আযাদ আলাউদ্দীন ।।
‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০২৩-এ বরিশাল বিভাগের শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিকা মনোনীত হয়েছেন মুক্তবুলি ম্যাগাজিনের লেখক ইসরাত জাহান ফেরদৌস। তিনি ঝালকাঠির রাজাপুর দক্ষিণ বাঘরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন। এর আগে তিনি রাজাপুর এবং ঝালকাঠি জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষিকা মনোননীত হন।
তিনি বলেন- পেশা জীবনের শুরু থেকেই নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করেছি। শিশুদের সান্নিধ্য সব সময়ই আমার কাছে স্বর্গ মনে হয়েছে। প্রাণ প্রিয় শিশুদের মাঝে উন্নত জীবনের স্বপ্ন বুনে চলেছি প্রতি নিয়ত। প্রতিনিয়ত চেষ্টা করেছি- ওদের মনের মত একজন হয়ে পরিপূর্ণ ভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের।
পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে জরুরি কোন প্রয়োজনে কখনোই কর্তৃপক্ষ কিংবা সরকারি সহায়তার জন্য বসে থাকিনি। নিজ উদ্যোগে ব্যবস্থা করে নিয়েছি। নিজের পেশাগত দক্ষতা ও যোগ্যতা বাড়ানোর জন্য অনলাইনে অফলাইনে অনেক প্রশিক্ষণ গ্রহন করেছি। মহান এ পেশায় নিজেকে উৎসর্গ করে করে চলেছি প্রতিনিয়ত। এজন্য সম্মানিতও হয়েছি বহুবার। উপজেলা পর্যায়ে চার বার এবং জেলা পর্যায়ে ২ বার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছি।
অবসর সময়টাতে কখনো বসে থাকিনি। ২০১৪ সাল থেকে কাজ করে চলেছি ডিজিটাল কনটেন্ট নিয়ে।নিজের কাজ করার প্রবল আগ্রহের থেকে ২০১৭ সালে নিজেই ল্যাপটপ কিনে কাজ শুরু করেছি।
এটা নিয়ে কাজ করতে আমার বরাবরই ভালো লাগে। কারণ একটি বিষয়ের পাঠকে, সহজ, আনন্দদায়ক, ফলপ্রসূ, শিখনফল অর্জনে সহায়তা ও স্থায়ী শিখনে এ ডিজিটাল কন্টেন্ট ব্যবহার এর গুরুত্ব অপরিসীম। এর ব্যবহারে শ্রেণিকক্ষের পুরো পরিবেশটাই পরিপূর্ণ শিখনের ক্ষেত্র হয়ে যায়। আর একটা স্মার্ট ক্লাসরুমে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে আমি a2i এর শিক্ষক বাতায়ন থেকে দেশ সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা হওয়ার স্বীকৃতি পাই।
বসে থাকিনি করোনা কালীন দিনগুলোতেও। সারা দেশ যখন লকডাউনে বন্ধ ছিলো তখন অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে নিয়মিত অনলাইন ক্লাস পরিচালনা করেছি।a2i কর্তৃক নির্ধারিত পেইজ “ঘরে বসে শিখি” থেকে শুরু করে ২১টি পেইজে ১৪৫টি অনলাইন ক্লাস পরিচালনা করেছি। যা শিক্ষকদের প্রাণের বাতায়ন www.teachers.gov.bd এর ওয়েব সাইটে রয়েছে।
করোনাকালীন এ অনলাইন ক্লাসের স্বীকৃতি সরূপ ২০২১ সালের মার্চ মাসে দেশ সেরা অনলাইন পারফর্মার হওয়ার স্বীকৃতি পাই।
সেরাদের সেরা কাজ ও আইডিয়াগুলো নিজে রপ্ত করার চেষ্টা করেছি। অনেকেই আমার প্রেরণা হয়ে আছেন যারা নিজেও জানেন না কিভাবে তারা তাদের কাজ দিয়ে অন্যের মাঝে প্রেরণার বীজ বপন করে চলেছেন। অনেক সময় অনেক স্যার /ম্যামদের সময় অসময় বিরক্ত করেছি তাদের থেকে নতুন কিছু শেখার জন্য, জানার জন্য। প্রতি নিয়ত নিজেকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করেছি। কাজের সাথে লেগে থেকেছি এবং আছি। আজকের এই প্রাপ্তিটাও তারই একটা ফলাফল।
ইসরাত জাহান ফেরদৌস ২০০৬ সালে নিয়োগ পেয়ে প্রথমে পুটিয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। সেখান থেকেই তিনি ভবিষ্যৎ কর্ণধারদের দিয়ে স্বপ্নের বীজ বোনা শুরু করেন। নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করেন সেই প্রথম থেকেই। ইসরাত জাহানের বাবা ছিলেন কৃষি কর্মকর্তা আর মা ছিলেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তিন ভাই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতে বৃত্তি প্রাপ্ত হয়ে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ন হন। ঝালকাঠি সরকারি কলেজ থেকে ১ম বিভাগ নিয়ে স্নাতক ও ব্রজমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ২য় বিভাগে ৩য় স্থান নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকোত্তর সমাপ্ত করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখি করছেন। যৌথ কাব্যগ্রন্থ ‘দ্রোহের কবি প্রাণের কবি’, ৫০০ কবির কবিতা, বিবেকের দংশন।
বিবাহিত জীবনে ২ সন্তানের জননী তিনি।
ইসরাত জাহান ফেরদৌসের আরো অর্জন
জেলা শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিকা, ঝালকাঠি ২০২২ ও ২০২৩
জেলা শ্রেষ্ঠ জয়িতা (শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী) ২০২২
সেরা অনলাইন পারফর্মার ২০২২
সেরা কনটেন্ট নির্মাতা মার্চ ২য় পক্ষ ২০২৩
বরিশাল বিভাগের শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিকা ও মুক্তবুলি ম্যাগাজিনের নিয়মিত লেখক ইসরাত জাহান ফেরদৌসের হাতে ‘সাংবাদিকতার বাঁকে বাঁকে’ বই তুলে দেন সাংবাদিক আযাদ আলাউদ্দীন।