উন্নয়ন-অগ্রগতি

মাহমুদ ইউসুফ

মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, রাস্তাঘাট নির্মাণ, যোগাযোগ ব্যবস্থা সংস্কার, শিল্প-কারখানা স্থাপন, হাই রাইজিং ভবন নির্মাণ, ভোগ্য সামগ্রীর সরবরাহ বাড়ানো, বিলাসিতা, বেতন বৃদ্ধি, উপার্জন বৃদ্ধি, উৎপাদন বৃদ্ধি, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, লোডশেডিং বন্ধ, তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষ, বিলাসবহুল জীবন যাপন, বড় বড় শপিং সেন্টার, যুদ্ধাস্ত্র তৈরি প্রভৃতি ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধিত হলেই উন্নয়ন হচ্ছে বলে আমরা মনে করি। মূলত পুঁজিবাদ ও বস্তুবাদের শাখা-প্রশাখা এসব কীর্তি। ভোগবাদীদের কাছে উন্নয়ন-অগ্রগতি-প্রগতি বলতে এটাইকে বুঝায়।

এসব কীর্তিরাজিকে উন্নয়ন বলা যাবে না, একথা আমরা বলছি না। এগুলো উন্নতির একটি দিক মাত্র। তবে প্রকৃতপক্ষে উন্নয়নের অর্থ আরও ব্যাপক। আসল উন্নয়ন হলো মানুষের নৈতিক ও চরিত্রের উন্নয়ন। মানব সমাজ থেকে যখন অসৎকর্ম, অন্যায় কর্ম, অকৃতজ্ঞতা, অহঙ্কার, অমানবিকতা, অসততা, অনৈতিকতা, অর্থলোলুপতা, অলসতা, অযোগ্যতা, অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার, অসৎসঙ্গ, অস্থিরতা, অন্যায় রীতিনীতি সমূলে উৎপাটিত হবে তখনই উন্নয়ন সার্থকতা পাবে। উন্নয়নের স্বাদ সব মানুষ উপভোগ করতে পারবে। মানুষ যখন সবাই একে অপরের কল্যাণ কাজ, কামনা ও ভাবনায় নিযুক্ত হবেই তখনই সমাজে সমূহ সুখ-শান্তি ও কল্যাণ বর্ষিত হবে।

একটি ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ না করে পারছি না। সাহাবি আবুবকর রা. খলিফা হবার পর প্রধান বিচারপতি নিয়োগ পেলেন সাহাবি উমার রা.। আবুবকরের খলিফা হাবার এক বছর পূর্তিতে উমার তাঁর দরবারে গিয়ে হাজির। আবুবকর বললেন, কী খবর, উমার। উমার রা, হে রসুলের খলিফা, আমাকে এমন একটি পদে নিয়োগ করলেন, যেখানে এই এক বছরে একজন লোকও কোনো মামলা, মোকদ্দমা, নালিশ বা অভিযোগ নিয়ে আসল না। আপনি কেন আমাকে এ পদে বসিয়ে রাখছেন? আবুবকর জবাবে তাঁকে বললেন, এক বছরে একজন ফরিয়াদিও আসল না, এ বিষয়ে তুমি কী মনে করো, কোনো অভিযোগ কেন দাখিল হলো না? এর কারণ কী বলে মনে কর তুমি? উমার বললেন, এ জাতি প্রত্যেকে প্রত্যেকের কল্যাণ ও সফলতা কামনা করে। তাই সমাজ থেকে যাবতীয় দুর্বৃত্তপনা, নৈরাজ্য, প্রতারণা, পৈশাচিকতা বিলুপ্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *