নুরুল আমিন।।
আলোকিত জীবন গঠনের জন্য বই পড়া একান্ত প্রয়োজন। বই পড়ার আনন্দই আলাদা। বই পড়ার আনন্দে আলোয় আলোয় ভরে ওঠে জীবন। আর দিন দিন জ্ঞানের পরিধি বাড়তে থাকে। বই পড়ে মানুষ অজানাকে জানতে পারে। বই পড়লে মনের নিঃসঙ্গতা দূর হয়, আত্মশক্তি বাড়ে, কাজের দক্ষতা-অভিজ্ঞতা ও নতুন নতুন কৌশল আয়ত্বে আসে। বই হচ্ছে মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ বন্ধু। তাই প্রত্যেকের বই পড়া উচিত।
বই মানুষের এমন বন্ধু যে উপকার ছাড়া কখনও ক্ষতি করে না। বই কিনে কেউ গরীব হয় না। বই পড়ে কেউ ঠকে না। সাহিত্য চর্চা করে কেউ পিছিয়ে পড়ে না। যে জাতি যত বেশি বই পড়ে, সে জাতি তত বেশি উন্নত। কেননা উন্নত জীবন ও জাতি গঠনের উপায় হচ্ছে বই পড়া। সুন্দর সমাজ ও চরিত্র গঠনের জন্য বই পড়া উচিত। মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ বন্ধু হতে পারে একটি ভালো বই। আলোকিত জীবন গড়তে বই পড়তে হবে।
বই জ্ঞানের ভান্ডার। বই জ্ঞানের আলো। বই জীবনে সফলতা অর্জনের চাবিকাঠি। বই আত্মার তৃষ্ণা মিটায়। বই পড়ার অনেক গুণ রয়েছে। বই পড়লে সুপ্ত প্রতিভা, মানসিক ও কল্পনাশক্তির বিকাশ ঘটে, ধৈর্য ও মনোযোগ বাড়ে, শুদ্ধ ভাষা চর্চা হয়, নতুন নতুন শব্দ শেখা যায়, স্মৃতিশক্তি উন্নত হয়, সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়, নতুন কিছু আবিষ্কার করা বা গবেষণা করা অথবা কোন বিষয় বা কাজের বিশ্লেষণ করার সুযোগ তৈরি হয়, জটিল ও কঠিন যে কোন সমস্যা সমাধানের পথ সুগম হয়, অন্যের অভিজ্ঞতার সঙ্গে নিজ অভিজ্ঞতার সমন্বয় ঘটে, ব্যর্থতা থেকে সফলতা অর্জনের পথ পাওয়া যায়, কর্মপরিকল্পনার দক্ষতা বাড়ে, আজেবাজে আড্ডা থেকে মুক্ত থাকা যায়, অবসর সময় ভালো কাটে, অনেক গুণাবলির অধিকারী হওয়া যায়, মানসিক অস্থিরতা কমে এবং মনে প্রশান্তি আসে ইত্যাদি। এমনকি বই পড়ার আগ্রহ, গুণ ও উপকারিতার কাছে আলজেইমার’স ও ডিমেনশিয়ার মতো মানসিক রোগও হার মানে।
এছাড়া বই মস্তিষ্ক সচল করে, মনের সংকীর্ণতা দূর করে, অপসংস্কৃতি দূর করে এবং যুগ যুগান্তরের মেলবন্ধন তৈরি করে। বই পড়া থেকে মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ ও নৈতিক শিক্ষা হয়। বই মানুষকে কুসংস্কার মুক্ত রাখে। বই পড়ে মানুষ খুব আনন্দ পায়। বই মানুষের মনকে আলোড়িত করে। আনন্দ উপভোগের অনেক মাধ্যম আছে। তবে বই পড়ার মাধ্যমে আনন্দ উপভোগ করা সবচেয়ে সহজ এবং সর্বোত্তম। এতে খরচ নেই। ঝামেলা নেই। একবার বই কিনলে যুগ যুগ ধরে পড়া যায়। তাই বই পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম।
বই পাঠকের মনে আলোড়ন সৃষ্টি করবে এটাই স্বাভাবিক। তাই বই নির্বাচন করার ক্ষেত্রে সতর্ক ও সচেতন হওয়া উচিত। এখানে বয়সের পাশাপাশি আগ্রহের একটা ব্যাপার আছে। কোমলমতি ছেলেমেয়েদের জন্য শিশুতোষ বই। তরুণদের জন্য রোমান্টিক বই। আর বড়দের জন্য তাদের পছন্দমত ভালমানের যেকোনো বই নির্বাচন করা ভালো। তবে যার যে বিষয়ে আগ্রহ আছে, তাকে ওই বিষয়ের ওপর বই পড়া উচিত। যে বই পড়লে সত্যিকার জ্ঞান অর্জন হবে এবং গভীর আনন্দ পাওয়া যাবে, সেরকম বই পড়া দরকার। কেননা বই মনের খোরাক। আর আনন্দহীন শিক্ষা কাজে আসে না। মনে থাকে না। আনন্দযুক্ত শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা। তাই পড়ার জন্য বই নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। পছন্দের বই কেনার জন্য বইমেলার সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগানো উচিত। বাঙালীর চেতনার সম্পর্ক বিজড়িত মহান ভাষা দিবস একুশে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর মাসব্যাপী অমর একুশে বই মেলার আয়োজন করা হয়। এটা আমাদের জন্য অতি আনন্দের এবং গৌরবের বিষয়।
সাধারণভাবে বই পড়ার উপকার হঠাৎ করেই বোঝা যায় না। ধীরে ধীরে জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে কাজে-কর্মে এর প্রতিফলন ঘটে। আমাদের ছেলেমেয়েদেরকে ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার অভ্যাস করাতে হবে। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অন্যান্য বই পড়ার অভ্যাস করাতে হবে। অনেকেই দেখা যায় শিক্ষা জীবন শেষে বইকে চিরবিদায় দিয়ে ফেলেন। এটা মোটেও ঠিক নয়। জীবনের সকল পর্যায়ে প্রতিদিন অন্তত এক দুই পাতা হলেও পড়া উচিত। বই পড়ার সখের মতো সহজ অথচ উত্তম আর কিছুই হতে পারে না। বই হোক আমাদের নিত্যসঙ্গী ।
লেখক : কবি, সাংবাদিক ও কলামিস্ট, লালমোহন, ভোলা। [email protected], 01759648626.
অভিনন্দন