় গবেষক সুরজিৎ দাশগুপ্তের ভাষায়, পঞ্চম শতাব্দি নাগাদ বৌদ্ধধর্মকে (কেরল থেকে) সম্পূর্ণ উৎখাত করে ব্রাহ্মন্য ধর্মই সর্বশক্তিমান হয়ে ওঠে ও সমাজের সর্বস্তরে তার কঠোর বিধান শাসনকে অমোঘরূপে প্রতিষ্ঠা করে। এই ব্রাহ্মন্য ধর্মের মধ্যে উচ্চ আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে মিশে গিয়েছিল জনসাধারণের বৃহত্তর অংশকে অপমান, ঘৃণা, পীড়ন ও শোষণ করার সামাজিক সমর্থন-প্রকৃতপক্ষে আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে বিস্ময়কর অগ্রগামিতা ও উদারতা এবং ব্যবহারিক ক্ষেত্রে বিচিত্রতর প্রতিক্রিয়াশীলতা ও সঙ্কীর্ণতা ব্রাহ্মণ্য ধর্মের অন্তর্নিহিত বিরোধ।৬

তথ্যপঞ্জি :

১. উদ্বৃতি: ড. মুহাম্মাদ সিদ্দিক: ভারতের নির্মম গণহত্যা, আধুনিক প্রকাশনী, বাংলাবাজার ঢাকা-১১০০, পৃ ৫৩৪
২. রাজশেখর বসু অনূদিত, বাল্মীকি রামায়ণ, নবযুগ প্রকাশনী, বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০, পঞ্চম মুদ্রণ, জুলাই ২০১৪, যুদ্ধকাণ্ডের ২১/সর্গ ৭৮-৭৯, পৃ ২৫১
৩. রাজশেখর বসু অনূদিত, বাল্মীকি রামায়ণ, যুদ্ধকাণ্ড- ১৯/সর্গ ৭৪, পৃ ২৪৮
৪. ড. অতুল সুর: হিন্দু সভ্যতার বনিয়াদ, কলিকাতা ৯, প্রথম প্রকাশ জুন ১৯৯১, পৃ ৬
৫. এম এন রায়: ইসলামের ঐতিহাসিক অবদান, (তরযমা-আবদুল হাই), মল্লিক ব্রাদার্স, ৫৫ কলেজ স্ট্রিট, কলিকাতা, পৃ ৮৭
৬. সুরজিৎ দাশগুপ্ত: ভারতবর্ষ ও ইসলাম, সাহিত্য প্রকাশ, ঢাকা-১০০০, প্রথম বাংলাদেশ মুদ্রণ, ফেব্রুয়ারি ২০১৪, পৃ ১৪১

চলবে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *