করোনা ভাইরাস প্রাকৃতিক না মনুষ্যসৃষ্ট?

জাহিদ আবদুল্লাহ রাহাত

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পরে সারাবিশ্বে প্রথম যে প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়েছিলো তা হল ভাইরাসটি কি আসলেই প্রাকৃতিক না মনুষ্যসৃষ্ট? যদি মনুষ্যসৃষ্ট না হয় তাহলে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর কি?
এক.
চীনা চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াং (যিনি কিছুটা চেলসি ম্যানিং বা এডওয়ার্ড স্নোডেনের মত), করোনা ভাইরাসটির প্রথম আবিষ্কারক। কেন চীনা কর্তৃপক্ষ শুরুতে এই সংবাদটি গোপন করেছিলেন এবং কেন এই চিকিৎসকের করোনা সংক্রমণেই দ্রুত মৃত্যু ত্বরান্বিত হয়েছিলো?
দুই.
আমাদের ব্যবস্থার ত্রুটি কোথায় যে বিজ্ঞানীরা বছরের পর বছর ধরে আমাদেরকে এটি সম্পর্কে সচেতন করলেও সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত অবস্থায় আমরা এই বিপর্যয়ের মধ্যে পড়লাম?
তিন.
গত এক দশকে ভাইরাস ও ভাইরাল শব্দের ভার্চুয়াল ব্যবহার কেন এত বেশী ছিল? কেননা এই বিপর্যয়ের মধ্যেও দেখছি যে ভার্চুয়াল ব্যবসায়ীরাই সবচেয়ে বেশী লাভবান হচ্ছেন- তাহলে এটি কি অভ্যস্ততার কৌশল ছিল?
চার.
বাড়িতে বসে কাজ করার ‘ভার্চুয়াল ধারণা’ দিয়ে কেন শ্রেণীবিভাজনকে আরও নতুন মাত্রায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? (কারণ কায়িক শ্রম, উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত শ্রমিক কিংবা আরও অনেকেই ‘ভার্চুয়াল জবের’ অযোগ্যতা নিয়েই বসে আছেন)।
পাঁচ.
আমরা কি ‘যোগ্যতমদের টিকে থাকা নীতির’ বর্বরতম যুক্তিটি বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছি? (অন্তত এখন পর্যন্ত সারাবিশ্বে চিকিৎসা ব্যবস্থায় এর বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে)।
ছয়.
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টির পক্ষে সত্যিই কি পুঁজি বা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার স্বার্থ রয়েছে কিংবা ব্যক্তি স্বাধীনতাকে আরও কার্যকরী নিয়ন্ত্রণের জন্যই কি মহামারী আতঙ্কের অজুহাত সৃষ্টি করা হয়েছে?( এক্ষেত্রে ক্ষমতাকে দীর্ঘায়ীত করার জন্য রাষ্ট্রীয় ‘গুজব তত্ত্ব’ একটা উদাহরণ হতে পারে)।
আর যদি ভাইরাসটি প্রাকৃতিক হয় তাহলে মানব মনের সংক্রামক অণুজীব (যেমন ধর্ম) আর প্রকৃতি প্রদত্ত অণুজীব- দুটোর ফলাফল কি একইরকম? কারণ উভয় ক্ষেত্রেই আমরা ক্ষমতাধর নির্দিষ্ট ব্যাক্তি বা সংগঠনেরই উত্তরণ দেখি!
.
স্লাভোজ জিজেক সমকালীন বিশ্বের ‘সাংস্কৃতিক তত্ত্বের এলভিস’ এবং ‘পশ্চিমের সবচেয়ে বিপজ্জনক দার্শনিক’ বলা হয়, তাঁর ‘প্যানডেমিক কোভিড-১৯ শেকস দ্য ওয়ার্ল্ড’ বইটিতে উপরোল্লিখিত প্রশ্নগুলোর নির্মোহ বিশ্লেষণ করেছেন। বইটির অনুবাদক ড. মাসুদ আলম বলেন, ‘চলমান করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ে প্রচুর গবেষণা হবে, লেখালেখি হবে, আলোচনা হবে। দার্শনিক, বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, সমাজতত্ত্ববিদ তাঁদের নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরবেন। তবে সংকট চলাকালে প্রকাশিত জিজেকের বর্তমান বইটি এ সম্পর্কিত যৌক্তিক আলোচনার ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে’।
জিজেক নিজে আগামী পৃথিবী একটি নব্য- সাম্যবাদের দিকে অগ্রগামী হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলে শেষ করেছেন। তবে ‘বিচ্ছিন্নতা’ অন্যের প্রতি ভালোবাসা আর ‘অনেক বেশী প্রয়োজন ধারণা’ পরিবর্তন করবে নাকি মহামারীটি দীর্ঘ দুঃখময় গল্পের আরেকটি অধ্যায়ে পরিণত হয়ে পুঁজিবাদকে আরও শক্তিশালী করবে- এই প্রশ্নের উত্তরটি অমীমাংসিতই থেকে যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *