আবদুল হালীম খাঁ ।।
তরুণ লেখক ইয়াসিন মাহমুদ এর ‘রাজনীতির অন্ধগলি’ বইটি হঠাৎ হাতে পেলাম। বইয়ের নাম আর সূচিপত্রে এক গাদা আকর্ষণীয় বিষয় দেখে এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম। বর্তমানে আমরা যে দেশে যে অবস্থায় বাস করছি তারই অতি বাস্তব বিষয়ে একটি রেখাচিত্র এ বইটি। দিন রাত টেনশন। জনসাধারণের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। অসহ্য যন্ত্রণার কারাগারে পতিত দেশ। কোন গল্প নয় কোনো অতি রঞ্জন নয়, আমাদের চোখে দেখা, বাড়িতে, পাড়ায়, শহর বন্দরে নিয়ত সে সব ঘটনা ঘটছে তার মাত্র কয়েকটি ইয়াসিন মাহমুদ তাঁর কলমের আঁচড়ে তুলে ধরেছেন। এ সময়ে যিনি আমাদের দেশ সম্পর্কে কিছুই জানে না বা হয়তো বিদেশে আছেন, তিনি এ বইটি ঘরে বসে পড়লে আমাদের দেশের অসহায় নাজেহাল অবস্থা পরিষ্কার আয়নার মতো দেখতে পারবেন। এ বইটি এ সময়ে বাংলাদেশকে দেখা ও বুঝার একটি আয়নাই বলা যায়।
সুসাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমদ আয়না, ফুডকনফারেন্স ইত্যাদি গল্প লিখে তৎকালে দেশের অন্যায় অনাচার ও অসঙ্গতির চিত্র তুলে ধরেছিলেন। তিনি এ সময়ে বেঁচে থাকলে বর্তমানের বাংলাদেশের হাজার হাজার অন্যায় অপরাধ ও অসঙ্গতি দেখে তাঁর সময়ের অপরাধ অসঙ্গতিগুলোকে নেহায়েত অতি সামান্য নস্যিই মনে করতেন। এখনকার তুলনায় তখন এমন কি আর ছিল! এখন শিক্ষা- সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, ব্যবসা বাণিজ্য, বিচারব্যবস্থা, আইন-কানুন, চাকরি-বাকরি এমন কি রাস্তাঘাটে চলাফেরা সকল ক্ষেত্রেই অনাচার, জোর-জুলুম, বেদখল, সন্ত্রাস দুর্নীতি ও অসঙ্গতিতে লেজে গোবরে লেপ্টে আছে। দেশের রাজনীতি শুধু অন্ধগলি নয় ক্রোধান্ধ। একটা ক্রোধান্ধ মাতাল যেনো দেশটা মাথায় তুলে নিয়ে ছুটে চলেছে মৃত্যু উপত্যকার দিকে। দেশবাসীর ক্রন্দন হাহাকার ও আহাজারি ক্রোধান্ধ মাতালের কানে পৌঁছে না। ভীষণ ভয়াবহ অবস্থা। ক্রোধান্ধ মাতালের কোনো আইন বে-আইন নেই। সে প্রলাপ বকছে আর ছুটে চলছে ধ্বংসের দিকে। তাকে বাধা দিয়ে ফেরাবার কোনো শক্তি কারো নেই।
কবি সাহিত্যিকরাই জাতির বিবেক ও প্রাণ। তারা যা দেখেন তাই সত্য তারা যা বলেন তাই সত্য। সমাজের ন্যায় অন্যায়, সত্য মিথ্যা উঁচু-নিচু, অনাচার-অসঙ্গতি দেশবাসীকে তারা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখান। এ দায়িত্ব তাদেরই। ইয়াসিন মাহমুদ তাঁর ‘রাজনীতির অন্ধগলি’ বইটির মাধ্যমে সেই দায়িত্ব পালন করেছেন। ইয়াসিন মাহমুদের কলমে গণ মানুষের হৃদয়ের বাণী বেরিয়ে এসেছে। একজন বুদ্ধিজীবী লক্ষ লক্ষ মানুষের মনের ভাষায় কথা বলেন। মানুষের মনে যে কথাগুলো গুমরে মরে, যে কথাগুলো সাহসের অভাবে বলতে পারে না কলম সৈনিক সে কথাগুলো বলেন। ইয়াসিন মাহমুদ সেই না বলা কথাগুলো বলেছেন এই বইটিতে। তাই এ বইটির লেখাগুলো ইয়াসিন মাহমুদের না হয়ে গণমানুষের কথা হয়ে উঠেছে।
এখানে সূচিপত্র থেকে মাত্র কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করছি। বিষয়গুলোর নাম দেখে ভেতরের গন্ধ কিছুটা পাবেন পাঠক। যেমন: অবহেলিত মুক্তিযোদ্ধার আর্তনাদ, মুক্তিযোদ্ধা থেকে রাজাকার, অপ্রিয় লোকের অপ্রিয় কথা, সম্প্রচার নীতিমালা বনাম মিডিয়ার ভবিষ্যৎ, পিয়াস করিমের ভার বইবে না শহীদ মিনার, শাহবাগে তোমরা যারা, বাংলাদেশের চলমান চিত্র : নাগরিক ভাবনা, ঘরে বাইরে নারী নির্যাতন, ছাত্ররাজনীতি বনাম আধিপত্যের লড়াই, শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস: প্রশাসনের ভূমিকা কি, এদিন চিরদিন সুদিন থাকবে না, এতো ভয় কেন তত্ত্বাবধায়কের, মার্চ ফর ডেমোক্রেসি ইত্যাদি।
বইয়ের প্রথম নিবন্ধটি- ‘অবহেলিত মুক্তিযোদ্ধার আর্তনাদ’। এতে দেশের বিভিন্নস্থানে অবহেলিতভাবে পড়ে থাকা, সকল সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত, একদা যারা জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলেন আজ তারা জীবন সংগ্রামে পরাজিত। কেউ আহত পঙ্গু ভিক্ষে করে ভাত পায় না তাদের আহাজারি তাদের পরিবারের দুঃখ দুর্দশার কথা লেখক তুলে ধরেছেন। অথচ সরকার দলীয় লোক মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে কেউ কেউ বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়ে বসে আছেন, কেউ ৭১ এ জন্মগ্রহণ না করে দুর্নীতি করে মুক্তিযোদ্ধাদের সার্টিফিকেট কিনে বহাল তবিয়তে সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। বিষয়টি সত্যতা মিলে গেছে সরকারী লোকের জালিয়াতি ফাঁস হয়ে যাওয়ায়।
লেখক বইটির ৩৫ পৃষ্ঠায় লিখেছেন: ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সচিবের পদত্যাগ। স্বাস্থ্য সচিব এম রিয়াজ উদ্দীন মিয়া ও সরকারী কর্মকমিশনের (পিএসসি) সচিব একে এম আমির হোসেন। জালিয়াতির মাধ্যমে তারা মুক্তিযোদ্ধার সনদ কিনে নেন। জাতির কাছে স্পষ্ট যে, মুক্তির চেতনা আজ বেচাকেনা হয়। নিরপরাধ মানুষকে রাজাকার সাজানো যায়। অমুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযোদ্ধা বানানো যায়। ধিক এই সব চেতনা ব্যবসায়ী মওসুমি দেশ প্রেমিকদের।’ এমনি আরো কতজন ফাঁকি অথবা সরকারের ছত্রছায়ায় ঘাপটি মেরে আছে তার শেষ নেই। দেশবাসী তাদের সরানো ও নড়ানো যাচ্ছে না।
ইয়াসিন মাহমুদ লিখেছেন: এটা অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় তবু বলতে হয়- এ দেশে প্রতি পাঁচ বছর পর পর সরকার পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাও রদবদল করা হয়। দলীয় পরিচয় না থাকলে বঞ্চিত হতে হয় অনেককেই। এ ধরনের বৈষম্য আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের যেমন ব্যথিত করে ঠিক তেমনি আমাদের শহীদদের রক্তের সঙ্গে বে-ইনসাফির শামিল। উল্লেখ্য, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে মুক্তিযোদ্ধাদের কদর করার ঘোষণা দেয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত হওয়ার আহ্বান জানায়। কিন্তু অবহেলিত মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন চক্রের কোনো পরিবর্তন আজো পরিলক্ষিত হয়নি। গত ২০ অক্টোবর ২০১২, ৬১ জন বিদেশী বন্ধুকে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মাননা প্রদান করে প্রমাণ করলো মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আমরা ব্যাপক কাজ করেছি।’
বিষয়টা নিয়ে তখন কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন এমন, বক্তার মুখে পাগড়ি পরার বহুত সওয়াবের ওয়াজ শুনে শ্রোতা পরনের লুঙ্গি খুলে মাথায় পাগড়ি বাঁধলে বিষয়টার মতো আর কি!
হাতে ক্ষমতা থাকলে কত অন্যায় অপকর্ম করা যায় আর কত ভাবে যে কত কথা বলা যায়। তখন কোনোটাই অন্যায় অপরাধ মনে হয় না। ক্ষমতার নেশা ধরে গেলে লজ্জা থাকে না, অনেকেই বাপদাদার নাম ভুলে যায়। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আমি বয়স্ক মানুষ, বয়সের কারণে ভুলত্রুটি হতেই পারে। আমি এজন্য ক্ষমা চাইবো না আমি জনপ্রিয় লোক নই এ কথা আমি ভালো করেই জানি। (পৃ.-১৪)
ড. ইউনুস ও অর্থমন্ত্রীর পাল্টাপাল্টি কথা। ইউনুস বলেছেন: আপনি দেশের অর্থমন্ত্রী, দেশের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড আজ ভেঙ্গে পড়েছে। দেশের মানুষ আজ অতিষ্ঠ। আর এমন মুূহুর্তে আপনার মাল্টি হাসি কোনো যাত্রাপালা সার্কাস কিংবা নাট্যমঞ্চের অভিনয়ই মনে হয়। আর আপনি বলেছেন বয়স হয়েছে, তাই নুয়ে পড়েছেন। আর পারি না, আপনি আপনার দায়িত্ব পালন করতে অপারগ হলে পদত্যাগ করুন। জনগণকে কোনো সার্কাস বা নাট্যমঞ্চের দর্শক ভাবলে খুব বেশি উপকৃত হবেন না। তা হলে রাজনীতি করার এতো শখ কেন? (অপ্রিয় লোকের অপ্রিয় কথা-পৃষ্ঠা-১৪)। খুবই মজার কথা। দেশের জনগণ যত দুঃখ দুর্দশা ও সমস্যার মধ্যে থাকুন না কেন নেতাদের এই সব কথা শুনে নিশ্চয়ই কিছু সময় খুশিতে হাসতে পারবেন।
ড. পিয়াস করিম বরাবরই এ দেশের মাটি ও মানুষের কথা বলেছেন। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের কথা বলেছেন। তিনি কখনো যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নেননি। বরং প্রকৃত দোষীদের শাস্তির দাবি তুলেছেন উদ্বেলিত কণ্ঠে। অথচ তাঁকে মৌলবাদী গোষ্ঠীর কাতারে ঠেলে দিয়েছেন একটি মহল। তারা নিজেরা স্বাধীনতার রক্ষক বনে গিয়ে ড. পিয়াস করিমের মতো বুদ্ধিজীবীকে শহীদ মিনারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। তাঁর লাশ শহীদ মিনারে নিতে দেয়া হয়নি। তাঁর সাথে অবাঞ্ছিত হন আরো কয়েকজন গুণী ব্যক্তিত্ব। তারা হলেন সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ, কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার, মানব জমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবির, আইনজীবী ড. তুহিন মালিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আমেনা মহসিন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী।’
বর্তমান শহীদ মিনারের হালচিত্র দেখে ব্যারিস্টার রফিকুল হক বোধ হয় আফসোস করে বলেছেন, শহীদ মিনার আজ আওয়ামী লীগের দখলে, শহীদ মিনার এখন নেশাখোর ও নষ্ট মানুষের আস্তানা। তাই আমি যখন মারা যাবো আমার মরদেহ শহীদ মিনারে নিবেন না। (মুক্তিযোদ্ধা থেকে রাজাকার- পৃ. ১১)
‘রাজনীতির অন্ধগলি’ বইটি থেকে পাঠকদের অবগতির জন্য অনেক অংশ উদ্ধৃতি দেয়া যায়, তাতে হালের অনেক তরতাজা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে বইটির চরিত্র উপলব্ধি করা সহজ হবে। যেমন: জানুয়ারি ২০১৪ এক তল্পিবাহক নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটি (একটা ভালো) নির্বাচন হয়েছে (দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন) যা শুনলে সবারই হাসি পায়। বিনা ভোটে ১৫৩ জন এমপি নির্বাচিত হয়ে জন প্রতিনিধিত্ব করছে। ছিঃ ছিঃ এতো লজ্জা রাখি কোথায়?- সরকারের হাফমন্ত্রী ফুল মন্ত্রী, আতি নেতা, পাতি নেতারা যে অপকর্ম করছে তা আজ ঢাকার জায়গা কোথায়? সরকার বিরোধীদলকে শায়েস্তা করার জন্য অবাধে জোয়ারের মতো মিডিয়ার লাইসেন্স দিয়েছিল। চুক্তি ছিল তিলকে তাল বানিয়ে বিরোধীদলকে ঘায়েল করতে হবে। তারা তাই করতেছিল। কিন্তু বিধিবাম। সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে এতো দুর্নীতি করছে যে সাংবাদিকরা সহ্য করতে না পেরে তা প্রকাশ করে। ফলে সরকার মহোদয়ের মান সম্মান বুঝি আর থাকলো না। তাই সত্য গোপন রাখতে মিডিয়ার স্বাধীনতাকে খর্ব করতে মিডিয়া বান্ধব সরকার সম্প্রচার নীতিমালা করতে যাচ্ছে। যেখানে মিডিয়া ও সাংবাদিককর্মীদের কোনো স্বাধীনতা থাকবে না। কোথাও আওয়ামী লীগের মিটিং হলে, সরকারদলীয় মন্ত্রীরা কোথায় ও কিছু উদ্বোধন করলে সেটা নিউজ হবে। সারাদিনের সিডিউল হবে শুধু সরকারের নমঃ নমঃ করা, অন্যথায় তোমাদের অবস্থা গুম, খুন, পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু যাই হোক না কেন টু শব্দ করবি না।
নূর হোসেনরা সাত খুনের আসামী হলেও দুধ কলা দিয়ে ভাত খাওয়াবো, তোরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবি। শাপলা চত্বরে রাতের আঁধারে হেফাজত কর্মীদের হত্যা করবো আর তোমরা শুধু জী, আচ্ছা হুজুর বলবি। পদ্মাসেতু নির্মাণে দুর্নীতি হবে, রেলের কালো বিড়াল বেরিয়ে আসবে, ব্যাংকগুলোর টাকা লোপাট হবে, সাভার ট্রাজেডি ঘটবে, নির্বিচারে মানুষ হত্যা হবে কোনো কথা হবে না। আমার সোনার ছেলেরা ধর্ষণের উৎসব পালন করবে আমরা তাদের সংবর্ধনা দেবো। দিন দুপুরে চাপাতি দিয়ে বিশ্বজিৎকে হত্যা করবে আর আইনের ফাঁক ফোঁকরে ক্ষমা করে দেবো। সোনার ছেলেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি করবে, শিক্ষক- শিক্ষিকা লাঞ্ছিত করবে তোমরা না দেখার ভান করবে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য নতুন সম্প্রচার নীতিমালা। কোনো ব্যক্তিকে জেলহাজতে বন্দি রেখে যেমন তাকে বাইরে যেতে দেয়া হয় না। মিডিয়ার ক্ষেত্রেও তেমনি সরকার আজগুবি নীতিমালা তৈরি করেছে। আর সেই নীতি অনুসরণ করলে এক সাংবাদিককে আর সাংবাদিক বলা যাবে না। কারণ কোনো গন্ডির ভেতর থেকে সত্য প্রকাশ আদৌ সম্ভব নয়।’
এই হলো আমাদের বর্তমান প্রচার মাধ্যমের অবস্থা, সাংবাদিকদের স্বাধীনতা, দেশজনতার কথা বলার অধিকার। বর্তমান ইসলাম ও ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে সরকার ও সরকার দলীয় লোকজন ও তাদের পোষা বাহিনী এমন ওঠে পড়ে লেগেছে যে, মুসলমানরা যেনো এদেশের লোক নয়। তাদেরকে নানা অজুহাতে পথে ঘাটে, বাড়ি ঘরে যেখানে পাচ্ছে সেখান থেকেই ধরে নিয়ে জেল হাজতে ঢুকিয়ে রিমান্ডে নিয়ে এমন অমানুষিক নির্যাতন করছে যা বলার নয়। তাদের বাড়ি জ্বালিয়ে পুড়ে দিচ্ছে, জিনিসপত্র লুট করে নিচ্ছে, বাসা বাড়ি বেদখল করছে, চাকরি ব্যবসা কেড়ে নিচ্ছে। পথে দাড়ি টুপিওয়ালা লোক দেখলেই তাদের গুলি করা হচ্ছে, গুম খুন করা হচ্ছে। গল্প, উপন্যাস ও নাটকে দাড়ি ও টুপি ওয়ালাদেরকে সমাজের সবচেয়ে খারাপ লোক হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। শুধু ইসলাম ও মুসলমান নয় আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল (সা.) কে এই বাংলাদেশে এমন সব জঘন্য ভাষায় গালি দেয়া হয়েছে যা দ্বিতীয় বার আর উচ্চারণ করা যায় না। শাহবাগে সরকার পক্ষ থেকে উস্কে দেয়া এক ঝাঁক নোংরা তরুণ-তরুণী কী সব অপকীর্তি করলো তারা প্রলাপ বকলো তা বলার মতো নয়। সরকার মনে করে ছিলো ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে এই সব অপপ্রচার চালালেই ইসলাম শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু সরকারের সে অপচেষ্টা কাজে লাগেনি, তাদের কুমতলব সফল হয়নি। এদ্দিন যে সব বানরদের দুধকলা খাইয়ে লালন পালন করতে ছিল সেই বানর গুলোই সরকারের গালে চড় মেরে মাথায় ওঠতে চাচ্ছিলো। এই সেই বাংলাদেশ যে দেশের মুসলমান ও ইসলাম লাঞ্ছিত করার জন্য কুত্তার মাথায় টুপি পরিয়ে দেয়া হয়েছিল। এই সেই বাংলাদেশ যে দেশের মুসলমানদের ধোঁকা দিয়ে ভোট নেয়ার জন্য তসবীহ হাতে মাথায় কালো পট্টি বেঁধে বিটিভিতে কেঁদে কেঁদে ভোট ভিক্ষা চেয়েছিলেন। এই সেই বাংলাদেশ যে দেশের এক মন্ত্রী বস্তাভরা ঘুষের টাকা নিয়ে হাতে নাতে ধরা পড়ে মন্ত্রীত্ব চ্যুত হন। আবার বিদেশের ইঙ্গিতে তাকে বহাল করা হয়। সেই ঘুষখোর দুর্নীতিবাজ লোকটা এখনো দাঁত বের করে কথা বলে। অথচ তার অপকর্মের জন্য একটু লজ্জাবোধ করে না। কী অদ্ভুত এই বাংলাদেশ
দেশের নারী নির্যাতন ক্রমশঃ জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। সরকারের নির্লিপ্ততায় আরো ভয়াবহ রূপ ধারন করছে। স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে ছাত্রীরা সহপাঠী ও শিক্ষকদের দ্বারা ধর্ষিত হচ্ছে, অফিসে অফিসে কর্মকর্তাদের দ্বারা। এক শ্রেণির, টাউট বাটপার চাকরির লোভ দিয়ে ইন্টারভিউ এর নামে ডেকে নিয়ে ইজ্জত ও অর্থ লুটে নিচ্ছে। এখানেই শেষ নয়, নেতা নামের কিছু শয়তান কলেজ ভার্সিটির দলীয় ছাত্রীদের চাকরি ও অন্যান্য জিনিসে লোভ দেখিয়ে বাসায় ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করছে। পুলিশ হেফাজতে নারী ধর্ষিত হচ্ছে। এ সব ঘটনার বিচার হচ্ছে না। এই বর্তমানে আমাদের স্বদেশের চরিত্র।
সুসাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমদ তাঁর আত্মকথা গ্রন্থে লিখেছেন: ডিক্টেটররা জনগণের কল্যাণ করেন না। ক্ষমতার লোভেই তারা ক্ষমতা খাটান। জনতার জিন্দাবাদ ধ্বনির লোভ বড় লোভ। ব্যক্তি জীবনে ধন- লোভের তৃপ্তি নাই। রাষ্ট্র জীবনে ক্ষমতা লোভেরও তৃপ্তি নাই।
ডিক্টেটররা ক্ষমতা ছাড়তে এবং রাষ্ট্রনেতারা রিটায়ার করতে পারেন না, এই কারণে।
লেখক স্বদেশ ও প্রেমিক মানবতাবাদী। দেশ ও রাজনীতির কল্যাণের জন্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে তিনি দ্বিধা করেননি। যা সত্য তা তিনি বলতে রাগঢাক করেনি, সরাসরি বলেছেন আবু জর গিফারীর মতো। রাজনীতির অন্ধগলি বইটি অনেক পরিশ্রম করে তথ্য সংগ্রহ করে লিখেছেন তিনি । ইয়াসিন মাহমুদ আমাদের দেশ ও জাতির বিবেকের কণ্ঠস্বর। তাঁর রাজনীতির অন্ধগলি তার প্রমাণ। ৯৬ পৃষ্ঠার বইটির দাম মাত্র একশত পঞ্চাশ টাকা। কাগজ ছাপা বাঁধাই উন্নত। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বই প্রকাশের জন্য জনাব ইয়াসিন মাহমুদকে অনেক অনেক মুবারকবাদ জানাচ্ছি।