ডা. এহসানুল কবির
———————–
১. হজরত আদম (আ🙂 থেকে রোজার রাখার প্রচলন শুরু হয় মহান আল্লাহ পাকের নির্দেশে। নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়ার জন্য জান্নাত থেকে বের হয়ে যেতে হয়। ফলশ্রুতিতে তারা তওবা করেন এবং একাধারে ৪০ বছর রোজা রাখেন। পরবর্তীতে তার উপর প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩,১৪,১৫ তারিখে রোজা রাখা ফরজ করা হয়েছিল। এটাকে আইয়ামে বীয বা উজ্জ্বল দিন বলা হয়।
২. পরবর্তিকালে রাসুল পাক (সা🙂ও আইয়ামে বীযের রোজা রাখতেন। এমনকি তাঁর সাহাবীগনকেও আইয়ামে বীযের রোজা রাখার জন্যে উপদেশ দিতেন।
৩. হজরত নুহ (আ🙂 ছিলেন সবচেয়ে দীর্ঘজীবী নবী। তিনি শুধুমাত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন ব্যতীত (কোন কোন মতে শাওয়াল মাসের ১ম দিন ও জিলহজ্ব মাসের প্রথম ১০ দিন ব্যতিরেকে) বছরের বাকী দিনগুলোতে রোজা রাখতেন। — ইবনে মাজাহ। অন্যসূত্র মতে তিনি প্রতিমাসে ৩ দিন করে রোজা রাখতেন।
৪. হজরত ইবরাহীম (আ🙂ও প্রতি মাসের ৩দিন রোজা রাখতেন। এভাবে শেষ নবী (সা🙂 পর্যন্ত মাসে ৩দিন করে রোজার প্রচলন ছিল।
৫. হজরত মুসা (আ🙂 তার উপর তাওরাত কিতাব নাজিল হওয়ার আগে একটানা ৩০ দিন রোজা পালন করেন। পরবর্তিতে আল্লাহ পাকের নির্দেশে আরো ১০টি রোজা রেখেছিলেন। এছাড়া পরবর্তীতে আশুরার দিনেও তিনি রোজা রাখতেন তার বনী ইসরাইল জাতিকে এইদিনে ফেরাউনের দুশমনদের হাত থেকে মুক্তি লাভের শুকরিয়া স্বরূপ।
৬. হজরত দাউদ (আ🙂 একদিন পরপর রোজা রাখতেন যা ছিল আল্লাহ পাকের কাছে অত্যন্ত পছন্দনীয়। পরবর্তীককালে এসে রাসুলে পাক (সা🙂 কোন কোন সাহাবাকে হজরত দাউদ (আ:)- এর মত রোজা পালনের জন্য পরামর্শ দিতেন।
৭. হজরত ইদ্রীস (আ🙂 সারা বছরই রোজা রাখতেন।
৮. হজরত ঈসা (আ🙂ও রোজা রাখতেন।
৯. এছাড়া রাসুলে করিম (সা🙂 মদীনায় হিজরতের পরে দেখলেন যে, সেখানকার ইহুদীরা আশুরা বা মুহাররমের ১০ তারিখে রোজা রাখে। তাদের যুক্তি ছিল যে, এইদিনে মুসা (আ:)-এর বংশধর বনী ইসরাইলকে আল্লাহ পাক দুশমনদের হাত থেকে নাজাত দিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় রাসুল (সা🙂 আশুরার ৯ ও ১০ তারিখ রোজা রাখা শুরু করলেন। অর্থাৎ তিনি তাদের সাথে সাদৃশ্য না রেখে আরো ১ দিন বাড়িয়ে রোজা পালন করতেন। সেজন্য মুহররম মাসের ৯,১০ অথবা ১০,১১ তারিখ রোজা পালনের নিয়ম প্রচলিত আছে।
১০. তবে উল্লেখ্য যে, ইহুদীরা আশুরার যে রোজা রাখতো তা তারা মুক্তিদিবস হিসেবে পালন করতো। এটা তাদের কাছে ছিল এক মহা আনন্দের দিন। উপবাস নামক ইবাদাতের নামে ছিল খাওয়া–দাওয়ার বিপুল আয়োজন। ঈদের মত জাকজমকপূর্ণ এক মহাউৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করতো এ সময়টিতে।
১১. পরবর্তীকালে রাসুলে পাক (সা:)-এর সময়ে এসে হিজরতের অষ্টাদশ মাসে অর্থাৎ দ্বিতীয় হিজরীর সাবান মাসে আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে রোজা ফরজ করা হয়। তখন থেকেই রমজান মাসের পুরা ১ মাস রোজা পালনের নির্দেশ জারী করা করা হয়। ফলে আগেকার প্রচলিত আইয়ামে বীয ও আশুরার ফরজ রোজা রাখার নিয়ম রহিত হয়ে যায়।