মাহমুদ ইউসুফ
বিশ্বজগত সৃষ্টি হয়েছে গ্যাস ও পদার্থের ক্ষুদ্র কণিকার সমন্বয়ে গঠিত উত্তপ্ত ধোঁয়াটে এক মিশ্রন থেকে। মহাবিশ্বের সৃষ্টি, বিশেষ করে আকাশমণ্ডলি ও পৃথিবী সৃষ্টির অভিন্ন উৎস বিষয়ক মতবাদের জন্ম বিংশ শতাব্দিতে। ১৯২০ সালে আলেকজান্ডার ফ্রিডম্যান এবং এ. জি. লেমেয়াতর বিগব্যাং মতবাদ প্রস্তাব করেন ১। অথচ এ সময়ের ১৩০০ বছর পূর্বে ৬১৬ সালে আল কুরআন বিগব্যাং থিওরি ঘোষণা করেছে। আল্লাহ রব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করেন যা ছিলো ধুম্রবিশেষ। অনন্তর তিনি ওটাকে ও পৃথিবীকে বললেন: তোমরা উভয়ে এসো ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়….’’ (সুরা ১১ ফুসসিলাত ঃ আয়াত ১১)
ধুম্র বা ধোঁয়া বলতে ভাসমান কণার পরিপূর্ণ কোনো ঘূর্ণায়মান, উত্তপ্ত গ্যাসীয় পদার্থ বুঝায়। মহাশূণ্যে গ্যালাক্সির অবস্থা পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা ঠিক এরকমই চিত্র আবিষ্কার করেছেন। বিভিন্ন পদার্থের কণা পুঞ্জিভূত হয়ে প্রচণ্ড ঘন ও ভারি একটি বস্তু তৈরি হয়। এ কেন্দ্রীয় বস্তুটির বিস্ফোরণের ফলেই ‘বিগ ব্যাং’ এর উদ্ভব হয়। যার পরিণামে সম্প্রসারণশীল এ মহাবিশ্বের সৃষ্টি। কুরআনের ঘোষণা, ‘যারা কুফরি করেছে তারা কী ভেবে দেখে না যে, আকাশমণ্ডলি ও পৃথিবী মিশে ছিলো ওতপ্রতোভাবে। অতপর আমি উভয়কে আলাদা করে দিলাম…….’’ (সুরা ২১ আম্বিয়াঃ আয়াত ৩০)।
দুনিয়া পয়দার ব্যাপারে কুরআনের বক্তব্য স্পষ্ট। বিজ্ঞান এবং বৈজ্ঞানিকরাও কুরআনের আয়াতের বক্তব্যের সাথে একমত। কিন্তু আল্লহর প্রথম সৃষ্ট উপকরণ সম্পর্কে কুরআন নিরব। তবে মুহাম্মাদ স. বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, নবি করিম স. বলেছেন, আল্লাহ সর্বপ্রথম কলম ও মাছ সৃষ্টি করেছেন। অতপর কলমকে বলেছেন, লিখো, কলম বললো কী লিখবো? আল্লাহ বললেন, কিয়ামত পর্যন্ত যা সংঘটিত হবে সব লেখো।’’ (তাবারানি, ইবনে জারির, ইবনে আসাকির, ইবনে আবি হাতিম, আহমাদ, তিরমিযি, তাফসির ইবনে কাসির)২।
তাফসিরে মারেফুল কুরআনেও এ সংক্রান্ত রেওয়াতের উপস্থিতি রয়েছে। ওবাদা ইবনে সামেত রা. থেকে বর্ণিত, নবি করিম স. বলেছেন, সর্বপ্রথম আল্লাহ তাআলা কলম সৃষ্টি করেন এবং তাকে লেখার আদেশ করা হলো। কলম আদেশ অনুযায়ী অনন্তকাল পর্যন্ত সম্ভাব্য সকল ঘটনা ও অবস্থা লিখে দিল ৩।
হযরত কাতাদাহ রহ. বলেন, কলম আল্লাহ প্রদত্ত একটি বড় নেয়ামত। কেউ কেউ বলেছেন, আল্লহ তাআলা সর্বপ্রথম তকদিরের কলম সৃষ্টি করেছেন। এই কলম সমগ্র সৃষ্টি জগৎ ও সৃষ্টির তকদির লিপিবদ্ধ করেছেন। এরপর দ্বিতীয় কলম সৃষ্টি করেছেন। এই কলম দ্বারা পৃথিবীর অধিবাসীরা লিখে এবং লিখবে ৪। তাই কলম ছাড়া অন্য কোনো বস্তু, উপকরণ বা ব্যক্তিকে সৃষ্টির প্রথম স্থানে নিয়ে যাওয়া বিভ্রান্তিকর। তাই আলেম উলামা মুফতি এবং ইসলামি বিশেষজ্ঞদের বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করা অনুচিত। তাছাড়া মহানবির স্পষ্ট বাণী বা হাদিসকে পাশ কাটিয়ে অন্য কাউকে সৃষ্টির প্রথম পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া শিরকের সমতুল্য। এই শিরক থেকে সকলকে বেঁচে থাকতে হবে। কারণ আল্লাহ অন্য সকল গুনাহ ক্ষমা করলেও শিরকের অপরাধ ক্ষমা করবে না।
হাদিস ঃ
১। ড. লরেন্স ব্রাউন, স্রষ্টার সর্বশেষ প্রত্যাদেশ আল কুরআন, (ভাষান্তর- উম্মে তাহ্যিন) তাওহীদ পাবলিকেশন্স, বংশাল, ঢাকা, নভেম্বর ২০১১, পৃ ১২৯-১৩০
২। খলীলুর রহমান বি ফযলুর রহমান রহ. অধিকাংশ লোক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা সত্ত্বেও মুশরিক, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, বংশাল, ঢাকা, ৪র্থ প্রকাশ, ফেব্র“য়ারি ২০১২, পৃ ১১৬
৩। পবিত্র কোরআনুল করীম, মূল- তফসীর মাআরেফুল কোরআন, মুফতী মুহাম্মাদ শাফী (রহ.), অনুবাদ ও সম্পাদনা মুহিউদ্দিন খান, খাদেমূল হারামাইন বাদশাহ ফাহদ কোরআন মুদ্রণ প্রকল্প, পৃ ১৩৯৫
৪। পবিত্র কোরআনুল করীম, মূল- তফসীর মাআরেফুল কোরআন, মুফতী মুহাম্মাদ শাফী (রহ.), অনুবাদ ও সম্পাদনা মুহিউদ্দিন খান, খাদেমূল হারামাইন বাদশাহ ফাহদ কোরআন মুদ্রণ প্রকল্প, পৃ ১৩৯৫