ইসরাত জাহান ||
আলহামদুলিল্লাহ
হাতে পেলাম মুক্তবুলি আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসের
২৩ তম সংখ্যা। ৩২ পৃষ্ঠার চমৎকার প্রচ্ছদের সুন্দর একটা পত্রিকা। গল্প,কবিতা, সময়োপযোগী অনেক বিষয় নিয়ে সমৃদ্ধশালী লেখকদের লেখা নিয়ে এবারের সংখ্যা বেরিয়েছে। মাত্র তিরিশ টাকা দামের এই পত্রিকাটা দেশের সর্বত্রই পাওয়া যাচ্ছে। এই সংখ্যায় অনেক সমৃদ্ধশালী লেখকের লেখা প্রকাশিত হয়েছে। সাহিত্যিক চর্চা ও পাঠের গুরুত্ব, কন্টেন্ট রাইটিংয়ের কলা কৌশল, ঘুম ভেঙ্গে দেখি কচ্ছপ হয়ে গেছি, সুন্দর গল্প ও মুক্তবুলি লেখক সম্মেলনে প্রাণের উচ্ছ্বাস ও আরো অনেক ভালো গল্প কবিতা দিয়ে ভরপুর।
আমরা যারা লিখতে চাই নিজের লেখাকে কাগজের পাতায় দেখতে চাই তাদের জন্য মুক্তবুলির স্লোগান “পাঠক যারা,লেখক তারা”
তাই পড়ুন লিখুন মুক্তবুলিকে সঙ্গে রাখুন।
অনেক স্বনামধন্য লেখকদের সাথে আমার লেখাও ছাপা হয়েছে। আপনাদের সুবিধার্থে আমার লেখাটা নীচে যুক্ত করে দিলাম। সবাইকে ধন্যবাদ। সুস্থতায় থাকুন, ভালো থাকুন।
~~ আমি আবার ফিরে পেতে চাই ~~
আমার কেন যেন মনে হয় শহরের এই কোলাহল এসব ছেড়ে আমি চলে যাবো,আমার গ্রামে যেখানে আমি বড় হয়েছি। ওখানে গিয়ে শুরু করবো নতুন জীবন।ওখানে গিয়ে একটা টিনের ঘর বানাবো,থাকবে বিশাল বড় খোলা বারান্দা । একটা ঘরেই থাকবে সব কিছু, এক পাশে মাঁচা পাতা সেখানে ধানের বেড়ি, মাটির কুলা, গুড় ভর্তি মাটির হাড়ি, মোরব্বা বানানোর পাকা চাল কুমড়ো। আর এক পাশে থাকবে খাবারের যায়গা, সেখানে শিঁকেয় ঝুলিয়ে রাখবো আচারের বয়ম,আর নোনা ইলিশ। আর কাল শিটে পড়া পাতিলে ঝোলা গুড়।
আর ঘরের বিছানায় পাতব বড় বড় ফুলের ছাপার চাদর। আর টিনের চালে খড় বিছিয়ে উঠিয়ে দেব চাল কুমড়ো আর লাউয়ের লতা।ঘরের দুপাশে থাকবে দুটো পুকুর একটা মাছের জন্য আর অন্যটা ভেতরে আমার গোছলের।মাছের পুকুরের চার পাশে লাগিয়ে দেব ভুঁই কুমড়ো, টমেটো, আর ঢ্যাঁড়শের চারা। আর আমার ভেতরের পুকুরটির ঘাট হবে লাল ইট দিয়ে বাঁধানো। সেখানে বসে শীতের দিনে আমি ঝামায় পা ঘষব। আর ডলে ডলে সর্ষের তেল মাখবো গায়ে পায়ে। বরফ ঠান্ডা পানিতে গোছল করে চুল এলিয়ে শুকিয়ে নেব পুকুর ঘাটে বসে। আমি উঠোন ঘিরে লাগাবো কালো বেগুনের গাছ।দোপাটি ,কাঠ মল্লিকা, হাসনা হেনা, আর কামিনী ফুলের গাছ। সদর ঘরের জানালার পাশে থাকবে কদবেলের গাছ যার গায়ে মৌচাক দেখবো আমি মুগ্ধ হয়ে। ঘরের বারান্দায় বসে দেখবো ঝুমঝুম বৃষ্টি আর উপভোগ করবো টিনের চালের বৃষ্টির শব্দ ।
আর দেখবো ঝড়ে পড়ে যাওয়া আম কুড়িয়ে পাড়ার ছেলে মেয়েরা কেমন আমোদ করছে ।
দেখবো আমার মাছের পুকুরের মাছ বৃষ্টি দেখে আনন্দে উপরে উঠে এসেছে। আর আমার হাঁসেরা প্যাক প্যাক করে কাদায় হেঁটে যাচ্ছে। আর মা মুরগিটা পরম যত্নে নিজের ডানা মেলে বাচ্চাদের আগলে রেখেছে। বৃষ্টির দিনে আমার গরুরা দিন দুপুরে গোয়াল ঘরে খড় খাচ্ছে। আমার বাড়ির কামলা কলাপাতায় মাথা ঢেকে এসে কাচারি ঘরে বসে হুক্কা টানছে। কাজের মহিলা ঢেকিতে ধান বানছে। আর আমার মা পরম মমতায় হাজারো স্বপ্ন মনের মধ্যে নিয়ে নকশি কাঁথা সেলাই করছে।
আমি কেবল ডাল ভাত আর সাদামাটা ঝোল ঝোল তরকারি খাব। গরমের ফুলকপি আর শীতের পটল তরকারি দেখতে হবেনা। আমার বাড়ির চারপাশের আঙিনায় আমার লাগানো তরকারি কোচর ভর্তি করে নিয়ে আসবো। মাছের ঝোলে দেব কুমড়ো আর ঝিঙে। আর যেদিন আমার হাঁসেরা ডিম দেবে সেদিন রান্না হবে ডিম ভুনা। আমার কলা গাছে কলার মোচা আমাকে লোভ দেখাবে আর আমি রান্না ঘর পুটি মাছের ঝোলে খুন্তি চালাতে চালাতে জানালায় ভেসে আসা বাতাবি লেবু ফুলের গন্ধে মন হারাবো। কখনও থিতু হয়ে বসে শীল নোড়ায় পিষে নেব জিরে টুকু। সরিয়ে রাখবো যত্ন করে , প্রতিবেশীর দেয়া সর্ষে ইলিশের তরকারিটা।আলনায় সাজিয়ে রাখবো লাল ,নীল, গোলাপী, বেগুনি ছাপার শাড়ি গুলো। বিকেলে গা ধুয়ে ট্যালকম পাউডার মেখে , খোঁপায় জবা ফুল গুঁজে দিয়ে চলে যাবো আমার চন্দনা নদীর ধারে নির্মল বাতাস গায়ে লাগতে।
সন্ধ্যার পরে বারান্দার খুঁটিতে হেলান দিয়ে পা মুড়ে বসে শুনবো রেডিও তে গান। আর খবরের কাগজের উপর পেঁয়াজ কুচি, ঝাল চানাচুর, মুড়ি আর সরষের তেল দিয়ে মেখে সবাই এক সাথে বসে হৈ চৈ করে খাব।
পূর্নিমার রাতে দাওয়ায় বসে শুনবো বাড়ির রাখালের পল্লী গান, আর দেখবো রান্নাঘরের টিনের চালের উপর বসে থাকা লক্ষীপেঁচাটাকে ,আর মেঠো ইঁদুর গুলোর ছোটাছুটি । আর আমি মুগ্ধ হবো পুকুর পাড়ে থোকায় থোকায় জোনাকি দলের খেলা দেখে।
ঠিক তখনই নিভু নিভু হ্যারিকেনের সলতেটি অপেক্ষা করবে আমার ঘরে ফেরার।
ইসরাত জাহান, খুলনা থেকে