মোহাম্মদ এমরান
যুগে যুগে মানুষের স্বভাবজাত আচরণ ও সামাজিক সদাচরণের মাধ্যমে নানান সভ্যতার সৃষ্টি হয়েছে। কালের বিবর্তনে এসব সভ্যতার মাপকাঠি দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। যেখান থেকে মৌলিক অংশটুকু বেছে নিয়ে সামঞ্জস্যতার আলোকে গড়ে উঠেছে মানব সভ্যতা। কিন্তু বর্তমানে সমাজ সংসারে এ সভ্যতা খুব একটা দেখা যায়না। সভ্যতার বিষয়টি বর্তমানে এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে সভ্যতার বিলুপ্তি ঘটিয়ে অসভ্যতা-ই যেনো এখন মানব সভ্যতার মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কথাটি আসলো এজন্য যে…
কিছুদিন পূর্বে দেখলাম জনৈক পৌঢ়কে একজন জোয়ান বেদড়ক পেটাচ্ছে গাঁয়ের শক্তি দিয়ে। না! সঠিক নয়! একখানা ৫ ইঞ্চি ইট দিয়ে। ভাবলাম! পৌড় মনে হয় কোনো আকাম নিশ্চই করিয়াছেন বটে! কিন্তু না। কতিপয় জনসাধারণ কে সুধাইতে জানিতে পারিলাম, পৌড় কোনো আকামই করেন নাই বরং পৌড় ঐ জোয়ানের একমাত্র পিতা বটে! আর জোয়ান পৌড়র পাঁচমাত্র সন্তানের মধ্যে একমাত্র কুলাঙ্গার সন্তান বটে!
কিঞ্চিত ভেবাচেকা খেয়ে থেমে গেলাম, না! কারণ, কৌতুহল বড্ড বেশীই জোরালো হইল! বিশ্ব যখন সভ্যতার মাপকাঠি নিয়ে বাটখাড়া বাদ দিয়ে সুইচ টেপাটেপি করে নিজেদের সভ্য বানাতে পাল্লায় ব্যস্ত, তখন আমার দেশে এ কোন সভ্যতা? যাক, পরিশেষে জানিতে পারিলাম পিতা তাহার সন্তানের অনুমুতি ছাড়া সম্পত্তির কিঞ্চিৎ বিক্রয় করিয়াছেন নিজ সুখ-ভোগের মানসে। আহ্: কি কৃষ্টি উহাও তাহার কপালে জুটিল বটে? তবে, ইটের কয়েকটি আঘাত সহিয়া!
আমার আর এ গল্প সহিবার সহ্য হইল না, সহসাই সপটে সরিয়া পড়িয়া ভাবিতে লাগিলাম… সভ্যতা? কি! অসভ্যতা? মাথাটা কিঞ্চিত মোচড়াইয়া উঠিল… আহ্: সেই দিনগুলি কোথায়? যখন ছোটরা বড়দের দেখিলে কুর্ডুশ করিত! বড়রা ছোটদের দেখিলে স্নেহের আলিঙ্গনে জড়াইয়া নিত।
যাহ্: আমি কি ভাবছি এসব, এখন তো ছোটরা সিগারেটের ধোঁয়া তুলিয়া, বুকের বারান্দা খুলিয়া, খিল-খিলাইয়া, হেলিয়া দুলিয়া, চলিতে চলিতে মৌজে মাতে। যেখানে বড়রাই বরং না দেখার ভান করিয়া সরিয়া পড়িয়া কোনোমতে মানে বাঁচে।
উহারাই বা কি করিবে? বিষয়টি তো এমন হইয়া দাঁড়াইয়াছে যে, যে যতো বেশী ধোঁয়া ওড়াইতে পারিবে সে ততো বড় নেতা হইতে পাড়িবে! যে যতো বড় নেতা হইবে সে ততো বড় মালদার হইতে পাড়িবে! যে যতো বড় মালদার হইতে পাড়িবে সে ততো বড় ক্ষমতাধর হইতে পাড়িবে! তবে, একটু ব্যতিক্রম রয়েছে বৈ কি—
সকল নেতাই মালদার বটে!
কিন্তু…
সকল মালদার ক্ষমতাবান নয়!
এ এক অন্য খেলা! আপনার আমার ইহা বুজিবার কাম নাই। আমরা বরং সভ্যতা নিয়েই থাকি… ওহ্; কি সভ্যতা! আগেকার পিতাগণ সন্তানদের ডাঙ্গর হওয়ার দিকে খেয়ালের চেয়ে বরং সন্তানদের মানুষ হওয়ার দিকেই বেশী খেয়াল করিতেন, আর বর্তমান সভ্যতার পিতাগণ একটি ছেলে জন্মদিবার সঙ্গে সঙ্গে চিন্তায় পরিয়া যান কবে ছেলে ডাঙ্গর হইবে! তাহার কাঁধ অবদি ছুঁইবে! মাথা অবদি ছুঁইলে আরও ভাল! আর কেউই তাহাকে কিছুই বলিবার সাহস করিবে না। কারণ-
তাহার একটা ডাঙ্গর পোলা আছে! পোলার সাথে কিছু ডাঙ্গর ছোলা আছে! ছোলার সাথে আবার কিছু বড় বড় ঝোলা আছে! ঝোলার ভিতর আবার কি আছে? তাহা জিজ্ঞাসিবার সাধ্য কারোর নাই! কারণ-
তাহারা এখন ডাঙ্গর হইয়াছে। আর সভ্যতা? তা বোধকরি কিছু শিখিয়াছে বটে! ইহা এক আজব কারবার বটে! সভ্যতা না কি অসভ্যতা? অসভ্যতা না কি সভ্যতা? কোনটা কোনদিকে কি করে কখন মোড় নিচ্ছে কারোরই সেদিকে খেয়াল বোধকরি কমই আছে।
কারণ- একসময় আমার বাড়ীর ছাওয়াল আকাম করলে তাহার বাড়ীর মুরব্বি শাসন করিতে পারিতেন। আর এখন নিজের ছাওয়ালকে নিজেই শাসন করাই বেজায় দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে! ছাওয়ালেরই বা কি দোষ বাহে সভ্যতাই? তো তাকে এখানে এনে দাঁড় করিয়েছে। কিন্তু আর কতকাল চলিবে বাহে এ অসভ্যতা? তুমি-আমি-আপনি-উনি এখনই যদি উহার লাগাম টানিয়া না ধরি তবে বোধ হয় সেই দিন বেশি দূরে নয়…
অসভ্যতাই সভ্যতার একমাত্র মাপকাঠি হয়ে দাঁড়াবে!