আল কুরআন থেকে মধুর ডাক ‘মা’ শব্দের উদ্ভব

মাহমুদ ইউসুফ 

 বাংলাভাষায় ‘মা’ সবচেয়ে মধুর লফজ । জন্মদাত্রীকে আমরা ‘মা’ হিসেবে সম্বোধন করি। মনের মাধুরী মিশিয়ে আমরা কেউ কেউ আবার আম্মু বা আম্মাজান হিসেবেও ডেকে থাকি। মা! পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত শব্দ। সর্বোত্তম শ্রুতিমধুর এক হরফের একটি লফজ, যে লফজের মধ্যে লূকায়িত আছে জীবনের মহত্তম অনুভূতি। এই মধুর ডাকের কাছে পৃথিবীর সবকিছু অচল। সবার প্রিয় কবি কাজী কাদের নেওয়াজ ‘মা’ কবিতায় কত সুন্দর করেই না বলেছেন,

মা কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু জেনো ভাই

ইহার চেয়ে নাম যে মধুর ত্রিভুবনে নাই।’

বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন ভাষায় ‘মা’ এর সম্বোধন কাছাকাছি শব্দে উচ্চারিত। যেমন: আরবি- উম, আলবেনিয়ান-মেমে,  ইংরেজি-মম বা মাদার, উর্দু-আম্মি, হিন্দি-মা, রাশিয়ান-মাত, তেলেগু-আম্মা, ফ্রান্স-মেরে, জার্মান-মুট্টার, ইতালিয়ান-মাদ্রে, পর্তুগিজ-মায়ে, বেলরুশান-মাটকা, সার্বিয়ান-মাজকা, ইউক্রেনিয়ান- মাতি, বুলগেরিয়ান- মাজকা, ক্রিশ্চিয়ান-এমো, গ্রিক-মানা, হাওয়াইয়ান-মাকুয়াহাইন, ক্রোয়েশিয়া-মাতি কিংবা মাজকা, ড্যানিশ-মোর, আইসল্যান্ড-মোয়ির, আইরিশ-মাতাইর, নরওয়েজিয়ান-মাদার, পোলিশ-মামা বা মাটকা, পাঞ্জাবি-মাই বা মাতাজি, রোমানিয়ান-মামা বা মাইকা, সিন্ধি-উম্মি, আক্কাদিয়ান-উম্মা, বসনিয়ান-মাজকা, ফরাসি-মেরি বা মামা, পারসিয়ান- মাদার বা মামা, ব্যাবিলন-উম্ম প্রভৃতি। জননী, প্রজানিকা, প্রজায়িনী, মাতা, অম্বা, অম্বালা, স্বর্ণপ্রসূ, জনয়িত্রী, জনিকা, প্রসূতি, জন্মধাত্রী, মাতৃ, মাতৃকা, অম্বালিকা, অম্বিকা, আম্মা-আম্মি, রত্নগর্ভা, স্বর্ণপ্রসবা প্রভৃতি মায়ের সমর্থক লফজ।

ওইসব জাতি নিজস্ব ভাষায় গর্ভধারিণী বা জনয়ত্রীকে সম্বোধন করে থাকে। যারা যে নামেই ডাকুকনা কেন শুরুটা কিন্তু ‘ম’ দিয়ে। এই ‘মা’ শব্দের উৎপত্তিস্থল কোথায় তা অধিকাংশ লোকই অনবহিত। মহাকিতাব আল কুরআন থেকেই ‘ মা ’ শব্দের উৎপত্তি। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আওয়া লাম ইয়া রল্লাজিনা কাফারু- আন্নাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ কানাতারতকন ফাফাতাক নাহুম। ওয়া জায়ালনা মিনাল মা- ই কুল্লা শাইয়িন হাইয়া। আফালা ইউমিনুন।’ তরযমা: সেই লোকেরা যারা অস্বীকার করছে, তারা কী চিন্তা করে না যে, এই আসমান ও যমিন সব কিছুই ছিলো মিলিত অবস্থায়, পরে আমরা এগুলোকে আলাদা-আলাদা করে দিয়েছি? এবং পানি হতে প্রত্যেক জীবন্ত জিনিসকে পয়দা করেছি। তারা কী বিশ্বাস করে না? (আল কুরআন: সুরা ২১ আম্বিয়া: আয়াত ৩০)

সুরা আম্বিয়ার এই আয়াতের তরযমায় ‘পানি’ শব্দের উল্লেখ আছে। ‘পানির’ মূল আরবি হচ্ছে ‘মা’। এই ‘মা’ দ্বারা যেমন আকাশের পানি বুঝায় তেমনি বুঝায় সাগর মহাসাগরের তথা জমিনের পানিও। শুধু তাই নয়, এই ‘মা’ লফজের দ্বারা যে কোনো তরল পদার্থকেও বুঝানো হয়ে থাকে। সুতরাং আল কুরআনে ‘মা’ কালিমা বা লফজের দ্বারা প্রথম অর্থে যে ‘পানিকে’ বুঝানো হয়েছে সে ‘পানি’ হচ্ছে জীবনের অপরিহার্য উপাদান। বিভিন্ন ভাষায় প্রসূতিকে সন্তানেরা যে ‘মা’ নামে  ডেকে থাকে- তার সূত্র এখানেই নিহিত। (ড. মরিস বুকাইলি: মানুষের আদি উৎস, পৃ ১৪৯-১৫০)

দুনিয়ার জীব-জড় সবকিছুই পানি থেকে সৃজিত। পানি মা’র সাথে তুল্য। পানি বা অক্সিজেন ছাড়া মানবজীবন এক মুহূর্তও টিকে থাকতে পারে না। তাই দুনিয়াতে ‘পানি’ মা জননীর সমমর্যাদায় অভিসিক্ত। এজন্যই আমাদের নিকট ‘মা’ আহ্বান সবচেয়ে প্রিয়।
হদিস :
১। মতিউর রহমান খান : শব্দার্থে আল- কুরআনুল মজীদ পঞ্চম খ-, আধুনিক প্রকাশনী বাংলাবাজার ঢাকা, এপ্রিল ২০১৪
২। ড. মরিস বুকাইলি : মানুষের আদি উৎস, (The Origin of Man এর বাংলা তরযমা : আখতার-উল্-আলম) জ্ঞানকোষ প্রকাশনী, বাংলাবাজার ঢাকা-১১০০, দ্বিতীয় সংস্করণ, ডিসেম্বর ২০১২ইং
৩। ওয়েবসাইট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *