মিজানুর রহমান আজহারি’র আলোচিত বই ‘ম্যাসেজ’

সানা উল্লাহ মু. কাউসার ।।

বইটির আদ্যোপান্ত শেষ করে মনে হলো- জাগতিক জীবনের প্রতিটি সিঁড়ি সফলতার সাথে টপকানোর মাধ্যমে পারলৌকিক জীবনের সফল গন্তব্যের এক নির্মোহ নির্দেশনা হলো ‘ম্যাসেজ’ বইটি। যে বইয়ের বারো’টি ক্ষুদে বার্তা আপনাকে সন্ধান দিবে পরকালীন ফাইনাল ডেসটিনেশনের পথে চলমান বৃহত্তম সফল এস্কেলেটর বা সিড়ির!

আহ! দু’আ নিয়ে চমৎকার কথাটি রয়েছে ৩২ পৃষ্ঠায়- ‘Sincere Dua is like a missile— আন্তরিক দুআ মিসাইলের মতো। মিসাইল যেমন হিট করলে সেটা লক্ষ্যবস্তুতে গিয়ে আঘাত হানে, তেমনি দুআর মতো দুআ করলে সেটা কবুল হবেই। বইয়ের লেখাটি পড়ার সাথে সাথে মনে পড়েছে গানের কলিটি–

‘যে নামে ইব্রাহীমের আগুন হলো পানি, ডাকার মত ডাকলে আজো সাড়া দিবেন তিনি!’

☞ স্মার্ট প্যারেন্টিং এর একটি চমৎকার পদ্ধতির কথা খট করে মনে গেঁথে গিয়েছে। আল্লাহু আকবর! ছোটবেলা থেকেই কি অনুপম শিক্ষাটিই রাসুল (স.) দিয়েছিলেন আপন নাতিকে হালাল-হারামের ব্যাপারে! যেমন ২১৪ পৃষ্ঠায় রয়েছে— ‘একবার ইমাম হাসান সাদাকার খেজুরের স্তুপ থেকে একটি খেজুর নিয়ে মুখে দিলেন। নবিজি এটা দেখে বললেন– ‘থু মারো থু মারো। তুমি কি জানো না, আমরা সাদাকা খাইনা?’

☞ মসজিদ অধ্যায়ে আমাদের দেশের অনেক প্রচলিত ভুলের কথা চমৎকারভাবে উঠে এসেছে। তৎমধ্যে সবার প্রথমে বহুল প্রচলিত ‘মসজিদে দুনিয়াবি কথা বললে ৪০ বছরের কবুলকৃত আমল বরবাদ হয়ে যায়’! মর্মে যে জাল হাদিস লেখা থাকে সেটির অপনোদন করা হয়েছে ২৩১ পৃষ্ঠায় এভাবে— ‘মসজিদে যদি দুনিয়াবি কথা বলা হারাম হয়, তাহলে রাসূল (স.) ও যে বিভিন্ন দুনিয়াবি বিষয়ে মসজিদে কথা বলেছেন, তার কি হবে? নবিজিও কি নিষিদ্ধ কাজ করেছেন? নাউযুবিল্লাহ!

☞ মুনাফিক এর আলামত বর্ণনা করতে গিয়ে ১১৫ পৃষ্ঠায় একটি নির্মম সত্যি আমাদের দেশের চরম বাস্তবতার সাথে মিলে গেছে— ‘বিশেষ করে আমাদের নেতা-নেত্রীরা নির্বাচনের আগে ভোট পাওয়ার জন্য যেসব ওয়াদা দেয়, তার তো বেশিরভাগই খেলাফ হয়; বরং এসব ওয়াদা তারা রক্ষা করতে পারবেনা –এটা জেনেই ওয়াদা করে। এগুলো মুনাফিকির চিহ্ন।’

☞ সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে ‘কুরানিক শিষ্টাচার’ অধ্যায়টি। প্রতিটি পয়েন্ট এত বেশি প্রাণবন্ত হয়েছে সত্যিই লেখকের প্রতি বারে বারে অবিরাম দু’আ এসেছে। ৭১ পৃষ্ঠার কথাটি খেয়াল করুন— ‘অনেক সময় আমরা ভালো নাম বা উপাধিকেও খারাপ অর্থে ব্যবহার করি। যেমন: কাউকে বললাম পণ্ডিত বা বুদ্ধিজীবী, কিন্তু সে মূলত পণ্ডিত বা বুদ্ধিজীবী নয়– এটাও এক ধরণের বিদ্রুপ’

☞ মসজিদ অধ্যায়ে মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার ব্যাপারে আরো বিস্তারিত আলোচনা দলিলের ভিত্তিতে আশা করেছিলাম। কিছু কিছু দলিলের রেফারেন্স প্রদান করা হয়নি এবং বেশ কয়েকটি দুর্বল হাদিস তথা রেফারেন্স রয়েছে।

তবে একজন পাঠক হিসেবে বলতে পারি, আমাদের বাংলা ভাষায় রচিত অন্যান্য ইসলামিক বইয়ে যে পরিমাণ জাল-জয়ীফ আর বানোয়াট হাদিসের উদ্ধৃতি দেন লেখকবৃন্দ তাদের বিষয়বস্তুর প্রাসঙ্গিকতার সাথে মেলবন্ধন করে লেখার মান/গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে। ঐসকল বইয়ের তুলনায় মিজানুর রহমান আজহারীর এই বইটিতে দুর্বল রেফারেন্স যৎসামান্য কেবল! অন্যান্য বইয়ের সিকিভাগও নেই। বইয়ের পুরোধা জুড়ে কেবল ঈমান জাগানিয়া ভাবুক কথামালা!

লেখকের প্রতি প্রত্যাশা: পরবর্তী কোন নির্মাণ যেন হয় আকিদা অথবা ইসলামের নামে সমাজে প্রচলিত ভুলগুলির উপর সচেতনতামূলক একটি দুরন্ত বুলেট। কেননা, ব্যক্তি লেখকের অনবদ্য গ্রহণযোগ্যতা আমাদের তরুণ প্রজন্মের রয়েছে। আমি আমার নিকটাত্মীয় এমন অনেক ভাই-বোনকে দেখেছি প্রচলিত ভুলের কথা স্বীকার না করতে এবং মেনে না নিতে। কিন্তু শায়েখের আলোচনায় ঐ বিষয়টি উঠে আসার সাথে সাথে বিনা বিবেচনায় তা গ্রহণ করে নিয়েছে।

☞ পরিশেষ, সর্বস্তরের পাঠক শ্রেণির কাছে বোধগম্য হওয়ার মত শায়েখের এটি একটি দুর্দান্ত Boom Busting..! বইয়ের ওয়ান-থার্ড পারসেন্ট জুড়ে রয়েছে লেখকের বিভিন্ন সময়ে প্রদত্ত লেকচারের অংশ বিশেষ। প্রতিটি বিষয়ের উপর কুরআন-হাদিসের অনবদ্য রেফারেন্স বইটির গ্রহণযোগ্যতা যেমন বৃদ্ধি করেছে; তেমনি প্রাণোচ্ছ্বল হৃদয়ের ভাবাবেগ থেকে উদ্বেলিত আবেগকে নাড়া দেবে তেজোদৃপ্ত ঈমান জাগানিয়া এক অন্যরকম ফ্লেভার মেখে। আলহামদুলিল্লাহ! কৃতজ্ঞ লেখক এবং প্রকাশনার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি..!

রিভিউ লেখক

সানা উল্লাহ মু. কাউসার

প্রভাষক, ইসলামি শিক্ষা বিভাগ, ধুুরং আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার।

২ comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *