আযাদ আলাউদ্দীন ।।
কবি সুয়েজ করিম। পেশায় ব্যাংকার হলেও নেশায় একজন কবি। ছোটবেলার থেকেই সাহিত্যের সাথে তার নিবিড় সম্পর্ক। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার লেখা নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে। সেই সূত্র ধরেই তার সাথে পরিচয়। আমার সম্পাদনায় বরিশাল থেকে প্রকাশিত ম্যাগাজিন ‘মুক্তবুলি’তে তার লেখা বেশ কয়েকটি কবিতা ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ব্যাংকিংয়ের মতো সিরিয়াস পেশায় ব্যস্ত থেকেও তিনি নিয়মিত সাহিত্য চর্চা করে যাচ্ছেন, এখানেই তার যতো আবেগ এবং আন্তরিক ভালোবাসা। একারণেই তিনি একজন উদার মনের ভালো মানুষ।
সম্প্রতি ঢাকার মাধুর্য প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে কবি সুয়েজ করিমের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কল্পিত নগরে’। বইটির একটি কপি আমাকে উপহার দিয়েছেন কবি সুয়েজ করিম। আমি ব্যক্তিগতভাবে বই ‘উপহার’ পাওয়ার চেয়ে ‘কিনে’ পড়ার পক্ষে। সৌজন্যতার খাতিরে তাঁর উপহার গ্রহণ করলেও কবিকে উৎসাহ দেয়ার জন্য আমি ৫টি বই কিনে নেই। এরপর একে একে পড়তে থাকি সবগুলো কবিতা। কবিতাগুলো পড়তে পড়তে ভাবতে থাকি ব্যাংকিং পেশার মতো ‘নিরস’ পেশায় নিয়োজিত থেকে তিনি সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে এমন ‘সরস’ সাহিত্য চর্চা করেন কিভাবে? আসলে সাহিত্য আর সমাজের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা না থাকলে এমনটি সম্ভব নয়।
কল্পিত নগরে কাব্যগ্রন্থে কবি সুয়েজ করিমের লেখা ৫৭টি কবিতা স্থান পেয়েছে। অধিকাংশ কবিতাই বাস্তবতা নির্ভর। স্মৃতি সৌধ, বিনম্র শ্রদ্ধায় বঙ্গবন্ধু, হৃদয়ে আল মাহমুদ, কবি সুফিয়া কামাল শিরোনামে কবিতা যেমন আছে তেমনি রয়েছে প্রকৃতি ও প্রেম বিষয়ক অনেকগুলো কবিতা। যেমন- ‘জোৎস্না গাঙে’ কবিতায় তিনি লিখেছেন-
‘জোৎস্না গাঙে নাও ভাসিয়ে যাবো / দুধমাখা চাঁদ আপন হাতে ছোঁব
চাঁদের কিরণ সারা গায়ে মাখি / মনের কথা চাঁদের গায়ে আঁকি’।
কল্পিত নগরে কবিতায় তিনি লিখেছেন-
‘প্রিয়ার কালো চোখে হারিয়ে যাই
কল্পিত নগরে
সাগরের চকচকে নীল জলে
ভেসে ওঠা রাজপ্রাসাদে’।
এমনি অনেক রোমান্টিক কবিতা যেমন আছে, তেমনি আছে পেশা ও বাস্তবতা নির্ভর বেশ কিছু কবিতা । যেমন-
মেস জীবনে ব্যাচেলরদের নানা চিত্র তুলে এনেছেন তার ‘ব্যাচেলরনামা কবিতায় কিছুটা রম্য অথচ বাস্তবতার নিরিখে
‘বুয়াদের রান্না খেয়ে পেটে পড়ে চর / আজ বুয়া নেই তাই, ডিম জবে কর।
একরুমে গাদাগাদি বাথরুমে গান / মাটির সুর গলেতে করে তারা স্নান’।
কবি তার নিজ পেশার বাস্তবচিত্র ছন্দে ছন্দে তুলে ধরেছেন তার একাধিক কবিতায়। এসব কবিতা পড়লে মনে হবে এ যেন সমাজেরই আসল চিত্র। ‘ব্যাংকার’ কবিতায় তিনি লিখেছেন ‘বাহিরটা ফিটফাট ভিতরটা মরু/ ডেবিট আর ক্রেডিটে জীবনটা শুরু’।
এই জাতীয় অন্য কবিতাগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘ব্যাংকারের হাসি, সোয়ামি ব্যাংকার, ক্যাশিয়ারনামা প্রভৃতি। মহামারি করোনা, মাস্ক, জন্মদিন, বেকারনামা, মাহে রমাদান, কুরবানি, সমাজের নানা অসঙ্গতি এমনকি বিভিন্ন ঋতু নিয়েও তিনি একাধিক কবিতা লিখেছেন এই কল্পিত নগর বইয়ে। এককথায় কবিতাগুলো নির্দিষ্ট কোন বিষয়ের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়। নানা বিষয় বৈচিত্র্য থাকায় কবিতাগুলো হয়ে উঠেছে সুখপাঠ্য।
কিছু কবিতায় যেমন ছন্দ ও অন্তমিল রয়েছে, তেমনি কিছু কবিতা আছে আধুনিক গদ্য প্যাটার্নে। কয়েকটি কবিতা তিনি মাইকেল মধুসূদন দত্তের মতো অমিত্রাক্ষর ছন্দে লেখার প্রচেষ্টা করেছেন। যেমন- ‘হদয়ে আল মাহমুদ’ কবিতায় তিনি লিখেছেন-
‘ক্ষুরধার লেখনীতে কলম বানালে শমশের/ একাত্তরে লড়েছিলে দেশ মাতৃকার মহা টানে/
চিত্ত দহলিজে বসে রচ সোনালী কাবিন ফের / ভালোবাসি কোটি রাশ শব্দে নয় তনু মনপ্রাণে’।
কবিতার বিষয় ও বৈচিত্র্য নির্মানে কবি সুয়েজ করিম তার কাব্যপ্রতিভার বিকাশ ঘটিয়েছেন ‘কল্পিত নগরে’
কাব্যগ্রন্থে। তার প্রতিটি কবিতায় শব্দ চয়ন, চিত্রকল্প, উপমা ও বাস্তবতা পাঠকের মনে আনন্দের হিল্লোল বইয়ে দিচ্ছে। আমি কবি সুয়েজ করিমের ‘কল্পিত নগরে’ কাব্যগ্রন্থের সার্বিক সাফল্য প্রত্যাশা করছি। রকমারি ডটকমে অর্ডার করে বইটি সংগ্রহ করা যাবে।
আযাদ আলাউদ্দীন
প্রকাশক ও সম্পাদক
মুক্তবুলি
০১৭১২১৮৯৩৩৮
খুব সুন্দর রিভিউ। লেখকের প্রতি কৃতজ্ঞ রইলাম।