ডাকে যখন পাখি

আমিনুল ইসলাম

মন বসে না ঘরে আমার
ডাকে যখন পাখি
বুকের ভেতর ছন্দ বাজে
হারায় দূরে আঁখি।
তালে তালে তাল মিলিয়ে
বাতাস যখন ছোটে
না বলা সব কথাগুলো
কাব্য হয়ে ওঠে।
তখন আমি আপন মনে
ফুলের রেণু মাখি।
মেঘের ভেলায় ভেসে যখন
চাঁদের হাসি খুঁজি
অন্যরকম ভালোলাগায়
অনেক কিছু বুঝি
বিশ্বাসী এক হৃদয় নিয়ে
তাঁকে শুধু ডাকি।

আহাদ

জিনাত তামান্না

আল্লাহ কেমন?
রূপ কি তাহার?
তৈরি কিসের তিনি?
ডাকছো তুমি যারই দিকে
পরিচয় দাও তাঁর শুনি!

প্রশ্নের মুখে পড়লেন নবি
দিলেন যখন দাওয়াত,
সঠিক উত্তর জানিয়ে আল্লাহ
নাজিল করলেন আয়াত।

বলো আল্লাহ অদ্বিতীয়
লা-শরিক এক রব,
একক তিনি, রহমান যিনি
সৃষ্টি তাঁরই সব!

নির্ভরশীল নন তো তিনি
কারো ওপরে,
আমরা গোলাম সবাই চলি
তাঁরই আমরে।

সন্তান নেই তাঁর যে কোনো
নেই তো পিতা-মাতা,
এই পৃথিবীর সব কিছুরই
তিনিই যে নির্মাতা।

কেউ নেই তাঁর সমতুল
বিশাল ধরণীতে,
অসহায় সব তাঁরই কাছে
যা আছে জগতে!

কৃষ্ণচূড়ার বন

জাকির আবু জাফর

এক পশলা বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিলো মন
ভিজলো অবাক লালের লীলা কৃষ্ণচূড়ার বন।
হৃদয় কেঁচে রঙ মেখেছে রক্তলালা ফুল
পল্লবিত পাতার খোঁপায় দুলছে সবুজ চুল।

একটি শালিক ঠোঁট চুবিয়ে ফুলের গন্ধ চাটে
ঠোঁটের ছোরায় আন›ে েেস ফুলের হৃদয় কাটে।
কৃষ্ণচূড়ার শরীর যেমন হৃদয় তেমন লাল
উধাও হাওয়ার আদর নিতে এলিয়ে রাখে গাল।

গালের ওপর বৃষ্টি ফোঁটা মুক্তো মতো জ্বলে
ঠোঁট ছোঁয়ানোর আগেই ঝরে এমনি টলটলে।
অচিন পুরের ভোমর আঁকে মুগ্ধ চুমুর ভার
মৌমাছিদের সঙে ফুলের গোপন অভিসার।

বৃষ্টিধোয়া এই লোহিতের লোলুপ চোখের তীর
উৎসব উচ্ছ্বাসে উজায় আনন্দ অস্থির।
একটি শ্যামা লেজ ঝাঁকিয়ে এডাল ওডাল শেষে
পাখনা ঝেড়ে পাঁপড়ি ঝরায় পুষ্পরাজ্যে এসে।

কৃষ্ণচূড়া ফুলের কাছে হৃদয় নাচে যার
বিপুল ঘোরে প্রেমের শিখায় জ্বলবে সে বারবার।

শের-ই-বাংলা’র স্মৃতি

টি.এম. জালাল উদ্দীন

‘শের-ই-বাংলা’ শুধু একটি খেতাবই নয়। এটি একটি আদর্শ। এটি শুধু বরিশালেরই নয় – সমগ্র বাংলার। শুধু বাংলারই-বা কেন বলি – বিশ্বের সকল আদর্শবান ব্যক্তির। কেননা, তিনি ছিলেন জাতি-ধর্ম, স্থান-কাল নির্বিশেষে সকলেরই প্রাণের মানুষ। তার চিন্তা ধ্যান-ধারণা ছিল সকলের জন্যই সমান। তাই তার এ আদর্শকে লালন করার দায়িত্ব সকল আদর্শবান ব্যক্তির। কিন্তু তার সে আদর্শ আজ উপেক্ষিত।
আমি অতিশয় ক্ষুদ্র ও নগন্য ব্যক্তি। তবুও আমি এ আত্মত্যাগী মহাপুরুষের স্মৃতি চারণ ও আদর্শ রক্ষার উদ্দেশ্যে সকলের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। তার নামে বরিশালের মাটিতে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করার জন্য সকলকে অনুরোধ করছি। কিন্তু অনেকটা পথ অতিক্রম করে আমি আজ হতবাক! দেখছি এ পথটি খুবই বন্ধুর। আমি অনেক প্রশ্নের সম্মূখীন হচ্ছি। কেউ বলেন – শের-ই-বাংলার বংশের কারো মাথা ব্যথা নেই, আপনি কেন এতটা করতে যাচ্ছেন? কেউ বলেন – কী করেছেন শের-ই-বাংলা এ বরিশালের জন্যে? কী করেছেন তার বংশের জন্যে? তার আদর্শ ‘পেটে লাথি মারা’র আদর্শ। তিনি ইচ্ছা করলে তার বংশধরদের সোনার সিংহাসনে বসিয়ে যেতে পারতেন। ইচ্ছা করলে বরিশালকে তিনি স্বর্গপুরীরূপে গড়ে যেতে পারতেন। আরও যে কত শত আভিযোগ–! এ সব শুনেও আমি পিছপা’ হতে পারছি না। আমি তার রক্তের কেউ নই সত্য। কিন্তু আমি যে এ রত্নগর্ভা বরিশালেরই সন্তান। তিনি নিজের জন্য কিছু না করে সমাজের জন্য এক ব্যতিক্রমধর্মী আদর্শের জন্ম দিয়ে গেছেন- এটিই তো দুষ্প্রাপ্য ও অতুলনীয় আদর্শ – আমাদের অহংকার। অতএব এর পরিচর্যা করা সকল আদর্শবান ব্যক্তিরই দায়িত্ব ও কর্তব্য।
তাই আমি আমাদের শিক্ষিত সমাজের প্রতি বিনয়ের সাথে আবেদন রাখছি – আসুন আমরা দেশের বরেণ্য মহাপুরুষদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। এ সাধনা আমাদের আত্মাকে কিছুটা হলেও বিশুদ্ধ করবে। আত্মা বিশুদ্ধ হলে কর্ম, কর্ম বিশুদ্ধ হলে পরিবেশ বিশুদ্ধ হবে। একমাত্র আদর্শ পরিবেশই পারে একটি আদর্শ সমাজ উপহার দিতে পারে।


এ প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে আমি শিক্ষিত সমাজের যথেষ্ট সারা পেয়েছি। তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ আমাকে ভীষণভাবে উৎফুল্ল করেছে। কিন্তু হায়! আমি উৎফুল্ল চিত্তে অধীর আগ্রহ নিয়ে যখন তাদের দিকে হাতটি বাড়াই, তখন অনেকেই কৌশলে হাতটি সরিয়ে নেন।
তখন নিরাশ মনে আমার কানে বেজে ওঠে বঙ্গবন্ধুর সেই বাণীটি  ‘আমি প্রধান মন্ত্রিত্ব চাই না; আমি মানুষের অধিকার চাই।’ আমারও বলতে ইচ্ছে করে ‘আমি এত শত ধন্যবাদ চাই না; আমি এর বাস্তবায়ন চাই। আবার এক কবির কবিতা মনে পড়ে গেল  ‘কে লইবে মোর কার্য, কহে সন্ধ্যা রবি; শুনিয়া জগৎ রহে, নিরুত্তর ছবি। মাটির প্রদ্বীপ কহিল, ‘হে স্বামী, আমার যেটুকু সাধ্য করিব তা আমি। এবার শুনছি ঐ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্ঠস্বর ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে—–।’
কবিদের সব আত্মা আমার পিছে লেগেছে। তাই আমি পিছপা’ না হয়ে মাটির প্রদীপ হয়ে সামনের দিকেই চলছি। ‘তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই।’ তার আদর্শই আমার সোনার হরিণ। হে শের-ই-বাংলা, আমি তোমাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। তোমার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।
‘জীবন মরণে, তোমারই স্মরণে-
গাইছি সাম্যের গান।
তব আদর্শের লাগি, অকাতরে মোরা
‘জীবন করব দান।’

‘বাংলাকে যিনি বাসেন ভাল
‘অন্তরে তার তুমি।
তোমার নামে ধন্য এ দেশ
ধন্য বঙ্গভূমি।’

‘কে বলে তোমায় বিত্তহীন,
কে বলে তুমি নিঃশ্ব?
তোমার গুণগান গাইছি মোরা,
গাইছে সারা বিশ্ব।’

জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের ইতিবৃত্ত: পর্ব ১৭

চীনের জাতীয়তাবাদী সরকার কর্তৃক গণহত্যা 

একনায়কতন্ত্রের জের ধরে ইতিহাসের সবচাইতে বড় গণহত্যার একটি নজির স্থাপনের জন্য চীনের জাতীয়তাবাদী সরকারকে দায়ী করা হয়ে থাকে। বিখ্যাত রাজনীতিবিদ এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রুডলফ রুমেলের হিসেব মতে, প্রায় ৬০ লাখ থেকে ১ কোটি ৮৫ লাখ গণহত্যার পেছনে চীনের এই জাতীয়তাবাদী সরকার প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তিনি এই গণহত্যার কিছু কারণ অনুসন্ধান করেছিলেন। প্রায় ১০ লাখ চীনা নাগরিককে অনাহারী করে রাখা হয়েছিল এবং হত্যা করা হয়েছিল চীনা কম্যুনিজম উৎখাতের লক্ষ্যে।

চীনা কম্যুনিস্ট এবং সাধারণ চাষীরা রাজনৈতিক নিগ্রহের শিকার হয়েছিলেন ব্যাপকভাবে। চীনা জাতীয়তাবাদী সরকারের ক্ষমতাবান সরকারি কর্মকর্তারা নিজের লাভের জন্য, গরিব চাষিদের উৎপাদিত খাদ্যশস্য বাজেয়াপ্ত করে বিক্রি করে দিত। এই কারণে চীনে প্রায় ১৭ লক্ষ ৫০ হাজার থেকে ২০ লক্ষ মানুষ ক্ষুধার্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছিল [1928-1946]। চীনা জাতীয়তাবাদী দল নির্বিচারে এবং জোরপূর্বক সাধারণ জনগণকে সামরিক বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেছিল। এই কর্মযজ্ঞ চলাকালে প্রায় ৪২ লাখ চীনা নাগরিক যুদ্ধে যাওয়ার আগেই ক্ষুধা এবং অসুখে মারা গিয়েছিল। জাপানের উন্নতির ধারা ঠেকানোর জন্য চীনা জাতীয়তাবাদী দল উদ্দেশ্যমূলক বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। বন্যার পানিতে ভেসে গিয়েছিল প্রায় ৪ লাখ ৪০ হাজার থেকে ৮ লাখ ৯৩ হাজার বেসামরিক চীনা নগরিকের জীবন! [সরোয়ার চৌধুরী: স্বৈরশাসনের অধীনে পৃথিবীর সবচাইতে কুখ্যাত ১০ গণহত্যা, রোয়ার বাংলা, সংগৃহীত: ০১ ‍আগস্ট ২০১৯]

তালিকা করে নারী সেনাদের ধর্ষণ করে মার্কিন নৌসেনারা

নারী সহকর্মীদের কীভাবে ধর্ষণ করা হবে, কাকে আগে, কাকে পরে-তারই এক বিস্তারিত তালিকা তৈরি করেছিল মার্কিন নৌসেনারা। সেই সঙ্গে গত কয়েক মাস ধরে এভাবেই যৌন হয়রানি করে আসছিল। সম্প্রতি জর্জিয়ায় মোতায়েন ইউএসএস ফ্লোরিডা নামের এক সাবমেরিন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ওই তালিকা। ৩২ জন নারী কর্মীর নামের পাশে তারকা চিহ্ন দিয়ে তাদেরকে ধর্ষণের লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে এ তালিকা হালনাগাদ করত সেনারা।[দৈনিক যুগান্তর, ২১ মে ২০১৯, বারিধারা, ঢাকা]

জয় শ্রীরাম না বলায় মুসলিম কিশোরকে পুড়িয়ে হত্যা

ভারতের উত্তরপ্রদেশে জয় শ্রীরাম না বলায় ১৭ বছরের এক মুসলিম কিশোরকে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে কট্টরপন্থী হিন্দুরা। রাজ্যের চানদেউলি জেলায় রোববার রাতে ওই নৃশংস ঘটনা ঘটে। খবর এনডিটিভির।

মৃত্যুর আগে হাসপাতালের বিছানায় ৬০ শতাংশ পোড়া শরীর নিয়ে ওই কিশোর সাংবাদিকদের সেই বর্বরতার বর্ণনা দিয়ে যায়। সে জানায়, রোববার রাতে দুধারি সেতু পার হওয়ার সময় চারজন লোক তাকে জয় শ্রীরাম বলতে বলে। সে নিজেকে মুসলিম বলে পরিচয় দিলে তারা তাকে অপহরণ করে।

এদের মধ্যে দুজন তার হাত বেঁধে ফেলে, একজন গায়ে কেরোসিন ঢালে এবং আরেকজন গায়ে দেশলাইয়ের কাঠি দিয়ে আগুন ধরিয়ে জয় শ্রীরাম বলতে বলতে দৌড়ে পালিয়ে যায়। [দৈনিক যুগান্তর, ৩০ জুলাই ২০১৯, বারিধারা, ঢাকা]

চলবে …

জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের ইতিবৃত্ত: পর্ব ১৬

জোসেফ স্টালিনের আমলে সোভিয়েত ইউনিয়নে কমপক্ষে নিহত হয় কোটি মানুষ

জোসেফ স্টালিনের হাতে, সোভিয়েত পুলিশি রাষ্ট্রের হাতে, কমপক্ষে ২ কোটি মানুষ নিহত হয়েছেনএর একটা বড় অংশ নিহত হয়েছেন ক্ষুধায়, ইউক্রেনে রাষ্ট্রীয়ভাবে আরোপিত দুর্ভিক্ষেঅন্যরা নিশ্চিহ্ন হয়েছেন ফায়ারিং স্কোয়াডে, সাইবেরিয়ার গুলাগেস্টলিনের হাতে নিহত ব্যক্তিদের একজন ছিলেন বাংলাদেশের গুলাম আম্বিয়া লোহানী, মস্কো এসেছিলেন রুশ বিপ্লবের পরপরস্টালিনের নির্দেশে বিদেশি চর হিসেবে তাঁকে ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করা হয়
স্তালিনের আমলে সোভিয়েত ইউনিয়নে কমপক্ষে দুই কোটি মানুষ নিহত হয়েছেন

স্টালিনের ‍আমলে সোভিয়েত ‍ইউনিয়নে কমপক্ষে ২ কোটি ‍ইনসান নিহত

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর মস্কোর মহাফেজখানা খুলে দিলে যেসব নথিপত্র বেরিয়ে এসেছে, তাতে দেখা যায়, অন্ততপক্ষে ৩৬২টি হত্যা নির্দেশসূচক তালিকা রয়েছে, যেগুলোর প্রতিটির নিচে স্তালিনের স্বাক্ষর রয়েছেএ কথা ঠিক, স্তালিন নিজ হাতে এসব খুন করেননি, কিন্তু নির্দেশটি এসেছে তাঁর কাছ থেকেতাঁকে সে কাজে মদদ দিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতারাআমরা স্তালিনের ডান হাত গোপন পুলিশপ্রধান লাভরেন্তি বেরিয়ার কথা শুনেছিকিন্তু একা বেরিয়া নন, কমিউনিস্ট পার্টির ছোটো-বড় সব ধরনের নেতাই সাগ্রহে স্টালিনের ফাঁসুড়ের দায়িত্ব পালন করেছেনএঁদের মধ্যে ছিলেন এজভ, কাগানভিচ, মিকোয়ান এবং স্বয়ং খ্রুশ্চেভ
১৯৫৬ সালে পার্টির ২০তম কংগ্রেসে কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান নিকিতা খ্রুশ্চেভ দলীয় সদস্যদের সামনে ভেঙে বলেছিলেন, স্টলিনের হাতে তাঁর দেশের মানুষ কী ভয়াবহ নিগ্রহের শিকার হয়েছেদলের সবাই নীরবে সে নিগ্রহ স্বীকার করেছিল, ফলে তারাও কার্যত মানবতার বিরুদ্ধে সে অপরাধের অংশীদারখ্রুশ্চেভ প্রশ্ন রেখেছিলেন: যাঁরা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, যাঁদের হত্যা করা হয়েছিল, এখন তাঁদের ব্যাপারে আমরা কী করব? যাঁরা সে অপরাধের শিকার, আমরা এখন জানি, তাঁরা সবাই নিরপরাধ ছিলেনআমাদের কাছে বিতর্কোর্ধ্ব প্রমাণ রয়েছে, তাঁরা কেউই জনগণের শত্রু ছিলেন নাতাঁরা ছিলেন সৎ, দলের প্রতি অনুগত নারী ও পুরুষআমরা তো ভালো করেই জানি কী ভয়াবহ নির্যাতনের রাজত্ব ছিল সেটি, দলের নেতৃত্ব কেমন স্বেচ্ছাচারী ব্যবহার করেছেনভয়াবহ সে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর কিছুই হয়নি, কীভাবে এমন ভান করে থাকতে পারি আমরা? না, কী হয়েছিল সে কথা আমাদেরই বলতে হবে
[হাসান ফেরদৌস: স্তালিনবাদকে যাঁরা জিন্দাবাদ দিচ্ছেন, প্রথম ‍আলো, কারওয়ান বাজার, ২১ জুলাই ২০১৯, পৃষ্ঠা ১১]

 মুসলিম মেয়েদের প্রকাশ্যে গণধর্ষণ করুক হিন্দু পুরুষরা: বিজেপি নেত্রী

সুনীতা সিং গৌড়
হিন্দু পুরুষদের উচিত মুসলিম মহিলাদের গণধর্ষণ করাউত্তরপ্রদেশের রামকোলার বিজেপি মহিলা মোর্চার নেত্রী সুনীতা সিং গৌড় ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘মুসলিমদের জন্য একটাই সমাধান রয়েছেহিন্দু ভাইয়েদের ১০ জন করে দল তৈরি করে মুসলিম মা ও বোনেদের প্রকাশ্য রাস্তায় গণধর্ষণ করা উচিতএরপর সবাইকে দেখানোর জন্য তাদের বাজারের মাঝখানে ঝুলিয়ে দেওয়া উচিত এখানেই না-থেমে তিনি আরও বলেন, মুসলিম মা ও বোনেদের উচিত নিজেদের সম্ভ্রম লুঠ করতে দেওয়াকারণ দেশকে রক্ষা করতে এ ছাড়া আর অন্য কোনও উপায় নেই  [সূত্র: ট্রিবিউন ইন্ডিয়া থেকে বাংলাদেশ প্রতিদিন, ০১ জুলাই ২০১৯]

বিশ্বে সন্ত্রাসবাদের সূচনা ইসরাইল প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন, ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে অবৈধভাবে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে পড়েছে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন বিশ্বে সন্ত্রাসবাদের জন্য মুসলমানদের দায়ী করা হচ্ছেকিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে- আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ফিলিস্তিন ভূখণ্ড দখলের মাধ্যমে অবৈধভাবে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পরিপ্রেক্ষিতে যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোকে সন্ত্রাসবাদ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, যা দুর্ভাগ্যজনক

গণমাধ্যমের সমালোচনা করে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের গণমাধ্যম, বিশেষ করে টিভি চ্যানেলগুলোতে ফিলিস্তিন ইস্যুকে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে নাপরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে- বিশ্ব গণমাধ্যমের মধ্যে এমন একটি সমঝোতা হয়েছে যে, তারা কখনই ফিলিস্তিন ইস্যুকে বড় করে তুলে ধরবে নামিডিয়া এ সত্যটি তুলে ধরতে চায় না যে, ইসরাইল ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তারা অন্যায় করেছে এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। [দৈনিক যুগান্তর, ২৮ জুলাই ২০১৯, বারিধারা, ঢাকা ]

চলবে …

 

 

বাংলা কবিতায় বর্ষা

আযাদ আলাউদ্দীন

বর্ষাকাল যেন কদম কেয়ার গন্ধে মাতানো মুগ্ধ সময়, তাইতো বাংলা সাহিত্যে বর্ষা ঋতুর প্রভাব সবচেয়ে বেশি। বর্ষার চরিত্র বা সৌন্দর্যের যে বহুগামী বৈচিত্র তা অন্য পাঁচটি ঋতু থেকে একবারেই স্বতন্ত্র। বাংলা ষড়ঋতুতে বর্ষার অপরূপ দৃশ্য যেমন আমাদের মনে কুহক জাগায়, ঠিক উল্টোদিকে বিষাদও এনে দেয়। বর্ষা যেমন নতুন শিহরণে জাগরিক করে, আবার ডুবাতেও পারে তার উদারতায়। বর্ষার এই চতুর্মূখীনতার কারণেই বোধহয় অন্যান্য ঋতুর চেয়ে এর গ্রহণযোগ্যতা আর গুরুত্ব বেশি। যার মায়াবী রূপ আমাদেরকে মোহিত করে, আন্দোলিত করে, শিহরিত করে। যার দর্শণে আমাদের হৃদয়-মন পুলকিত হয়। বিশেষকরে বর্ষার উথাল-পাথাল ঢেউ আমাদের হৃদয়-মনকে সিক্ত করে। কখনো আমরা হারিয়ে যাই স্বপ্নলোকে, আবার কখনো বা প্রিয় মানুষের দর্শন লাভের জন্য আমরা উদগ্রিব হয়ে উঠি। আবার কখনো বা প্রিয়তমার বিচ্ছেদ ব্যথায় বর্ষার বৃষ্টির মতো পানি ঝরতে থাকে আমাদের নয়ন বেয়ে। তখন যেন মনের অজান্তেই আমাদের অবুঝ মন গেয়ে উঠে-
এমন দিনে তারে বলা যায়/ এমন ঘনঘোর বরিষায়-
এমন মেঘস্বরে বাদল-ঝরঝরে/ তপনহীন ঘন তমসায় -(রবীন্দ্রনাথ, বর্ষার দিনে)

বর্ষা নিয়ে কবি কালিদাস রচনা করেছেন বিখ্যাত মহাকাব্য ‘মেঘদূত’। কালিদাস বর্ষাকে অনুভব করেছেন অনুরাগের গভীরতায়। কালিদাসের দৃষ্টিতে বর্ষার সৌন্দর্য-সখা যে মেঘ, সেই মেঘকে কবি লোভনীয় সম্ভোগের আভাস দিয়ে যক্ষের সহচররূপে যক্ষ প্রেমিকার কাছে পাঠান। সেখানে মেঘ সঙ্গত কারণেই প্রেমের বার্তাবহ দূতরূপে চিহ্নিত হয়। মেঘের সঙ্গে প্রেম আর বিরহের একটা অনড় সম্বন্ধ পাতিয়ে কালিদাস তার কবিতায় এক অনবদ্য চিত্রকল্প তৈরি করেছেন। কালিদাসের কবিতার অনুবাদের কিছু অংশবিশেষ পড়লে আমরা তার বর্ষা নিয়ে মননের অভিব্যক্তি বুঝতে পারব।
‘কেমনে প্রিয়তমা রাখবে প্রাণ তার অদূরে উদ্যত শ্রাবণে/যদি- না জলধরে বাহন করে আমি পাঠাই মঙ্গলবার্তা?/যক্ষ অতএব কুড়চিফুল দিয়ে সাজিয়ে প্রণয়ের অর্ঘ্য/স্বাগত-স্বভাষ জানালে মেঘবরে মোহন, প্রীতিময় বচনে।’
পুরনো ভারতীয় সাহিত্যে কবিরা বর্ষাকালকে বিরতির কাল হিসেবেই বিবেচনা করতেন। কারণ, ভারতে বর্ষা নামার সঙ্গে সঙ্গে পথঘাট ও মাঠপ্রান্তর বর্ষার জলে ডুবে যেতো। চলাচলের জন্য সেরকম কোনো যানবাহন তখন ছিল না। প্রবাসী স্বামীরা বর্ষা নামার আগেই বাড়ি ফিরতেন, বণিকেরাও তাই করতেন। কিন্তু কেউ যদি বর্ষার আগে বাড়ি ফিরতে না পারতো তাহলে তাকে পুরো সাত-আট মাসই কাটাতে হতো নিঃসঙ্গতার মধ্যদিয়ে। বর্ষাকে নিয়ে লিখা হয়েছে প্রচুর প্রেম ও বিরহের কবিতা। এজন্যই বর্ষাকে বিরহের কাল বলা হয়।

বৈষ্ণব কবিদেরকেও বিরহের সঙ্গে বর্ষার একটি নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করতে দেখা যায়। পদাবলী সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ মহাজন, বিদ্যাপতি, চন্ডীদাস, জ্ঞানদাস, গোবিন্দদাস আর বিহারীলালের কবিতায় বর্ষা এসেছে একাধিকবার। বিদ্যাপতির বিরহের কবিতায় বর্ষা ও বিরহ একাকার হয়ে গেছে, যা নতুনত্ব পায় মধ্যযুগের বাংলা গীতিকবিতায়। সেখানে বর্ষা এসেছে রাধিকার প্রেমকে উসকে দেবার জন্য। বিশেষ করে অভিসার আর বিরহ পর্বে এ বর্ষা যেন প্রেমানলে ঘৃতের ছিটা। বৃষ্টির বর্ষনের সঙ্গে সঙ্গে রাধার কণ্ঠে বেজে উঠেছে-
এ ঘোর রজনী মেঘের ঘটা/ কেমনে আইলো বাটে।
আঙ্গিনার মাঝে বঁধূয়া ভিজিছে/দেখিয়া পরান ফাটে। (চন্ডীদাস)
অন্যখানে রাধা বলেছে-
এ সখি হামারি দুখের নাহি ওর
এ ভরা বাদর মাহ বাদর/শূন্য মন্দির মোর। (বিদ্যাপতি)
এখানে বৃষ্টির জল যেন রাধার চোখের পানি হয়ে ঝরে পড়ছে। যা পৃথিবীর সকল প্রেমিকাকেই ব্যাকুল করে তোলে।
মধ্যযুগের আরেক কবিপ্রতিভা মুকুন্দরাম চক্রবর্তী ‘কালকেতু উপাখ্যানে’ কালকেতুর স্ত্রী ফুল্লরার বারমাসের দুঃখ বর্ণনা করতে গিয়ে বর্ষাকাল সম্পর্কে বলেছেন:
শ্রাবণে বরিষে মেঘ দিবস রজনী/সিতাসিত দুই পক্ষ একই না জানি

বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কবিতায় বর্ষাকে উপস্থাপন করেছেন বিভিন্ন আঙ্গিকে। তার হাত ধরেই কবিতার মাধ্যমে বর্ষা যেন পূর্ণতা পেয়েছে। তার কবিতায় বর্ষার বিচিত্র রূপ প্রকাশ পায় বর্ষাবন্দনা রূপে। রবীন্দ্রনাথের গানের কথা বাদ দিলেও বহু জনপ্রিয় কবিতার মধ্যে আমরা বর্ষার অনুষঙ্গ খুঁজে পাই। তার ‘আষাঢ়’, সোনার তরী’, ‘বাঁশি’সহ বহু কবিতায় বর্ষা এসেছে বিভিন্ন আঙ্গিকে। এছাড়া রবীন্দ্রনাথের অন্যতম ছড়া কবিতা ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর’ আমাদের দুরন্ত শৈশবকে হাতছানী দিয়ে ডাকে।

প্রেমের কবি কাজী নজরুলের কবিতায় বর্ষা এসেছে প্রেমের জারক হিসাবে। প্রিয়া বিরহ আরো দ্বিগুণ করেছে বাদল দিনের মেঘ। বাদল ধারা প্রিয়ার আগমনী সুরকে বিদায়ী সুরে পরিণত করেছে। বাদল রাতের বর্ষণ সিক্ত রাতের পাখি হয়ে ওঠে কবির বেদনা বিজয়ী চিত্তলোকের চিত্রল প্রতীক। বিরহ কাতর পাখিকে কবি তাই বলছেন, তুমি যার জন্যে কাঁদছো সে তো তোমার জন্যে কাঁদে না। যেমনটি ‘চক্রবাক’ গ্রন্থের ‘বাদল রাতের পাখী’ কবিতায় কবির উপদেশ: ‘বাদল রাতের পাখী/উড়ে চল যেথা আজো ঝরে জল, নাহিক ফুলের ফাঁকি।’

কবি বর্ষার এই রাতে পাখিকে বন্ধু ভেবেছেন। পাখির বিরহের সাথে নিজের বিরহ একাকার করেছেন। আসলে সকল কোলাহল ছেড়ে কবি বর্ষার নির্জনতায় প্রেমের প্রকৃত মূর্তি গড়েন। অন্যদিকে নজরুল ইসলাম বর্ষার বিদায় মুহূর্তে ব্যথিত হয়েছেন। কবি বর্ষাকে বলেছেন, তোমার বিদায়ের কথা শুনে কেয়া রেণু পা-ুর হয়েছে, শিশিরভেজা শেফালি ঝরছে আজ। ঝরে কদমের কেশর।


পল্লী কবি জসিম উদদীন বর্ষায় দেখেছেন গাঁয়ের কৃষক-মুঠেরা কি করে তাদের এ আলস্য সময়ে। দাওয়ায় বসে গল্প, গান কিংবা গৃহস্থালী কিছু উপকরণ তৈরির দৃশ্য। যেমনটি পল্লী-বর্ষা কবিতায় গাঁয়ের চিত্র বর্ণনায় লিখেছেন:
‘গাঁয়ের চাষীরা মিলিয়াছে আসি মোড়লের দলিজায়/ গল্পের গানেকি জাগাইতে চাহে আজিকার দিনটায়!
কেউ বসে বসে বাখারী চাঁচিছে, কেউ পাকাইছে রসি/কেউবা নতুন দোয়াড়ীর গায়ে চাঁকা বাঁধে কসি কসি।’
‘মুসলিম রেনেসাঁর কবি’ ফররুখ আহমদ অধঃপতিত মুসলিম সমাজের পুনর্জাগরণের অনুপ্রেরণায় ইসলামি ভাবধারার বাহক হলেও তার কবিতায়ও বর্ষার দোল লেগেছে। বৃষ্টির ছন্দ তাকে নাচিয়েছে। মনে আনন্দের ঢেউ খেলিয়েছে। তিনি আনন্দে তবলার ছন্দের মতো শিশুতোষ কাব্য ‘বৃষ্টির গান’-এ গেঁথেছেন-
‘বৃষ্টি এলো কাশবনে/ জাগলো সাড়া ঘাসবনে
বকের সারি কোথায় রে/ লুকিয়ে গেলো বাঁশবনে।
নদীতে নাই খেয়া যে/ ডাকলো দূরে দেয়া যে
কোন সে বনের আড়ালে/ ফুটলো আবার কেয়া যে।’

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি কবি আল মাহমুদ বর্ষাকে দেখেছেন অন্য এক দৃষ্টিতে। তার কবিতায় বর্ষা-প্রকৃতি অন্যমাত্রার এক কথা বলে। ‘আষাঢ়ের রাত্রে’ তিনি ব্যক্ত করেছেন :
‘শুধু দিগন্ত বিস্তৃত বৃষ্টি ঝরে যায়, শেওলা পিছল/ আমাদের গরিয়ান গ্রহটির গায়।’
এ ছাড়াও প্রাচীনযুগ, মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগের অনেক কবি বর্ষার বন্দনায় কাব্য স্তুতি করেছেন। যেমন সৈয়দ শামসুল হক, সুকান্ত ভট্টাচার্য, নির্মেলন্দু গুণ, হুমায়ূন আহমেদ, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, সুকুমার রায়, কায়কোবাদ, ইসমাঈল হোসেন শিরাজী, আহসান হাবীব, শেখ ফজলল করীম প্রমুখের কাব্য মানসেও বর্ষার অপার সৌন্দর্য নিয়ে রয়েছে সরস বর্ণনা। বর্ষা আসে কবিগণের মানসকে উদ্বেলিত করে নস্টালজিয়ায়। অনেকেই কাছে পেতে চেয়ছেন তার আপনজনকে। কারো কাছে দাওয়ায় বসে গল্প করা। কিন্তু খেটে খাওয়া মজুর-মুঠেদের দূর্দশার বর্ননাও এসেছে অনেক মানবতাবাদী কবির কাব্যে। সবাই নিজেদের নস্টালজিয়ায় ভেসে বেড়ানো, প্রিয়জনকে কাছে পাওয়ার প্রত্যাশা ও একত্রে সবাই বসে গল্পে মশগুলের পাশাপাশি যেন দূর্দশাগ্রস্থদের পাশে দাঁড়াই। বর্ষা হোক সবার জন্য আনন্দের!

লেখক: সাংবাদিক

আষাঢ় আকাশ ছেয়ে

খলিলুর রহমান

আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে,
আসে বৃষ্টির সুবাস বাতাস বেয়ে।
এই পুরাতন হৃদয় আমার আজি
পুলকে দুলিয়া উঠিছে আবার বাজি
নূতন মেঘের ঘনিমার পানে চেয়ে।
রহিয়া রহিয়া বিপুল মাঠের পরে
নব তৃণদলে বাদলের ছায়া পড়ে।
এসেছে এসেছে’ এই কথা বলে প্রাণ,
এসেছে এসেছে’ উঠিতেছে এই গান–
নয়নে এসেছে, হৃদয়ে এসেছে ধেয়ে
আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে,

বর্ষা বরণ

পলি ইসলাম

আষাঢ় শ্রাবণ হলো বর্ষা মেলা
আকাশের কোল জুড়ে মেঘের ভেলা।
বাঙালি ছড়িয়ে দিয়েছে দিগন্তে
মুক্তমনের বিহঙ্গ- ডানা।
নব সৃষ্টির উল্লাসে আজ নেই যে মানা।
গ্রীষ্মের অগ্নিক্ষরা দহন পরে
গগনের মেঘগুলো বর্ষা হয়ে ঝরে।
বর্ষার আগমনে কৃষকের মনে উল্লাস
শস্যশিশুর কলকল উচ্ছ্বাস।
কৃষকের স্বপ্ন চোখে নবান্ন বরণ
এ যেন জীবন বাঁচার সুখের স্পন্দন।
অরণ্যে অরণ্যে নতুন প্রাণের শিহরণ
কৃষ্ণ মেঘের ফাঁকে বিদ্যুৎস্ফুরণ।
খোলা আকাশ জুড়ে মেঘ বিচরণ
দমকা হাওয়ার সাথে মেঘ গরজন।
বর্ষা যেন প্রতি প্রাণে সাহিত্যের দোসর
গান, কবিতা, ছন্দে, ছবি কাব্যের আসর।
চিত্রকরের রংতুলিতে বর্ণাঢ্য চিত্রাঙ্কন
যুগে যুগে কবি হৃদয় এরই মাঝে
করেছেন কাব্য সন্ধান।

পথের শিশু

মোঃ ইমদাদুল ইসলাম

 

কেমনে তুমি অমন করে
ময়লা কাদায় যাও?
পঁচা বাসি নষ্ট খাবার
কেমন করে খাও?
পোশাক কেন জীর্ণ তোমার
শীর্ন কেন দেহ?
আদর করে বুকে তোমায়
নেয়না কেন কেহ?
আমরা যখন বইয়ের পাতায়
স্বপ্ন নিয়ে খেলি।
তুমি কেন প্যাডেল ঘুরাও
কলম খাতা ফেলি?
মায়ের কোলে সবাই যখন
নিজের পড়া পড়ে।
বস্তা কাঁধে ছুটছো তুমি
রোদ বৃষ্টি ঝড়ে।
আমার মত লক্ষ শিশু
কত স্বপ্ন বোনে।
বড় হওয়ার স্বপ্ন কি আজ
জাগে তোমার মনে?
বুকে আমার স্বপ্ন হাজার
পাইনা কোথাও ঠাই
পথের শিশু বলে আমি
পথেই থেকে যাই।