চাঁপাতলা নদী পাড়ের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও বর্তমান

কামাল উদ্দিন তুহিন
ঝালকাঠি জেলার সদর উপজেলার একটি ইউনিয়ন নবগ্রাম। সবুজে ভরা, পাখির কূজনে মুৃখরিত করা, অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত ছায়া ঘেরা এই ইউনিয়নে ছড়িয়ে আছে ছোট নদী কিংবা খাল। যেখানে স্রোতের কলকল ধ্বনি নীরবতা ভেঙে দেয়। ঝালকাঠি থেকে বাসন্ডা, চামটা, বাউকাঠি, নবগ্রাম হয়ে শিকারপুরের দিকে চলে গেছে একটি নদী, যার নাম বাসন্ডা নদী। এরই একটি শাখা বাউকাঠি থেকে পশ্চিমদিকে রামপুর, জগদীশপুর, শতদশকাঠি’র মাঝ দিয়ে কীর্তিপাশা ইউনিয়নের অন্তর্গত ভীমরুলি পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। ছোট নদিটির নাম ‘চাঁপাতলা’। চাপাতলার দুই পাড়ে রয়েছে অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সজ্জিত গ্রাম গুলি। আর সেখানে বাস হাজার হাজার সহজ সরল সাধারণ মানুষের। চাঁপাতলা পাঁড়ের রয়েছে অতীত সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য । গ্রামগুলিতে রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি’র বর্ণাঢ্য সমারোহ । আছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ধর্মীয় অনুষ্ঠান । বিভিন্ন গ্রামের পবিত্র ভুমি বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের জন্মে ধন্য হয়েছে। চাঁপাতলার নৌ-যোগাযোগ এক গুরুত্বপুর্ন পথ । ঝালকাঠি থেকে বাসন্ডা নদী হয়ে এই চাঁপাতলার বুক দিয়েই আতা, মাদ্রার মধ্য দিয়ে স্বরূপকাঠি যেতে হয় । চাপাতলা নদী পাড়ের মানুষের সুখ-দু:খ, আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্নার সচিত্র ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে এই বইয়ে। ‘চাঁপাতলা’ কবির কবিতায় স্থান করে নিয়েছে । তরুন কবি রবিন্দ্রনাথ মন্ডলের লেখা চাপাতলার ‘স্রোত’ কবিতাটি নিন্মরুপ,

পুর্ব দিকে বাউকাঠি আর
পশ্চিম দিকে ভীমরুলী,
বয়ে গেছে চাঁপাতলা
কলকল ধ্বনি তুলি ।
দুপাড়েতে দাড়িয়ে আছে
সারি সারি গাছ,
নৌকা চলে, ট্রাক চলে
পুরো বারোমাস।
জেলে ধরে জাল ফেলে
চিংড়ি চেলা পুঁটি,
পল্লীবধু কলসি কাঁখে
আসে ঘাটে ছুটি।
রৌদ্রতাপে যখন মনে
জমে কষ্টের দল,
জুড়িয়ে দেয় প্রাণ তখন
চাপাতলার জল।
ইটের রাস্তা চলে গেছে
দিয়ে নদীর পাশ,
লাগত ভাল থাকত যদি
শরৎকালের কাঁশ।
নদীর পাড়ে আছে বাজার
আছে বাড়ি-ঘর,
দেখি কোথাও হোগোল বনে
সাজে নদীর চর।
বর্ষাকালে পেয়ারা বোঝাই
নৌকা যখন ভাসে,
মনে হয় চাঁপাতলা
মনের সুখে হাসে।
কার না ভাল লাগে-বলো
দেখতে অনেক রূপ!
ইচেছ করে যখন খুশি
দেই জলে এক ডুব।
নারী যেমন সাজতে গিয়ে
রাঙায় আপন ঠোঁট,
হৃদয় সাজাই তেমনি-দেখে
চাঁপাতলার স্রোত।
এখানে চাপাতলার পরিচিতি, সৌন্দর্য অতি চমৎকার ভাবে ফুটে উঠছে।

আবার কবি রবীন্দ্রনাথ মন্ডল গানেও চাপাতলাকে বন্ধু হিসেবে অভিহিত করেছেন। চাপাতলাকে নিয়ে তার মনের অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছে এ গানটিতে।
(ওরে) চাঁপাতলারে বন্ধু বানাইলাম তোরে।
তোর ঐ ঢেউয়ের তালে তালে ভাসাইবি মোরে।
তোরে কত ভালোবাসি আমি ,
জানে তা ওই অন্তর্যামী,
দেখতে তোরে বারে বারে ছুইটা যাই পাড়ে।
সকাল সন্ধ্যা সারাটি ক্ষণ,
দেখতে তোরে চায় যে এ মন,
মধুর লাগে যখন মাঝি গান ধরে জোরে।
বান্ধিলাম বন্ধুত্বের জালে,
যাইসনা ভুইলা কোন কালে,
স্বপন যে দেখি তোরে ঘুমের ঘোরে।

এমনিভাবে এই বইয়ের পরতে পরতে লেখক তাঁর চমৎকার লেখনীর মাধ্যমে চাঁপাতলা নদী পাড়ের ইতহাস ও ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরছেন। যা হয়ে উঠেছে সুখপাঠ্য। বইটির পরিবেশক ঝালকাঠির প্রতিভা শিল্পীগোষ্ঠী। বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে লেখকের মোবাইল নম্বরে (০১৭১৮১৫৬৫৩৪) যোগাযোগ করতে পারেন। বিকাশে মূল্য পরিশোধ করে বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারবেন। বইটির শুভেচ্ছা মূল্য দুইশত টাকা।

বইটি সম্পর্কে ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের সভাপতি চিত্তরঞ্জন দত্ত লিখেছেন- ‘চাঁপাতলা পাড়ের ইতহাস ও ঐতিহ্য’ বইয়ে লেখক রবীন্দ্রনাথ মন্ডল চাঁপাতলা নদী পাড়ের ইতিহাস-ঐতিহ্য বিবৃত করতে গিয়ে অকৃপণভাবে পুরো ‘নবগ্রাম’ ইউনিয়নবাসীর জীবনমান, সমাজ-সংস্কৃতি, যোগাযোগ, পেশা, শিক্ষা, বিনোদন, স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব, একাত্তর সালে হানাদারদের বর্বরতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব সবকিছু সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন।

লেখক পরিচিতি
জন্ম: সবুজ শ্যামল গ্রামীণ পরিবেশে যাঁর হৃদয়কে আকৃষ্ট করে, যার লেখনীতে ফুটে ওঠে ওঠে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কিংবা সমাজ বাস্তবতা, তিনি কবি ও লেখক রবীন্দ্রনাথ মন্ডল। জন্ম ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দের ১০ ডিসেম্বর ঝালকাঠি সদর উপজেলার ৩নং নবগ্রাম ইউনিয়নের অন্তর্গত চাঁপাতলার দুই পাড়ে বিস্তৃত ছায়াঘেরা, পাখি ডাকা জগদীশপুর গ্রামে।
বংশ পরিচিতিঃ পিতা শ্রী ধীরেন্দ্রনাথ মন্ডল অবসরপ্রাপ্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক, মাতা শ্রীমতি মুকুল রানী একজন গৃহিনী । দুই ভাই বোনের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ছোট।
শিক্ষা জীবনঃ তিনি প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহন করেন নিজ গ্রাম জগদিশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পরবর্তীতে ভীমরুলী দ্বারকানাথ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পঞ্চম ও অষ্টম উভয় শ্রেনিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিপ্রাপ্ত এই মেধাবী ছাত্র ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে উক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ২০০১ খ্রিস্টাব্দে ঝালকাঠি সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরিক্ষায় উত্তীর্ন হন। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হওয়া সত্বেও সাহিত্যের প্রতি আগ্রহী হওয়ায়বরিশাল বিএম কলেজে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন এবং ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে সন্তোষজনক নম্বর পেয়ে চার বছর মেয়াদী স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ন হন। ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে উক্ত কলেজ থেকেই বাংলা বিভাগে এম.এ (শেষ পর্ব) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেনিতে অষ্টম স্থান অর্জন করেন।
কর্মজীবনঃ ২০১০ খ্রিস্টাব্দে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে বর্তমান শতদশকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন ।
সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চাঃ সাহিত্য ও সু-সংস্কৃতির পূজারী এ কবি ও লেখক নিজগ্রাম জগদীশপুরে ১৪০৮ বঙ্গাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন শিক্ষা-সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংগঠন ‘প্রতিভা শিল্পী গোষ্ঠী ; প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তিনি এর সভাপতির দায়িত্য পালন করছেন। এছাড়া তিনি স্থানীয় লোক-সংস্কৃতি সমন্বয় পর্ষদের কার্যনির্বাহী সদস্য।
একজন ভাল আবৃত্তি শিল্পী ও সাবলীল উপস্থাপক হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে । তিনি ‘প্রতিভা’ ও ‘শিশির ভেজা দূর্বা’ নামে দুটো সাহিত্যপত্র সম্পাদনা করেন ।
এপর্যন্ত তার পাঁচটি কাবগ্রন্ত ও একটি গীতগ্রন্ত প্রকাশত হয়েছে এবং পাঠকের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রকাশের অপেক্ষায় আছে আরও কয়েকটি নাটক ও উপন্যাস।
বৈবাহিক জীবনঃ ২০১৩ খৃষ্টাব্দে তিনি সংস্কৃতিমনা ও শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত অর্চনা মিস্ত্রী-এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
প্রত্যাশাঃ নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষা ও প্রসারে সচেষ্ট এ কবি ও লেখকের প্রত্যাশা- ‘তার লেখার মাধ্যমে অচেতন মানুষের হৃদয়ে সচেতনতার সৌরভ ছরিয়ে পড়বে’।

 

কামাল উদ্দিন তুহিন

শিক্ষার্থী, অ্যানিমেল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদ
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

One comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *