শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্য

মো. নুর উল্লাহ আরিফ ।।

শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। অশিক্ষিত জাতি মেরুদন্ডহীন প্রাণির মত। যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতির শ্রেষ্ঠত্ব তত বেশি । মর্যাদার অধিকারী তেমনি বেশি। শিক্ষিত জাতি দুনিয়ার সর্বত্র নিজেরা মূল্যায়িত হয় সম্মান  শ্রদ্ধার সাথে। নৈতিকতা সম্পন্ন  আদর্শিক এবং বর্তমান  প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ্বায়নের যুগে শিক্ষত জাতি গঠনে শিক্ষক সমাজের দায়িত্ব সর্বাধিক। শিক্ষক সমাজের দায়িত্ব  ছাত্রছাত্রীদের পাঠদানেই শেষ  নয়। উপরন্তু আরও  অনেক অনেক  দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে। আলোচ্য প্রবন্ধে  শিক্ষকসমাজের সমূহ  দায়িত্ব -কর্তব্য সম্পর্কে কিঞ্চিত আলোকপাতের চেষ্টা  করব।

শিক্ষকদের প্রধানতম দায়িত্ব কর্তব্য ছাত্র ছাত্রীদের নিয়মিত পাঠদান করানো। পাঠদানে কোন ধরনের  গাফিলতি বা ফাঁকি না দেয়া । শিক্ষার্থীদের  পাঠদানের  আগে সংশ্লিষ্ট  বিষয় সম্পর্কে  নিজেদের প্রচুর  পড়াশোনা  করা, গবেষণা  করা, সম্যক ধারণা নেওয়া প্রয়োজন ।

শুধু  পাঠদান  নয়, আদর্শিক জাতি গঠন,  নিজস্ব শিকড়ের সুস্থধারার সংস্কৃতি চর্চায় উদ্বুদ্ধ করণ , অপসংস্কৃতির কুফল সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান বিতরণ , সত, চরিত্রবান জীবন গঠনের  সফলতা  সম্পর্কে  নিয়মিতভাবে পরামর্শ  প্রদান  করা। জাতি দুর্নীতিমুক্ত থাকলে অতিদ্রুত দেশ  উন্নতির শিখরে  পৌছায় এতদসম্পর্কিত বার্তা পৌছানো। দুর্নীতির কুফল, দুর্নীতিমুক্ত দেশে কেউ অধিকার হতে বঞ্চিত  হয় না। আবাল বৃদ্ধ বণিতা, ধনী গরীব, উচু নিচু, ধর্ম বর্ণ, সাদা কালো, জাত অজাত কেউই। দুর্নীতিহীন রাষ্ট্রে যার যার অবস্থান  অনুযায়ী নিজ নিজ অধিকার  নিশ্চিত হয়। নিজে দুর্নীতিমুক্ত থাকুন, অপরকে দুর্নীতিমুক্ত রাখুন  এ শ্লোগানে উৎসাহিত করা।

নৈতিকতা  সম্পন্ন  জাতি  গঠনে শিক্ষক হিসেবে পাঠদানের  সময়ে  শিক্ষার্থীদের তালিম দিতে হবে।  এ  জন্য শিক্ষকদের আগে  নিজেদের নৈতিক  মূল্যবোধ  সম্পন্ন হতে হবে। শিক্ষকরা নিজেরা নৈতিক  মূল্যবোধ সম্পন্ন হলে ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে  এর ব্যাপক প্রভাব  এমনিতেই  পড়ে। শিষ্ঠাচারও এখন অধিকতরভাবে শিক্ষা  দিতে হবে। কারণ,  এখন অধিকাংশ  স্কুল, কলেজ  বিশ্ববিদ্যালয়ে  ছাত্র  রাজনীতির উত্তাল ঢেউ চলছে। সাধারণ  ছাত্র  নেই  কেউ-  এখন  এসব  প্রতিষ্ঠানে। সবাই একেক  গ্রুপের নেতা নয় তো বড় ভাই। এরা রাজনৈতিক নেতা ছাড়া  অন্যদের সম্মান সমীহ  করতে চায় না। মুরব্বী বা ভদ্রলোকদেরও না। এমনকি বাবা মাকেও না। দিবানিশি জুনিয়র সিনিয়র রাজনীতিকদের স্তুতিতে ব্যস্ত  থাকে। সবাইকে স্তর বেধে সম্মান প্রদর্শন বা স্নেহ করার নির্দেশনা দেয়া।

ছাত্র ছাত্রীদের পাঠদানেই শিক্ষকদের দায়িত্ব কর্তব্যের  শেষ  নয়।  দেশ জাতি  সমাজের  প্রতি  রয়েছে  অধিকতর দায়িত্ব। একজন শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়মিত ব্যাপক পড়াশোনা করা,  এ ক্ষেত্রে  দেশ বিদেশের দৈনিক সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক  পত্রিকা পড়া ,  ইতিহাস ঐতিহ্য সাহিত্য সংস্কৃতি বিষয়ক ম্যাগাজিন পড়া,  ধর্মীয়  বই, সাইন্স ফিকশন পড়া, সিরাত গ্রন্থ  পড়া, গবেষণাগ্রন্থ পড়া, নিজেদের গবেষণা করা, দেশ জাতি সমাজ রাষ্ট্রের সম্পর্কে  চিন্তা করা, দেশ জাতি সমাজ রাষ্ট্রকে পরামর্শপ্রদান । সমাজের  নানা অসংগতি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি , বিভিন্ন  বিষয়ে  ন্যায় – অন্যায় বিষয়ক পরামর্শ প্রদান  করা।  বিভিন্ন  সভা সেমিনারে অংশগ্রহণ করে শ্রেষ্ঠ জাতি গঠনে করণীয় বিষয়ে বক্তব্য প্রদান। এছাড়া বিভিন্ন বিশেষ দিবস উপলক্ষে,  সিরাত বিষয়ক, আলোচনা, কবি সাহিত্যিকদের জন্ম মৃত্যু দিবসের আলোচনায় অংশগ্রহণ করা। সমাজ  পরিচালনায় দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের বিশেষ নির্দেশনামূলক পরামর্শ  দান করা।

শিক্ষকদের রাজনীতি  না করাই  শ্রেয়। উপরন্তু  শিক্ষকরা রাজনীতিকদের পরামর্শক  হিসেবে  কাজ  করবেন। সমাজ  রাষ্ট্র  পরিচালনায় পরামর্শ প্রদান  করে বিভিন্ন  দৈনিকে আর্টিকেল  লিখা। যে বিষয়টি  রাজধানী  ঢাকার চট্টগ্রাম  ও রাজশাহীর  বিভিন্ন  বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষকরা করলেও এক্ষেত্রে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কলেজ  শিক্ষকরা অনেক অনেক পিছিয়ে। অথচ সব শিক্ষকদের দায়িত্ব কর্তব্য একই।

মো. নুর উল্লাহ  আরিফ শিক্ষক, বেগম রহিমা ইসলাম  কলেজ, শশিভূষণ, চরফ্যাশন, ভোলা

সহকারী  সম্পাদক, দৈনিক  উপকূল বার্তা।

মোবাইল  নং ০১৭১৯-৯৩৪৫৭৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *