ইমরান খান রাজ ।।
নিজ জ্ঞান ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতে পড়ার বিকল্প কিছু নেই। যে যত বেশি পড়বে, সে ততো বেশি শিখবে, জানবে। হোক সেটা পাঠ্যবই, গল্পের বই কিংবা ম্যাগাজিন। আজ আমি যেই বইটি নিয়ে লিখছি, সেটা হচ্ছে, “মুক্তবুলি” ম্যাগাজিন। দ্বিমাসিক এই ম্যাগাজিন ইতোমধ্যে পাঠকের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। ম্যাগাজিনের ২২ তম সংখ্যাটির প্রচ্ছদ করেছেন মো. ইব্রাহিম খলিল। প্রচ্ছদ দেখেই বই প্রেমী মানুষেরা একবার হলেও দেখতে চাইবে এর ভেতরটা। আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে প্রচ্ছদটি।
এই সংখ্যাটির বিষয়বস্তু ছিল ‘বেকার জীবন’ নিয়ে। প্রায় ৯০ ভাগ লেখাই ছিল বেকার জীবনের নানান দিক নিয়ে। এতে ফুটে উঠেছে বেকারত্বের হার, বেকারদের হতাশা, বেকারত্ব দূর করতে করনীয়সহ অন্যান্য শিক্ষনীয়, তথ্যসমৃদ্ধ লেখা। প্রবীণ-নবীন লেখকদের সাথে নিয়ে এই ম্যাগাজিন হয়ে উঠেছে অনন্য।
ম্যাগাজিনের শুরুতেই আমার চোখে পড়েছে আলী হোসেনের লেখা – “বইকে কিছু সময় দিন” এবং আহমেদ বায়েজীদের লেখা – “সন্তানকে ননীর পুতুল বানাবেন না” শিরোনামের দুটি লেখা৷ অত্যান্ত নিখুঁত ও চমকপ্রদ লেগেছে লেখা দুটো। আসলে বর্তমান আধুনিক যুগে, মোবাইল, কম্পিউটার, ফেসবুক-ইউটিউব এর যুগে আমরা বই পড়া প্রায় ভুলেই গেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বই-ই হলো আমাদের আসল বন্ধু। একটা দিন মোবাইল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট রেখে দিয়ে প্রকৃতির সাথে মিশে যান; দেখবেন পৃথিবী কতো সুন্দর।
বেকারদের হতাশা থেকে ফিরে আসতে মো. জিল্লুর রহমানের লেখাটা ছিল তথ্যবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ একটি লেখা। চাকরি না করেও একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হয়ে জীবনকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। যখন আমাদের হাতে মোবাইল ছিলনা, ছিলনা ইন্টারনেট। তখনকার শৈশবটা সত্যিই ছিল অসাধারণ। দাদা, দাদি, আর খালা-ফুফুদের কাছে গল্প শুনে রাতে ঘুমাতে যাওয়া। সকাল হলেই দলবেঁধে খেলতে যাওয়া, ইঁদুরের গর্ত খোঁজা, টুনটুনি পাখির বাসা খোঁজার মধ্যেও আগেকার শিশু-কিশোরা রোমাঞ্চ খুঁজে পেত। কিন্তু বর্তমান শৈশব চিত্র আমাদের সকলের জানা! ইসরাত জাহানের লেখা সেই অনুভূতিটা পড়ার পর একমুহূর্তের জন্য হারিয়ে গিয়েছিলাম আমার সেই দুরন্ত শৈশবে।
ম্যাগাজিন পড়ে যদি মুখে একটু হাসি-ই না থাকে, তবে পড়ার পূর্ণ তৃপ্তি কিছুটা অপূর্ণ থেকে যায়৷ যখন সুয়েজ করিমের রম্য গল্প “তোরাব আলীর মঙ্গলযাত্রা” পড়তে শুরু করলাম, তখনই সেই অপূর্ণ তৃপ্তিটা পূর্ণ হয়ে গেলো আমার। গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মুখে হাসি লেগেই ছিল আমার।
এছাড়া “কাঠিপাড়া গণহত্যা ও বিধবা পল্লীর কাহিনী” শিরোনামের ফিচারটি পড়ে অনেক কিছুই নতুনভাবে জানতে পেরেছি। ‘মহানবি হযরত মুহম্মদ (স.) সিরাত গ্রন্থের অনন্য সংযোজন’ নামক বুক রিভিউ ছিল এক কথায় অনবদ্য। তাছাড়া মুহাম্মদ নোমান, মো. আবদুর রহিম রিয়াজ, জোবাইদুল ইসলাম, শাহীন খান, জিশান মাহমুদ, শারমিন আক্তার, শিমুল সুলতানার কবিতাগুলো শেষমুহুর্ত পুরো জমিয়ে দিয়েছে। কবিতা পাঠে মুগ্ধ হয়েছিল আমার মন ও প্রাণ।
মুক্তবুলি ম্যাগাজিনের মূল্য ৩০ টাকা। যা প্রচ্ছদ ও ৩২ পৃষ্ঠা সমৃদ্ধ অসাধারণ লেখার কাছে সঠিক মনে হয়েছে। এই ম্যাগজিন কিনে পড়লে, আপনার টাকা বৃথা যাবেনা বলেই আমার বিশ্বাস। ম্যাগাজিনের বর্ণবিন্যাস ও অলংকরণ আমার কাছে ভাল লেগেছে। আগামী সংখ্যাগুলোতে আরো তথ্যসমৃদ্ধ নিখুঁত লেখা পাবো সেটাই প্রত্যাশা। সেইসাথে সম্পাদকের নিকট আহবান থাকবে, ম্যাগাজিনের সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করতে যেনো কোন অবহেলা না করা হয়। সর্বোপরি মুক্তবুলি ম্যাগাজিনের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি, একজন পাঠক ও লেখক হিসেবে মুক্তবুলি’র সাথে থাকবো ইনশাআল্লাহ।
মুক্তবুলি প্রকাশক ও সম্পাদক – আযাদ আলাউদ্দীন।
মুক্তবুলি ম্যাগাজিন সংগ্রহ করতে চাইলে যোগাযোগ করুন: 01788770063
ইমরান খান রাজ
শিক্ষার্থী, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, শেখ বোরহানউদ্দিন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজ, ঢাকা৷