রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব: ডনবাস প্রসঙ্গে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

মুক্তবুলি ডেস্ক

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ডোনেটস্ক এবং লুহানস্ককে স্বাধীনতার স্বীকৃতি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। স্থানীয় সময় সোমবার রাতে অঞ্চল দুটির স্বাধীনতার স্বীকৃতি সংক্রান্ত ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেন তিনি।
আমেরিকা আগেই সতর্ক করেছিল। ইউক্রেনের সীমান্ত থেকে রাশিয়ার সেনা সরানোর প্রক্রিয়া যে শুধু ছলচাতুরি ছিল। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ভ্লাদিমির পুতিন যেন সেটাই প্রমাণ করলেন।

ইউক্রেনের ডোনেটস্ক এবং লুহানস্ককে একত্রে ডনবাস বলা হয়, সেখানে এখনও ইউক্রেন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। সোমবারের ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউক্রেনের দুই এলাকাকে রাশিয়ার স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থ ইউক্রেনকে প্রকাশ্যে যুদ্ধের জন্য উসকানি দেওয়া। একইসঙ্গে এটাও বোঝানো যে সেনা নিয়ে ইউক্রেনের সীমান্তে ঢোকার পথ পরিষ্কার করে রাখল রাশিয়া।
ফলে কী হতে চলেছে? রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্তে মস্কো যে ইতোমধ্যই প্রায় দুই লাখ সেনা মোতায়েন করেছে এবং তারা যে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত সে ব্যাপারে আগেই সতর্ক করেছিল আমেরিকা।

এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক রাশিয়ার এই পদক্ষেপে কী হতে পারে। গোটা পর্বে কার লাভ হচ্ছে, কারই বা ক্ষতি।

কী নিয়ে সমস্যা?

২০১৪ সালে ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণ থেকে নিজেদের মুক্ত বলে ঘোষণা করে ডনবাস। অভিযোগ, ওই এলাকার নিয়ন্ত্রণ যে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে তাদের রাশিয়াই অর্থ এবং নানারকম সুযোগ সুবিধা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে লালন করে আসছে। এমনকি এই এলাকার বাসিন্দাদের কোভিড টিকাকরণ, প্রায় আট লাখ পাসপোর্টের ব্যবস্থাও করেছে পুতিন সরকার।

রাশিয়ার স্বীকৃতি পেলে কী হবে?

রাশিয়া এই প্রথম প্রকাশ্যে বলল তারা ওই দুই এলাকাকে ইউক্রেনের অংশ বলে মনে করে না। যার অর্থ রাশিয়া এখন চাইলেই সেখানে সেনা পাঠাতে পারে। সেক্ষেত্রে তাদের যুক্তি হবে, তারা ডনবাসের ‘বন্ধু’ হিসেবে তাদের ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করতে চাইছে।

ডোনটস্কের সাবেক রাজনৈতিক নেতা আলেকজান্ডার বোরোদাই, যিনি এখন রাশিয়ার পার্লামেন্টেরও সদস্য, সম্প্রতি বলেছিলেন, রাশিয়া যদি ডনবাসকে ইউক্রেনের সরকারের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত পৃথক অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দেয় তবে সেখানকার বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারাও ডনবাসকে ইউক্রেনের সেনাদের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করতে রাশিয়ার পাশে দাঁড়াবে। ফলে দুই দেশের মধ্যে শুরু হবে সেনা সংঘাত।

মিনস্ক শান্তি প্রক্রিয়ার কী হবে?

২০১৪ সালে ডনবাস নিজেকে ইউক্রেনের শাসন মুক্ত ‘প্রজাতন্ত্র’ ঘোষণা করার পর ২০১৪-১৫ সালে মিনস্ক শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এই চুক্তিকে ডনবাস সমস্যার সেরা সমাধান বলে মনে করা হয়েছিল।

ওই চুক্তি অনুযায়ী ইউক্রেনের অধীনে থেকেও ডোনেটস্ক এবং লুহানস্ক এলাকা দুটি সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন উপভোগ করবে। এ ব্যাপারে ইউক্রেন বা অন্য কোনো রাষ্ট্র কোনো রকম হস্তক্ষেপ করবে না। যদিও ইউক্রেন বা রাশিয়া কেউই এ যাবৎ সেই চুক্তির শর্ত মানেনি। তবে রাশিয়া ডনবাসকে স্বীকৃতি দিলে এই চুক্তি ভাঙবে।

পশ্চিমী দেশগুলো কী করবে?

‍পশ্চিমের একাধিক দেশের সরকারের পক্ষ থেকে মস্কোকে এ ব্যাপারে আগেই সতর্ক করা হয়েছে। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ইউক্রেন সীমান্তে হওয়া রাশিয়ার সেনাবাহিনীর যেকোনো আক্রমণাত্মক কার্যকলাপের দাম দিতে হবে রাশিয়াকে। এমনকি পশ্চিমা দেশগুলো থেকে আসা অর্থ সাহায্যও তার প্রভাব পড়বে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। যদিও তাতে পুতিনের সিদ্ধান্তে নড়চড় হয়নি।

রাশিয়া কি এর আগে বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলকে স্বীকৃতি দিয়েছে?

দিয়েছে। এর আগে জর্জিয়ার দুটি বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল মস্কো। এ নিয়ে জর্জিয়ার সঙ্গে সেনা সংঘাতও হয়েছিল রাশিয়ার। ২০০৮ সালে একটা ছোটখাটো যুদ্ধই হয়েছিল রাশিয়া এবং জর্জিয়ার। পরে ওই দুই বিচ্ছিন্নতাবাদী এলাকাকে আর্থিক সহায়তা, সেনা নিরাপত্তা এবং নাগরিকত্ব দিয়ে সাহায্য করে মস্কো।

ইউক্রেনের ডনবাস আয়ত্তে এলে কী লাভ রাশিয়ার?

ইউক্রেনের ওই দুটি অঞ্চল দখলে এলে রাশিয়ার দখলে আসবে একটি বন্দরও। ডোনেটস্কের ওই বন্দর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকলে ঘুরপথে বাণিজ্যের বড় সমস্যা ঘুচবে রাশিয়ার। সহজ হবে বাণিজ্যপথ। বাঁচবে বিপুল অর্থ।

ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় চিন্তা ন্যাটো। রাশিয়ার হাত থেকে বাঁচতে কোনোভাবে যদি ইউক্রেন ন্যাটোয় অংশ নেয়, তা হলে এই পুরো এলাকায় রাশিয়ার কর্তৃত্ব খর্ব হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। মস্কোর দাবি, ইউক্রেনকে ন্যাটোর অংশ করে এই অঞ্চলে কর্তৃত্ব কায়েম করতে চাইছে আমেরিকাসহ নেটো গোষ্ঠীভুক্ত রাষ্ট্রগুলো। জর্জিয়ার ক্ষেত্রেও এই একই ভয় পেয়েছিল মস্কো।

ক্ষতি বা ঝুঁকি কোথায়?

মিনস্ক শান্তি চুক্তি ভাঙলে আন্তর্জাতিক নিন্দার মুখে পড়বে রাশিয়া। আন্তর্জাতিক আর্থিক সহায়তা থেকেও বঞ্চিত হবে। তাছাড়া প্রায় আট বছরের যুদ্ধদীর্ণ দুটি এলাকার সম্পূর্ণ দায়িত্বও নিয়ে হবে রাশিয়াকে। সেই বোঝাও কম হবে না।

সূত্র: বিবিসি, আল-জাজিরা, রয়টার্স, ডেইলি মেইল, দ্য সান, সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *