জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের ইতিবৃত্ত: পর্ব ১৯

দ্বিতীয় লিওপোল্ডের জঙ্গিবাদ ও নৃশংসতায় নিহত হয় কঙ্গোর ১ কোটি মানুষ

king-leopold-of-belgium-congo-genocide

বেলজিয়ামের রাজা দ্বিতীয় লিওপোল্ড [রাজত্ব ১৭ ডিসেম্বর ১৮৬৫-১৭ ডিসেম্বর ১৯০৯]

দ্বিতীয় লিওপোল্ড ইতিহাসে কুখ্যাত হয়ে আছেন‍ ‍আফ্রিকান দেশ কঙ্গোয় গণহত্যার জন্য। বেলজিয়ামের রাজা ‍আফ্রিকার দেশ কঙ্গো কিনে নিয়ে সে দেশের জনগণকে দাসে পরিণত করে। ‍এই জঘণ্য অপকর্ম ঢাকা দেওয়ার জন্য তিনি লিওপোল্ড International African Society নামে ‍একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। সেই সংগঠনের বাহ্যিক রূপ ছিলো সমাজ সংস্কার। কিন্তু সাধুবেশে শয়তানের ভূমিকা পালনকারী ওই সংগঠনের ‍আড়ালে চলে দাস ব্যবসা। কঙ্গোর মানুষদের দিয়েই তিনি সে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠন শুরু করেন। কেউ তার ল‍ুণ্ঠনতন্ত্রের বিরোধীতা করলে তার ওপর নেমে ‍আসত ভয়াবহ অত্যাচার, অঙ্গচ্ছেদ, মৃত্যুদণ্ড। ‍এসব অপকর্ তিনি করতেন তার নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনীর দ্বারা। ‍এ বাহিনীর নাম ছিলো ফোর্ পাবলিক। রাজা লিওপোল্ডের নির্শে Force Publique’র অফিসাররা জনপ্রতি হাতির দাঁত ও রাবার সংগ্রহের কোটা ধার্ করে দিতেন। ‍এ কোটা পূরণে ব্যর্ হলে সরোচ্চ শাস্তি ছিলো মৃতুদণ্ড। কুমিরের চামড়ার চাবুক ছিল সর্বনিম্ন শাস্তি। রাজা লিওপোল্ডের নৃশংসতায় নিহত হয়েছিল কঙ্গোর প্রায় ১০ মিলিয়ন নাগরিক। মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্করের জন্য সেোবাহিনীর গুলি যাতে অপচয় না হয় সেজন্য প্রতি গুলির বিপরীতে ‍একটি করে মানুষের কাটা কব্জি ‍উর্ধ্বতন কর্তপক্ষের কাছে জমা দিতে হতো। মনে করা হ তো হাত কাটার ভয়ে কেউ হাতির দাঁত বা রাবার সংগ্রহে ‍আলসেমি করবে না। রোমহর্ষক পদ্ধতিতে ‍একটা কুফল দেখা দিয়েছিল, বনের ভেতর থেকে রাবার সংগ্রহের তুলনায় কাটা হাত সংগ্রহ করা অনেক সহজ ছিলো।ফলে কঙ্গোজিদরে মধ্যে যারা দুবৃত্তপনায় অভ্যস্ত ছিলো, তারা অন্যদের ‍উপর ‍আক্রমণ করে পরাস্ত লোকদের হাত কেটে জমা দিত।উপনিবেশবাদীরা কৌশলে ‍এ তথ্য গোপন করেছে।

আমেরিকার বিখ্যাত লেখক মার্ক টোয়েন রাজা লিওপোল্ডকে নিয়ে একটি বিদ্রূপাত্মক বই লিখেন “King Leopold’s Soliloquy; A Defense of His Congo Rule”। এই কিতাবে রাজা লিওপোল্ডের কঙ্গো শাসনামলে সেদেশের মানুষের দূর্দশার কথা তুলে ধরেন। সারা বিশ্বের স্কুলে পাঠ্য বই হিসাবে তার লেখা ‘হাকলবেরি ফিন’ কিংবা ‘টম সয়ার’ পড়ানো হয়, কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে লিওপোল্ডকে নিয়ে লেখা বই “King Leopold’s Soliloquy; A Defense of His Congo Rule” পাঠ্যতালিকাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। সচেতনভাবেই এটা করা হয় কারণ স্কুলের পাঠ্যপুস্তক নির্ধারণকারী কমিটির মতে ‘আফ্রিকার কোন ইতিহাস নেই।“

[বাংলাদেশ প্রতিদিন, বারিধারা ঢাকা, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯,মঙ্গলবার, পৃষ্ঠা ৪, কলাম ৮]

ভারতীয় সেনাবাহিনী ১৩ হাজার কাশ্মিরি নাবালক শিশু-কিশোর গুম করে

ভারতের সংবিধান থেকে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর কাশ্মীরে ১৩ হাজার নাবালক শিশু-কিশোর নিখোঁজ রয়েছে।  দেশটির প্রগতিশীল মহিলা সংগঠনের সদস্যরা বিষয়টি তথ্যসহ ‍উপস্থাপন করেন গণমাধ্যমের কাছে। দেশটির সমাজকর্মী ও বামপন্থী আন্দোলনের নেত্রী অ্যানি রাজা মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, ‘যে গ্রামগুলোয় আমরা গিয়েছিলাম, সেখানকার অধিকাংশ বাড়িতে ছোট ছোট ছেলে নিখোঁজ। এদের ধরে নিয়ে গিয়েছে সেনাবাহিনী ও আধা সেনা সদস্যরা।

ভারতের যোজনা কমিশনের সাবেক সদস্য ও সাবেক আমলা সঈদা হামিদের জন্ম কাশ্মীরে। ছোট থেকেই তিনি কাশ্মীরে বড় হয়েছেন। কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কাশ্মীরের পরিস্থিতি বোঝাতে গেলে বলতে হয়, এই উপত্যকার পরিস্থিতি এখন বড় বেশি শান্ত, বড় বেশি অবসাদগ্রস্ত। সমাজের বিভিন্ন স্তরের জনগণের সঙ্গে কথা বলার পরে আমরা প্রাথমিকভাবে যে হিসাবে পেয়েছি তাতে দেখা যাচ্ছে, ৩৭০ ধারা বিলোপের পর উপত্যকা থেকে নিখোঁজ হয়েছে প্রায় তেরো হাজার শিশু-কিশোর নাবালক।’

[ঢাকা টাইমস: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, আজকের বাংলাদেশ: ঢাকা টাইমস: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, দৈনিক যুগান্তর: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯]

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *