জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের ইতিবৃত্ত: পর্ব ২৪

মাহমুদ ইউসুফ

আলবুকার্কের আগ্রাসন
আলবুকার্ক ছিলো কুখ্যাত পর্তুগিজ জলদস্যু, ডাকাত ও খুনি নাবিক। উপমহাদেশে ভিলেন হলেও পর্তুগালে সে পূজিত। আমাদের কাছে নাবিক নামের কলঙ্ক। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, একাডেমিক পাঠ্যপুস্তকে এইসব নরঘাতকদের কুকীর্তির চিহ্নমাত্র নেই। বুকার্ক ষোড়শ শতাব্দীর সূচনালগ্নে সংহার মূর্তিতে সাগর পথে ভারতে আসে। তার নারকীয় নৈরাজ্যে নরকরাজ্যে পরিণত হয় ভারতীয় উপকূল। কালিকট, কোলাম, কোচিন, মালাবার, গোয়া ছিলো তার দস্যুবৃত্তির হেডকোয়াটার। ১৫১০ সালের প্রারম্ভে সে কালিকট বন্দরে নগরদাহ করে। কিছুদিন পর আদিল শাহের গোয়া দ্বীপ দখল করে সেখানে পর্তুগিজদের রাজধানী স্থাপন করে। ধীরে ধীরে গোয়া নগরী হয়ে ওঠে তাদের অত্যাচারের স্বর্গভূমি। এখানে বসেই সে মালাবার উপকূলে চালায় এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের খেলা। পর্তুগিজদের উপকূল রাজনীতির পথে প্রধান প্রতিবন্ধক ছিলেন কালিকট রাজ। বুকার্ক কালিকট রাজার ভাইকে ষড়যন্ত্রের জালে জড়িয়ে ফেলে। সে বিষ প্রয়োগে হত্যা করে রাজাকে। শ্রী অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় তাঁর ফিরিঙ্গি বণিক কিতাবে আলবুকার্ক সম্পর্কে লিখেছেন, ‘‘এই ফিরিঙ্গি বীরের মুসলমান বিদ্বেষ চিরস্মরণীয় হইয়া রহিয়াছে। তিনি ইতিহাসে তাহার যে সকল প্রমাণ রাখিয়া গিয়াছেন, তাহা অল্প নহে। কিন্তু তাহার চরিতাখ্যায়ক যে সকল গুপ্ত সংকল্পের উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন, তাহা আরও ভয়ঙ্কর। মিশরের মুসলমান সুলতানকে শিক্ষাদান করিবার জন্য, আলবুকার্ক খাল কাটিয়া নীল নদকে লোহিত সাগরে টানিয়া আনিবার সংকল্প করিয়াছিলেন। ইহাতে সমগ্র মিশর দেশ মরুভূমিতে পরিণত হইত। সমগ্র মুসলমান সমাজকে শিক্ষাদান করিবার জন্য মুসলমান ধর্ম্মপ্রবর্তক মুহম্মদের পবিত্র অস্থি সর্ব্বসমক্ষে ভস্মসাৎ করিবার সংকল্প হইয়াছিল।
আলবুকার্কের এই মুসলমান বিদ্বেষ সেকালের সকল ফিরিঙির সাধারণ বিদ্বেষ রূপে প্রচলিত থাকায়, চরিতাখ্যায়কগণ ইহার উল্লেখ করিতে কিছুমাত্র লজ্জাবোধ করেন নাই। তাহারা বরং ইহাকে দৃঢ় চরিত্র বীরপুরুষোচিত চিত্তবল বলিয়া বর্ণনা করিয়া গিয়াছেন।’’
[ড. আসকার ইবনে শাইখ, ক্রুসেডের ইতিবৃত্ত, মদিনা পাবলিকেশন্স, বাংলাবাজার ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০০২, পৃ ৫১-৫৩]

বড়োল্যান্ড গণহত্যা, ২০১৪
১৭৫৪ সালে জনৈক ইংরেজ স্কট এক চিঠিতে হিন্দু জামিদারদের মনোভাব সম্পর্কে জানান, ‘হিন্দু রাজা ও জমিদাররা মুসলিম শাসকদের প্রতি সর্বদা হিংসাত্মক ও বিদ্রোহী মনোভাব পোষণ করেন।’ শুধু হিন্দু রাজা ও জমিদারই নয়, ভারতের সিংহভাগ লোকেরাই মুসলিম জাতির বিরুদ্ধে ক্রোধান্বতা ও উগ্র ভূমিকায় নিয়োজিত। অতীতেও আর বর্তমানেও। তাইতো দেখা যায়, সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে ভারত শীর্ষে। হত্যা, জিঘাংষা, উগ্রতা, সাম্প্রদায়িকতা তাদের সামাজিক সংস্কৃতি। ২০১৪ সালের বড়োল্যান্ড গণহত্যা এমনই এক ‘সুকীর্তি’।
২০১৪ সালের ১লা মে মধ্যরাত থেকে ৩রা মে অবধি ভারতের আসাম রাজ্যের বোরোল্যান্ডে বাঙালি মুসলমানদের লক্ষ্য করে এই আগ্রাসন চলে। রাষ্ট্রীয় বোরোল্যান্ড গণতান্ত্রিক মোর্চা এ কে ৪৭ অস্ত্র ব্যবহার করে মুসলিমদের উপর হামলা চালায়। বোরো সদস্যদের নির্বাচিত না করার প্রতিঘাতস্বরূপ তারা মুসলিম বিরোধী অভিযানে অংশ নেয়। তিন দিন যাবত তারা মুসলমান সম্প্রদায়ের ওপর ধারাবাহিকভাবে হামলা ও হত্যাকা- চলতে থাকে। এন.ডি.এফ.বি. এর প্রকাশিত বয়ানে তারা এই আক্রমণের সাথে জড়িত থাকার সন্দেহ নাকচ করে ও এটিকে বোরো জনগোষ্ঠীর সাথে বাঙালি মুসলমানদের বিরোধ সৃষ্টির জন্য আসাম সরকারের একটি ধূর্ত প্রয়াস বলে উল্লেখ করেন।
হত্যাযজ্ঞের প্রথম পর্বে, আসামের বাক্সা জেলার নরসিংহবাড়ি গ্রামে এবং দ্বিতীয় পর্বে, অপর একটি হামলাকারী দল কোকড়াঝাড় জেলার বালাপাড়া গ্রামে বাড়িতে বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ঘটায়। তৃতীয় পর্বে, আরেকটি হামলাকারী দল বাক্সা জেলার মানস জাতীয় উদ্যানের নিকট ৩০ টি ঝুপড়িতে আগুন ধরায়। হানদারদের এই হামলায় অসংখ্য মুসলমান হতাহত হয়।
[উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে সংগৃহীত- ২৮ জুলাই ২০২১]

২ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন শিক্ষার্থী বন্দুক সহিংসতার শিকার
আন্তর্জাতিক খবরাখবরের প্রতি যারা দৃষ্টি দেন, তারা প্রায়ই দেখে থাকেন যে আমেরিকা স্কুলগুলোতে কী হচ্ছে? বন্দুক কালচার সেখানে বেড়েই চলছে। অহরহই ঘটছে বন্দুকধারীদের হামলা। তারাই আবার সভ্যতা ও আধুনিকতার দোহাই দেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা হত্যা বা হত্যাযজ্ঞের হার উন্নত বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ওয়াশিংটন পোস্টের মতে, ১৯৯৯ সালে কলোরাডোতে কলম্বাইন হাই স্কুল গণহত্যার পর থেকে গত দুই দশকে ২ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী স্কুলে বন্দুক সহিংসতার শিকার হয়েছে।
[https://www.bbc.com/bengali/news-50429175]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *