জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের ইতিবৃত্ত: পর্ব ২২

মাহমুদ ইউসুফ

যুদ্ধ আর যুদ্ধ
সমাজবেত্তারা বলেন, প্রাণিকূলের মধ্যে মানুষই হলো সবথেকে হিংস্র এবং নিষ্ঠুর। পেট ভরা থাকলে হাতের নাগালে পেলেও সিংহ তার খাদ্যের জন্য বাড়তি কোনো প্রাণী হত্যা করে না। যে ভয়ঙ্কর রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার সে-ও নাকি উদর পূর্তির পর আর উচ্চবাচ্য করে না। টানা ঘুম দেয় দিনভর। আর মানুষ? তার লোভের শেষ কখনো হয়নি। ক্ষমতার চূড়ায় উঠেও সে চেয়েছে আকাশকে টেনে নিয়ে এসে নিজের পায়ের কাছে বসাতে। লোভের এ নেশায় পড়ে আদিমকাল থেকে শুরু করে বর্তমান তক সে যুদ্ধ করে চলেছে অনবরত।

ঐতিহাসিকদের হিসেবে দেখা যায়, খ্রিস্টপূর্ব ৪ হাজার অব্দ থেকে খ্রিস্টীয় ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর তক ৬ হাজার বছরে পৃথিবীতে বড় ধরনের যুদ্ধ হয়েছে দেড় লাখের মতো। এরমধ্যে কোনো কোনো যুদ্ধ চলেছে একটানা ৪০০ বছর। যেমন- ক্রুসেড যুদ্ধ। খ্রিস্টপূর্ব যুগে রোম এবং কার্থেজের মধ্যে পিউনিক-ওয়ার চলেছে থেমে থেমে প্রায় ৩০০ বছর। মধ্যযুগে ইউরোপে হয়েছে শতবর্ষের যুদ্ধ এবং ৩০ বছর স্থায়ী ওয়ার অভ রোজেজ [War of Roses] তথা গোলাপের যুদ্ধ। ১৯ শতকের গোড়াতে হয়েছে একযুগ স্থায়ী নেপোলিয়নিক ওয়ারস [Napuleonic wars/1803-1815 ]। যার মধ্যে ছিলো ফ্রাঙ্কো-রাশিয়ান যুদ্ধ।

২০ শতকে হয়েছে দুই-দুটি বিশ্বযুদ্ধ। মাঝখানে হয়েছে রক্তক্ষয়ী কোরিয়ান যুদ্ধ, তিন-তিনটি আরব-ইসরাইল যুদ্ধ এবং দেড় যুগ স্থায়ী ভিয়েতনাম যুদ্ধ। তাম্রযুগ এবং আজকের মহাশূণ্য যুগের মাঝখানে বড় যুদ্ধগুলো ছাড়াও দেশে দেশে আর জাতিতে জাতিতে হয়েছে আরও বেশুমার যুদ্ধ। অঙ্কের হিসাবে কয়েক লাখ হবে এসব যুদ্ধের সংখ্যা। জাতিগত এবং বর্ণগত দাঙ্গার সংখ্যা তো হিসাবের বাইরে। মানুষের জিঘাংসায় এতসব যুদ্ধ এবং হানাহানিতে নিশ্চিহ্ন হয়েছে ১০ কোটিরও বেশি মানুষ। এটা সামরিক গবেষকদের হিসাব।
[সানাউল্লাহ নূরী, যখন সাংবাদিক ছিলাম, বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ সোসাইটি, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০০২, পৃ ৬৩]

১৮৫৭: দিল্লিতে দানবীয় দলন
১৮৫৭ সালের মুক্তিযুদ্ধে ইংরেজরা দিল্লিতে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের ভয়ানক তা-ব সৃষ্টি করেছিল। আধুনিকতা, গণতন্ত্র ও প্রগতিবাদের ফেরিওয়ালা দাবিদার ব্রিটিশরা সেদিন রক্তের নদী বয়ে দেয় দিল্লির রাজপথে। বিশেষ করে আলেম উলামাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হায়েনার মতো। এডওয়ার্ড দিল্লি শহরের হৃদয়বিদারক ঘটনবালির বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে লিখেছেন, ‘একমাত্র দিল্লি শহরে ৫০০ শ্রেষ্ঠ আলেমকে শূলবিদ্ধ করা হয়েছিল। জল্লাদদের বাধ্য করা হতো যাতে তারা বেশি সময় পর্যন্ত লাশ শূলের ওপর টাঙিয়ে রাখে। ময়দানে প্রতিষ্ঠিত শূলদণ্ডগুলো থেকে বারবার লাশ নামানো হচ্ছিল। আর তা দেখে সাম্রা জ্যবাদী শাসক ইংরেজদের কলিজা ঠাণ্ডা হচ্ছিল।
দিল্লির মুসলিম অধিবাসীদের উপর অমানুষিক অত্যাচার করা হয়। মির্জা গালিবের ভাষায়, কোনখানেই আমার লেশমাত্র নেই। কোনখানেই নেই সুন্দরের আভাস, মরণের দিন স্থির হয়েছে। সারারাত কেন কারো চোখে ঘুম আসেনি? দিল্লি শহরে যে ত্রাসের রাজত্ব পয়দা হয়েছিল মির্জা গালিবের ভাষায় তা ছিলো এরূপ: দিল্লি আর সেই মহানগরী নেই। তার দুর্গ, তার শহর, তার দোকানপাট, তার ফোয়ারা সবকিছুই গেছে। হিন্দু মহাজনেরা আছে কিন্তু ধনী মুসলমান আর নেই বললেই হয়। চেনাজানাদের মধ্যে এত লোককে খুন করা হয়েছে যে, আজ যদি আমার মৃত্যু ঘটে, শোকে চোখের পানি ফেলবে এমন কেউ আর নেই।’
কুখ্যাত ব্রিটিশ সেনাপতি হডসন নির্দয় অপমান সহকারে ৮২ বছর বয়স্ক সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফরকে গ্রেফতার এবং দুর্গে বন্দী করেন। হডসন সম্রা টের দুই পুত্রসহ পরিবারের ২৯ জন শিশু বালক-বালিকাকে দিল্লির রাজপথে গুলি করে হত্যা করল এবং নিষ্ঠুর হডসন সেই ২৯ জন বাচ্চার কাটা মাথা সম্রা টকে তোহফা দেয়।
[ফাহমিদুর রহমান সম্পাদিত মহাবিদ্রোহ ১৮৫৭, বদ্বীপ প্রকাশন, আগস্ট ২০০৯, পৃ ৭৯, ৪৬, ৫১]

শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ্‌ জাফরের কবর যেভাবে পাওয়া গিয়েছিল মিয়ানমারের  ইয়াঙ্গনে - BBC News বাংলা

কলম্বাইন হাই স্কুলে গণহত্যা

কলম্বাইন গণহত্যা আধুনিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একটি বিশেষ জায়গা দখল করে আছে। দুই কিশোরের দ্বারা পরিচালিত এই গণহত্যা পুরো দেশকে হতবাক করেছিল।
ডিলান কেলবোল্ড ও এরিস হ্যারিস ছিলো উচ্চ বিদ্যালয়ের দুজন সিনিয়র। উভয়ে মিলে ১৯৯৯ সালের ২০ এপ্রিল স্কুল দিবসের মাঝামাঝি সময়ে কলোরাডোতে লিটলটন শহরে কলম্বাইন হাই স্কুল আক্রমণ করে। তারা ১২ জন ছাত্র ও একজন শিক্ষককে হত্যা করে। কলম্বাইন হাইস্কুলের গণহত্যায় নিহতদের তালিকা ক্যাসি বার্নাল (১৭), স্টিভেন কারন (১৪), কোরি ডিপিউটার (১৭), কেলি ফ্লেমিং (১৬), ম্যাথু কেচটার, ড্যানিয়েল মাজার (১৫), ড্যানিয়েল ররবাউ (১৫), যার্চেল স্কট (১৭), ইশাইয়া শেলস (১৮), জন টমলিন (১৬), লরেন টাউনসেন্ড (১৬), কাইল ভ্যালাস্কুইজ (১৬)। উইলিয়াম “ডেভ” স্যান্ডার্স ছিলেন পেশায় শিক্ষক। তিনিও খুনের শিকার হন কিলারদের দ্বারা। তিনি মেয়েদের বাস্কেটবল এবং সফটবল কোচ এবং ব্যবসা ও কম্পিউটার ক্লাস শেখাতেন। তিনি দুই কন্যা এবং পাঁচটি নাতি-নাতনী রেখে যান। এদের হত্যা করার পর খুনি দুজনও আত্মহত্যা করে।
[https://bn.eferrit.com]

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *