প্রফেসর মোঃ মোসলেমউদ্দীন শিকদার ।।
১৯৪৮ সালে রাজধানী ঢাকায় মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদাদানের যে উত্তাল আন্দোলন শুরু হয়েছিল তার ঢেউ খুব সহজে এসে যায় বরিশালে। কারণ রাষ্ট্রভাষার জন্য গঠিত কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ছিলেন বরিশালের কৃতি সন্তান কাজী গোলাম মাহবুব। এছাড়াও ওই কমিটিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ভোলার শামসুল আলম, বরিশালের আব্দুর রহমান চৌধুরী (বিচারপতি) আখতার উদ্দিন আহমেদ, এস.ডব্লিউ লকিতুল্লাহ, অনিল দাস চৌধুরী সহ বৃহত্তর বরিশালের অনেক ভাষা সৈনিক। শুধু তাই নয় ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির সাংস্কৃতিক চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করেছিলেন বৃহত্তর বরিশালের কবি সাহিত্যিক সাংবাদিক ও শিল্পীরা। এদেরমধ্যে অধিকতর উল্লেখযোগ্য কয়েকজনের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি বক্ষ্যমান নিবন্ধের সীমিত কলেবরে প্রদত্ত হলো।
১) কাজী গোলাম মাহবুব (১৯২৭-২০০৬) :
ভাষা আন্দোলনের সাথে যে নামটি অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত তিনি হচ্ছেন বরিশালের অন্যতম কৃতি সন্তান অ্যাডভোকেট কাজী গোলাম মাহবুব। ১৯২৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর তৎকালীন বাকেরগঞ্জ জেলার গৌরনদী থানার লাখেরাজ কসবা গ্রামে এক ঐতিহ্যবাহী সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে এই ভাষাসৈনিক জন্মগ্রহণ করেন। নিখিল বঙ্গ কৃষক প্রজা পার্টির বরিশাল অঞ্চলের অবিসংবাদিত কৃষক নেতা তার পিতা জনাব আব্দুল মাজেদ গাজী (১৮৮৪-১৯৬৬) ছিলেন শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের দক্ষিণ হস্ত স্বরূপ। কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি (১৯৪২-৪৫) কাজী গোলাম মাহবুব, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ কলকাতায় এ.কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাসিম, নেতাজী সুভাষ বসু, মহাত্মা গান্ধী, জওহেরলাল নেহেরু, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ প্রমুখ মহান নেতাদের সান্নিধ্য লাভ করেন। রাজনীতির ত্রিকালদর্শী এই ভাগ্যবান ব্যক্তিত্ব ব্রিটিশ বিরোধী ও পাকিস্তান আন্দোলনের অভিজ্ঞতা নিয়ে মহান ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সফল নেতৃত্ব দেন। ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর এ গঠিত ‘তমদ্দুন মজলিস’ কাজী গোলাম মাহবুবকে ভাষা আন্দোলনের প্রথম প্রেরণা দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও মিরপুর বাংলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ আবুল কাশেম ছিলেন তমদ্দুন মজলিশের প্রতিষ্ঠাতা ও ভাষা আন্দোলনের অগ্রনায়ক। কাজী গোলাম মাহবুব ২০০০ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটির সম্মাননা, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে একুশে পদক সহ প্রায় ডজন খানেক সম্মাননা লাভ করেন।
২) অ্যাডভোকেট এম শামসুল আলম (১৯২৮-২০১৯) :
তৎকালীন ভোলা মহকুমাধীন দৌলতখাঁন থানার হাজিপুর গ্রামের মৌলানা গোলাম রহমান পন্ডিতের পুত্র। তিনি ১৯৪৮ সালে বরিশাল বিএম কলেজ থেকে বি.এ, ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেবে এম.এ এবং ১৯৫২ সালে এলএলবি পাশ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যয়নকালে ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন। ১৯৪৮ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা রশিদ বিল্ডিং এর অধ্যাপক আবুল কাশেমের সভাপতিতে এক সভায় তাকে আহবায়ক করে ভাষা সংগ্রাম পরিষদের এক কমিটি গঠিত হয়।
৩) মোহাম্মদ মুজিবুল হক (১৯৩০-২০১৯) :
বর্তমান ঝালকাঠি জেলার গাভা গ্রামে ১৯৩০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শেখ মোবারক উদ্দিন সরদার এলাকার একজন মান্যগণ্য ব্যক্তি ছিলেন। তিনি চাখার ফজলুল হক কলেজ থেকে আই.এ এবং বরিশাল বিএম কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে বি.এ পাস করেন। তিনি ১৯৫১-৫২ সালে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ভিপি ছিলেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি এক মাস কারাবরণ করেন। ১৯৫৪ সালে সিএসপি অফিসার হন এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন পূর্বক সসম্মানে সচিব পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
৪) মোহাম্মদ শামসুল হক চৌধুরী (১৯২৭-২০০৮) :
ভাষা আন্দোলনকালে পূর্ববাংলা মুসলিম ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ শামসুল হক চৌধুরী পিরোজপুর জেলার দুর্গাপুর গ্রামে ১৯২৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সহ গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দায়িত্ব পালন করেন। মাতৃভাষার মর্যাদা দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে একজন বলিষ্ঠ প্রতিবাদী হিসেবে তিনি কয়েকবার কারাবরণ করেন।
৫) ব্যারিস্টার আখতার উদ্দিন আহমদ (১৯২৫-৯৮) :
তৎকালীন নিখিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের সভাপতি জনাব আখতার উদ্দিন আহমদ ঝালকাঠি সদর থানার নবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দেশ স্বাধীনের পরে সৌদি সরকারের অধীনে গুরুত্বপূর্ণ দাযিত্ব পালন করে তিনি সৌদিতে ইন্তেকাল করেন এবং তাকে মদিনায় জান্নাতুল বাকীতে দাফন করা হয়। ভাষা আন্দোলন ও ইসলামী আন্দোলনে তাঁর অবদান অপরিসীম।
৬) বিচারপতি আব্দুর রহমান চৌধুরী (১৯২৬-৯৪) :
বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ থানাধীন উলানিয়ার জনাব আব্দুর রহমান চৌধুরী ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম চৌকস নেতা। ১৯৪৮ সালের পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর পূর্ব পাকিস্তান সফরে এলে ডাকসুর ভিপি অরবিন্দ বোস ও জিএস (পুনঃনির্বাচিত) গোলাম আযমসহ মুসলিম ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে নিয়ে এক পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যুর মাস দুয়েক পরে পাক প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান সপরিবারে ঢাকায় আসেন। ১৯৪৮ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়াম মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তাঁকে প্রদত্ত স্মারকলিপিতে রাষ্ট্রভাষা বাংলা ছাড়া ও শিশুরাষ্ট্রর সামগ্রিক সমস্যাবলি তুলে ধরেন ফজলুল হক হলের সাবেক জিএস ও ডাকসুর দু’বারের নির্বাচিত (১৯৪৬-৪৮) জিএস তুখোর ছাত্রনেতা গোলাম আযম। উল্লেখ্য এই ঐতিহাসিক স্মারকলিপিটি প্রণয়ন করেন তৎকালীন সলিমুল্লাহ হলের ভিপি ও বরিশালের অন্যতম কৃতি সন্তান বিচারপতি আব্দুর রহমান চৌধুরী। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দুর্লভ দলিল বটে।
৭) ভাষা সৈনিক চুন্নু মিয়া, ভোলা (১৯৩১-২০০৭) :
জনাব রেজা-ই-করিম চৌধুরী চুন্নু মিয়া ১৯৩১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ভোলা জেলাধীন বোরহানউদ্দিন উপজেলার কুতুবা ইউনিয়নে আব্দুল জব্বার মিয়ার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫১-৫২ সালে ঢাকা কলেজে অধ্যয়ন করার সময় তিনি ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন এবং ভাষা সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দের সাথে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ৫২ এর রক্ত ঝরানো একুশের রাত থেকে পুর্ণ একমাস তিনি ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে কারাবরণ করেন। বিগত ২০০৭ সালে ৩ মার্চ তারিখে বার্ধক্য জনিত কারণে প্রায় পাঁচ বছর ব্রেনস্ট্রোক করে শয্যাগত অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।
৮) সৈয়দ আশরাফ (১৯২৯-২০১০) :
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজে কর্মরত ডাক্তার ফজলুল হক মিছিলে গুলিবিদ্ধ সালামের রক্তমাখা জামাটি নিয়ে দেন তার অনুজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.কম শেষবর্ষের ছাত্র পটুয়াখালীর সৈয়দ আশরাফ হোসেনকে। শহীদ সালামের রক্তমাখা জামা নিয়ে ওই সময় পটুয়াখালীতে তিনি একাধিক সভা ও শোভাযাত্রা করেছেন। যা স্থানীয় ছাত্র-জনতাকে ভাষা আন্দোলনে প্রেরণা যোগায়।
৯) ডাঃ আব্দুল বাসেত (১৯২৮-৭০) :
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী নিবাসী ডাক্তার আব্দুল বাসেত ১৯৫২ সালের সালে রক্তঝরা উত্তাল দিনগুলিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ছাত্রাবস্থায় ১৯৪৯-৫৫ ভাষা আন্দোলন থেকে তিনি যে প্রেরণা পান মৃত্যু পর্যন্ত তিনি তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছেন। চিকিৎসক হিসেবে তিনি কোন রোগীকেই মাতৃভাষা বাংলা ব্যতীত ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন বলে জানা যায় না। আমাদের দেশে একাত্তরের স্বাধীনতা লাভের পরেই মেডিকেলসহ উচ্চতর স্তরে মাতৃভাষা শিক্ষার বাহন হয়েছে। অথচ ডাক্তার আব্দুল বাসিত সেই পাকিস্তান আমলেই মাতৃভাষায় তিন খন্ডে সমাপ্ত ম্যাটেরিয়ামেডিকা সহ মডার্ন মেডিসিন শীর্ষক ডাক্তারি বই লিখে ও প্রকাশ করে সারাদেশে ভূয়সি প্রশংসা ও জনপ্রিয়তা কুড়িয়েছেন।
বরিশালে কবি সাহিত্যিক ও শিল্পীদের ভূমিকা :
বর্তমান বিষয়ে সংক্ষেপে উল্লেখ করতে হয় যে মির্জাগঞ্জের জনাব আলী আশরাফ রচনা করেন মাতৃভাষা বাংলার স্বপক্ষে সারগর্ভ প্রবন্ধ, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ রচিত বিখ্যাত কবিতা ‘কোন এক মাকে’, আব্দুল লতিফের গান- ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা নিতে চায়, আর সর্বোপরি তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের মতান্তরে ঢাকা কলেজের ছাত্র আবদুল গাফফার চৌধুরী বিরচিত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি.. আজও নতুন করে মাতৃভাষার চেতনা উজ্জীবিত করে গোটা দেশবাসীকে। উক্ত গানের সুরকার প্রথমে জনাব আবদুল লতিফ (১৯২৫-২০০৫) ও পরে শহীদ আলতাফ মাহমুদ (১৯৩৩-৭১), এরা সবাই বরিশালের গর্বিত সন্তান।
বরিশালের শ্রেষ্ঠ মহিলা কবি বেগম সুফিয়া কামাল (১৯১১-৯৯), কবি ওবায়দুল্লাহ খান (১৯৩৪-২০০১), কবি এ.কে জয়নুল আবেদীন (১৯২০-৮০) ও অধ্যাপক সরদার ফজলুল করিম (১৯২৫-২০১৪) ভাষা আন্দোলনের অবদানের জন্য এদের প্রায় সকলেই বাংলা একাডেমী পুরস্কার পান। সোনা সোনা, লোকে বলে সোনা; আমার দেশের মতো এমন দেশ কি কোথাও আছে ইত্যাদি দেশাত্মবোধক এবং আহা আটই ফাল্গুনের কথা আমরা ভুলি নাই ইত্যাদি গানের সুরকার জনাব আবদুল লতিফ ১৯৭৯ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন ও ২০২০ সালে বরিশালে কবি এ.কে জয়নুল আবেদীন ফাউন্ডেশন কর্তৃক মরনোত্তর সম্মাননা লাভ করেন।
অন্যান্য কতিপয় উল্লেখযোগ্য ভাষাসৈনিক :
এছাড়াও বরিশাল অঞ্চলের খ্যাতিমান ভাষাসৈনিক, তুখোর সাংবাদিক ও দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া [১৯১১-৬৯], নুরুল ইসলাম খান (সুলতান) [১৯২১-৮১], ডাঃ আজাহার উদ্দিন আহমদ [১৯০৯-২০১১], কাজী বাহাউদ্দিন আহমদ [১৯২৫-৯৮], সাবেক মন্ত্রী শহীদ এ্যাডভোকেট আবদুর রব সেরনিয়াবাত [১৯২১-১৯৭৫], পটুয়াখালীর (বাউফল) এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ এমদাদ আলী [১৮৯০-১৯৬৯] এবং সর্বোপরি কিংবদন্তি নেতা শের-ই-বাংলা এ.কে ফজলুল হক প্রমুখ ভাষা আন্দোলনে অসামান্য অবদান রেখেছেন।
ভাষাসৈনিক হিসেবে শের-ই-বাংলা এ.কে ফজলুল হক (১৮৭৩-১৯৬২) :
১৯৪৮ সালে যুক্তবাংলার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা একে ফজলুল হক কোলকাতা ছেড়ে যখন ঢাকায় এসে একমনে হাইকোর্টে ওকালতি শুরু করেন, মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দানে ভাষা আন্দোলন তখন তুঙ্গে। উল্লেখ্য ওই সময় ভাষা আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন অধ্যাপক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে তমদ্দুন মজলিস। তৎকালীন নাজিমুদ্দিন সরকার যখন ফজলুল হকের ঢাকা আগমন ঠেকাতে পারলেন না, তখন তারা তাকে অ্যাডভোকেট জেনারেল পদ দান করে অনেকটা দুশ্চিন্তা মুক্ত হলেন। কিন্তু ভাষা আন্দোলনের ব্যাপারে ফজলুল হক নীরব দর্শক হয়ে থাকতে পারলেন না। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা পূর্বক পুরাতন হাইকোর্ট ভবন থেকে ফজলুল হকের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। পুলিশ ছাত্রদের বেপরোয়া লাঠিচার্জ করে। অনেক ছাত্র আহত হয়। আহত হক সাহেবকে ধরাধরি করে হাইকোর্ট থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে হাঁটুর ব্যান্ডেজ করা হয়। এই ব্যথায় তিনি আজীবন কষ্ট পান। একসময় তাকে রিভলবিং চেয়ারে বসে যাতায়াত করতে হত।
১৯৫৪ সালে একে ফজলুল হক সরকারের মূখ্যমন্ত্রী হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ ও বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার অনুমোদন দান করেন। প্রদেশিক মূখ্যমন্ত্রীর বাসভবন হিসেবে বর্ধমান হাউসকে বাংলা উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলা একাডেমির মূল ভবন হিসেবে বরাদ্দ এবং ১৯৫৫ সালের ডিসেম্বরে প্রাদেশিক গভর্নর হিসেবে তা উদ্বোধন করেন। হক সাহেবের অন্যতম ভাতিজা, সাবেক শিক্ষা ও রেজিষ্ট্রেশন মন্ত্রী সৈয়দ আজিজুল হক নান্না মিয়া (১৯১৫-৯২) আন্দোলনের মর্যাদা দানকল্পে উপরিবর্ণিত ঐতিহাসিক কর্মসূচি সমূহ বাস্তবায়ন করেন। এভাবে দেখা যায় যে ভাষা আন্দোলনের সূচনা লগ্ন থেকে একে রাষ্ট্রভাষা মর্যাদা দানের শীর্ষ দায়িত্ব পালন-পূর্বক শেরেবাংলা একে ফজলুল হক যে অবদান রেখে গেছেন তা সমকালীন খুব কম নেতার পক্ষেই সম্ভবপর হয়েছে।
লেখক পরিচিতি
প্রফেসর মোঃ মোসলেমউদ্দিন শিকদার
অধ্যক্ষ (অবঃ), সরকারি গৌরনদী কলেজ
মোবাইল : 01712233200
ইমেইল : bc22.gnd@gmail.com
তথ্যপঞ্জী :
এম.আর মাহবুব, কাজী গোলাম মাহবুব ও ভাষা আন্দোলন, হক্কানী পাবলিশার্স, ঢাকা, ২০০৫।
আসাদ বিন হাফিজ, ডান বাম রাজনীতি ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, প্রীতি প্রকাশন, ঢাকা, ১৯৯০।
মুকুল চৌধুরী সম্পাদিত ভাষা আন্দোলন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ, ঢাকা, জুন, ১৯৯৩।
রূসেলি রহমান চৌ্ধুরী, বরিশালের প্রয়াত গুণীজন, ইউনিভার্সিটি বুক পাবলিশার্স, ঢাকা, ২০০৬।
এ্যাডভোকেট নিজামুল হক নিজাম, গুণীজনদের বরিশাল, বাংলাবাজার, ঢাকা, ২০২১।