আজকের শিশু আগামী দিনের কর্ণধার এবং আমাদের দায়িত্ব

মুহাম্মাদ আবদূল মাননান

‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে।’ শুধু শিশুর পিতাই নয় শিশুর অন্তরে ঘুমিয়ে আছে গোটা জাতি। আগামী দিনে দেশ-জাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে জাতি তাকিয়ে আছে দেশের কোমলমতি শিশুর অন্তরে। আজকের নবীন প্রজন্ম আগামী দিনের সোনালি ভবিষ্যত। জাতির আগামী দিনের স্থপতি। প্রতিটি পরিবারেই সন্তানদের আদর্শ ও উত্তম নাগরিক গঠনের মাধ্যমে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের উদ্দেশ্যে যে নৈতিক ও অহিভিত্তিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষনের প্রয়োজন সে সম্পর্কিত পিতা-মাতার দায়িত্ব ও কর্তব্য অত্যাধিক। অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে মনে রাখা দরকার বাড়ন্ত বয়সের শিশু সন্তানের মন মানসিকতা চিন্তা ও ধ্যান ধারণা অনেকটা কাদা মাটির মতো। যে পরিবেশে এবং যে সমাজ সংস্কৃতিতে তাদের গড়ে তোলা হবে সেভাবেই তারা গড়ে উঠবে। সেই ভবিষ্যত কর্ণধারেরা কেমন হবে তা নির্ভর করে আমরা শিশু সন্তানকে কীভাবে গড়ে তুলছি তার ওপরে। যদি শিশুর পরিচালনা হয় নৈতিকতার পথে তাহলে আগামী দিনে আমাদের ভবিষ্যত হবে কল্যাণময়। নৈতিকতার উল্টো হলে ফলটাও উল্টো হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। পিতা-মাতা হলেন সন্তানের প্রথম অভিভাবক, প্রথম শিক্ষক। আর পরিবার তার প্রথম বিদ্যালয়। যদি এ বিদ্যালয় থেকে ভালো কিছু শিক্ষা গ্রহণ করে, তাহলে সন্তানের ভবিষ্যৎ হবে উজ্জ্বল এবং সুন্দর। তাই এক্ষেত্রে পিতা-মাতাকে উন্নত ভূমিকা রাখতে হবে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বসবাসের মধ্য দিয়েই শিশুরা মানুষের সঙ্গে পারস্পরিক আচার-ব্যবহার, সম্পর্ক স্থাপন ও পরিচয় লাভ করতে শুরু করে। এ জন্য পরিবারের প্রধান দুজন সদস্য বাবা-মায়ের ভূমিকা তাই অপরিসীম। সন্তান পিতা-মাতার অতিশয় প্রিয়জন। তারা বাবা-মায়ের প্রতি অনুগত ও বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে এটাই স্বাভাবিক। শিশুরা খুবই অনুকরণপ্রিয়; তারা যা শোনে, যা দেখে, তা-ই বলে ও করে। তাদের সামনে অশোভনীয় কিছু বলা বা করা মোটেই সমীচীন নয়। তাদের স্নেহ, আদর ও সুন্দর আচরণ শেখানো জরুরি। এতে তারা আদব-কায়দা ও ভালো কথা বলতে শিখবে। রসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেন, ‘যে ছোটকে স্নেহ-মমতা করে না এবং বড়কে শ্রদ্ধা করে না সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (বুখারি, তিরমিযি)।

Image result for শিশুদের ছবি

সন্তান প্রতিপালনে বর্তমানে অধিকাংশ বাবা-মায়ের ক্ষেত্রে চরম উদাসীনতা লক্ষ্য করা যায়, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। পিতা-মাতার অবহেলায় অধিকাংশ সন্তান অকালে ঝরে পড়ে। অংকুরেই বিনষ্ট হয়ে যায় তাদের জীবনবৃক্ষ। সঠিক দেখভালের অভাবে শিশুরা একাকীত্ব অনুভব করে। তাই শিশু বয়সেই ওদের চিন্তা, ভাবনা এবং মানসিক অনুভব খারাপ দিকে মোড় নিতে থাকে। পারিবারিকভাবে আমাদের সন্তানদের ওপর যে দায়িত্ব পালন করা দরকার আমরা সে দায়িত্ব পালনের বিষয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অবহেলা প্রদর্শন করে থাকি। অনেক পরিবারের স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই চাকরি করেন। তাই সন্তানের খোঁজ নেওয়ার মতো তাদের কাছে কোনো সময় থাকে না। যার ফলে ধীরে ধীরে সেই আদরের সন্তানটিই হয়তো কোনো খারাপ সঙ্গী জুটিয়ে নেয় কিংবা খারাপ মানুষের সঙ্গে মিশে খারাপ পথে চলে যায়।

Image result for শিশুদের ছবি

মনে রাখা দরকার ছেলেমেয়েরা মানুষ হওয়াই বাবা-মায়ের জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিদান। তাই পিতা-মাতার দায়িত্ব হচ্ছে তাদের লালন-পালন করা, তাদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা। সৎ, বিনয়ী ও নিষ্ঠাবান আদর্শ সন্তান আল্লাহর পক্ষ থেকে নেয়ামত ও রহমত স্বরূপ। একজন আদর্শবান নেককার সন্তানের জন্যে সমাজ-রাষ্ট্রের নিকট পিতামাতার সুনাম সুখ্যাতি প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায়। অপরদিকে অসৎ চরিত্রের দুষ্টু লোভী প্রতারক বখাটে ও মাদকাসক্ত সন্তানের জন্যে সমাজ রাষ্ট্রের নিকট পিতামাতাকে হেয় প্রতিপন্ন, অপদস্ত ও অপমানিত হতে হয়।

মহানবি (স:)বলেন, ‘সন্তানের জন্য পিতা-মাতার ভালো আদব-শিষ্টাচার শিক্ষা দান অপেক্ষা উত্তম কোন উপহার নেই।’ (তিরমিযি)। পারিবারিক শান্তি, সম্প্রীতি ও সৌহার্দপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার জন্যে আল্লাহর নিকট নেক সন্তান প্রার্থনা করতে হবে। আল্লাহ বলেন ‘হে আমার প্রভু, আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করো, যারা হবে আমাদের জন্য নয়ন শীতলকারী এবং আমাদের করো মুমিন-মুত্তাকিদের জন্য অনুসরণযোগ্য নেতা।'(আল ফোরকান: আয়াত ৭৪)। আল্লাহর শিখিয়ে দেওয়া আরও একটি প্রার্থনা_ ‘হে আমার প্রভু, তুমি তোমার কাছ থেকে আমাকে পবিত্র সন্তান দান করো। অবশ্যই তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী।'(আল ইমরান, আয়াত :৩৮)

Image result for শিশুদের ছবি

মনে রাখতে হবে দুনিয়ায় আমাদের প্রতিটি কর্ম আখিরাত তথা মৃত্যুর পরের জীবনের সাথে সম্পর্কিত। সন্তান প্রতিপালনের ক্ষেত্রে আমরা যদি যথাযথ দায়িত্ব পালন না করি, আমাদের দায়িত্বহীনতার কারনে যদি তারা বিপথগামী হয়ে পাপচারে জড়িয়ে পড়ে এর দায়ভার আদালতে আখেরাতে আমাদের উপর ন্যস্ত করা হবে। নবিকরিম (সা) বলেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্তদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে।’

মতাবস্থায় অবশ্যই আমাদের উচিৎ কোমলমতি সন্তান সন্ততি, ছোট ভাই-বোনদের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা। তারা কখন কিসে অভ্যস্থ হয়ে পরছে, হঠাৎ তার আচরণে কোন পরিবর্তন আসছে কি না? কারণ একেক বয়সে একেক রকম চাহিদা তৈরি হয় তা বুঝার চেষ্টা করতে হবে এবং কেন এ পরিবর্তন সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বিচক্ষনতার সাথে নিতে হবে। টিভি-কম্পিউটার যেমন আমাদের অনেক উপকারে আসে তেমনি এর নেতিবাচক দিকও অনেক। এগুলো ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অভিভাবকদের খুবই সতর্ক থাকা জরুরি। মাঝে মধ্যে তাদের কম্পিউটার, মোবাইল সেটটি চেক করুন, হঠাৎ কল লিস্ট দেখুন, একাকী কম্পিউটারে কি দেখছে? কার সাথে চুপি চুপি কথা বলছে? কোচিংয়ের নামে মেয়ে, বোনটি কোথায় যাচ্ছে? কার সাথে বন্ধুত্ব করছে তা মনিটরিংয়ে রাখা একান্ত প্রয়োজন।

Image result for শিশুদের ছবি

পরিশেষে আপনি যদি আপনার সন্তানকে উন্নত চরিত্র, আদর্শবান এবং তাকওয়ার গুনে গুনান্বিত করে গড়ে তুলতে পারেন, তা হলে মহান রব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে রয়েছে এক অফুরন্ত নিয়ামত, আর তা হলো-নেককার সৎ চরিত্রবান সন্তান ও পিতামাতা উভয় কেয়ামতের দিন পরস্পরের সাথী হবে। আল কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘যে সব মানুষ নিজেরা আল্লাহর ওপর ইমান এনেছে এবং তাদের সন্তানরাও এ ইমানের ব্যাপারে তাদের অনুসরণ করেছে, আমি (সেদিন জান্নাতে) তাদের (নিজ নিজ পিতা মাতার) সাথে একত্র করে দেবো, আর এ জন্যে আমি তাদের (পিতা মাতার) পাওনার কিছুই হ্রাস করবো না।’ (সূরা আত-তুর আয়াত: ২১)।

Image result for শিশুদের ছবি

লেখক: সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও ব্যাংকার

Next Barisal banner ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *