নিরাপদ বিশ্বের অঙ্গীকার, মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার

মোঃ রিসালাত মীরবহর ।।

মানব সভ্যতা সৃষ্টির পর থেকে মানুষ তার অস্তিত্ব বজায় রাখতে যুগের পর যুগ- যুদ্ধ নামক ভয়ানক ধ্বংস লিলায় মেতেছে। কখনো নিজ দেশে, কখনো বা ভিন দেশে। যুদ্ধ যুদ্ধ এই খেলা কিন্তু আজও বন্ধ হয়নি। আজও আমরা টিভি আর পত্রিকার পাতায় দেখতে পাই যুদ্ধের কি ধ্বংসাত্বক আয়োজন। যুদ্ধের এই আয়োজনের কারণে পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে অসংখ্য মানুষ। হারিয়ে গেছে অনেক সভ্যতা, হারিয়ে গেছে অনেক জাতি, হারিয়ে গেছে অনেক সাম্রাজ্য। অর্থাৎ যুদ্ধের আরেক নাম অসংখ্য প্রাণহানী। তারপরেও আমরা যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ি। ইতোপূর্বে আমরা দু’টি বিশ্বযুদ্ধ দেখেছি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হিরোশিমা-নাগাসাকি পরিণত হয়েছিলো মৃত্যুপুরিতে। এখানেই শেষ নয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জাপানে জন্ম নিয়েছে হাজারো পঙ্গু আর বাক প্রতিবন্ধী শিশু। যুদ্ধ করে আমরা হেরেছি না জয়ী হয়েছি এটা বড় কথা নয়। বরং এতগুলো প্রাণ এই সুন্দর পৃথিবী ত্যাগ করে চলে গেল এ দায় কার? আমরা কি পেরেছি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে? পেরেছি কি যুদ্ধের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে? নাকি যুদ্ধের ভয়াবহতা আমাদের মনে করিয়ে দেয় এই পৃথিবী আমাদের জন্য আর নিরাপদ জায়গা নয়। এই পৃথিবী শুধুমাত্র একটি যুদ্ধক্ষেত্র, হয় তুমি মর না হয় তুমি মার।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়েও আমরা দেখেছি ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, লিবিয়া, এশিয়া ও আফ্রিকা সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অসংখ্য যুদ্ধ। দেখুন বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ মানুষ যেখানে দারিদ্র সীমার নীচে বাস করে, সেখানে এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা আমাদের জন্য কতটা কুফল বয়ে আনতে পারে সেটা পরাশক্তি রাষ্ট্রগুলো হয়তো কখনো উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়নি। কিন্তু যুদ্ধের ভয়াবহতার কারনে সৃষ্ট সমস্যা, ভয়ানক মানবিক বিপর্যয় কিন্তু ঠিকই উপলব্ধি করতে পেরেছে গোটা বিশ্বের মানুষ। যুদ্ধের ফলে অভিবাসীর সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা। কেউ মারা যাচ্ছে অনাহারে, কেউবা ক্ষেপনাস্ত্রের আঘাতে। মানুষ দেশ থেকে দেশান্তরী হচ্ছে একটু বেঁচে থাকার আশায়। খুঁজে বেড়াচ্ছে একটু নিরাপদ আশ্রয়। অগনিত শিশু মারা যাচ্ছে খাবারের পরিবর্তে তাজা বুলেট কিংবা বোমায়। একটি শিশুর আগামনে প্রকৃতি যেমন খুশি হয় ঠিক তেমনি একটি শিশুর মৃত্যুতে প্রকৃতি তার ছন্দ পতন ঘটায়। যে শিশুটির কাধে বইয়ের ব্যাগ থাকার কথা, সে শিশুটি হয়তো পড়ে আছে রাস্তার পাশে অথবা ধ্বংস স্তুপের নিচে চাপা। এছাড়া অসংখ্য মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করছে যুদ্ধের এই নির্মম খেলায়। প্রিয়জন হারাচ্ছে তার প্রিয় মানুষটিকে। যে মানুষটির সাথে একসময় সে পাশপাশি হাটতো, পাশাপাশি বসতো, গল্প কিংবা আড্ডায় মুখোরিত হয়ে থাকতো তাদের গোটা পরিবার। জীবনের সব রঙ্গীন আয়োজন হারিয়ে যায় যুদ্ধের এই নির্মমতায়। ভালোবাসার আনন্দের সুখগুলো পরিণত হয় শেষ বিদায়ের কান্নায়। চারদিকে কেবল পোড়া মাটি আর বারুদের গন্ধ। আকাশ বাতাস ভাড়ি হয়ে যায় প্রিয়জন হারানোর বেদনায়।

আজ বিশ্বের পরাশক্তিগুলো ব্যাপক অস্ত্র মজুদ করছে। বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিস্কার হচ্ছে ড্রোন, গাইডেড মিসাইল, রকেট লাঞ্চার, ক্রুজ ক্ষেপনাস্ত্র, শব্দের চেয়ে ১০ গুন শক্তিশালী পারমাণবিক বোমা সহ আধুনিক সব মরণাস্ত্র। অথচ দেখুন অধিকাংশ মানুষ জানে না তাদের হত্যা করতেই বিজ্ঞানের এতো এতো আবিস্কার। আজ বিজ্ঞানের এই অসুভ আবিস্কারে পৃথিবী যেন এক অনিরাপদ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। পরাশক্তিধর দেশগুলোর নেতাদের হুমকি পাল্টা হুমকিতে জানান দেয়, যে কোন মূহুর্তে পৃথিবী আরেকটি সংঘাতে জড়াতে পারে।
যেখানে আমরা বিশ্বের প্রতিটি দেশ ক্ষুধা, দারিদ্র, বেকারত্ব, প্রাকৃতিক দূর্যোগ, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের মূল্য বৃদ্ধি সহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। সেখানে যুদ্ধের নামে ভয়ানক অস্ত্রের প্রয়োগ আমাদের জন্য কতটা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে সেটা আমার বোধগম্য নয়। বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর কাছে যে পরিমাণ পারমাণবিক অস্ত্র মজুদ আছে তা দিয়ে মূহুর্তেই বিশ্বকে নরকে পরিণত করা সম্ভব। আমরা ক্ষমতার জন্য এতোটাই আগ্রাসী যে, ভুলেই যাচ্ছি মানুষ নামের আরেক মানুষকে হত্যা করছি। যেখানে মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতেই আমাদের হিমশিম খেতে হয়, সেখানে যুদ্ধ আমাদের ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই দিতে পারবেনা।

আমরা চাই না এই অনিরাপদ বিশ্ব। চাইনা এই ঝুকিপূর্ণ মরণাস্ত্রের ব্যবহার। আমরা চাই প্রতিটি শিশুর ভবিষ্যৎ হোক ভোরের আলোর মতো উজ্জল। মানুষ তাদের স্বাভাবিক জীবন নিয়ে বেড়ে উঠুক আগামীর নতুন দিনের প্রত্যাশায়। লোভ, হিংসা, ক্ষমতা আর দাম্ভিকতা যেন আমাদের ছুঁতে না পারে। ক্ষুধা, দারিদ্র, বেকারত্ব মুক্ত পৃথিবী যেন হয় আমাদের নিত্য দিনের সঙ্গী। আমরা যুদ্ধ চাই না, চাই না নতুন করে আর কোন প্রাণহানী। বিশ্বের প্রতিটি মানুষ যেন নিরাপদে বসবাস করতে পারে তার জন্য চাই শক্তিধর দেশগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। যুদ্ধ কখনো সমাধান বয়ে আনতে পারে না বরং তা ধ্বংসের চূড়ান্ত পর্যায়। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ হোক দায়িত্বশীল ও মানবিক। মানুষ হোক মানুষের কল্যাণের অগ্রদূত। বোমা মেরে মানুষের জীবন কেড়ে নয় বরং আসুন ক্ষুধা, দারিদ্রতা আর বেকারত্বের অভিশাপ লাঘবে নিজেদের নিয়োজিত করি আগামির সুন্দর ভবিষ্যৎ বিশ্ব রচনায়। যেখানে একটি শিশু বেড়ে উঠবে নিরাপদে। তাই আমরা সবাই আজ প্রতিজ্ঞা করি- ‘নিরাপদ বিশ্বের অঙ্গীকার, মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার’।

মোঃ রিসালাত মীরবহর
বরিশাল সদর, বরিশাল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *